প্রিয় সখী
কেমন আছ তুমি ? দ্যাখো আজ আমি পৃথিবীর হাজার কোটি মানুষকে ছাড়িয়ে খ্যাতির উচ্ছ সোপানে দাঁড়িয়ে আছি । আমি আমার জগৎ আমার পৃথিবী তৈরি করে নিয়েছি ! যেখানে দাঁড়িয়ে আর কেউ বলতে পারবেনা আমি অর্থ-বিত্তহীন, চাল-চুলোহীন বেকার যুবক।
আজ আমার সব আছে, গুলশানে লেকের পাড়ে মনোরম পরিবেশে একশ কোটি টাকা দামের বাড়ি, উত্তরায় বারিধারায় দুই-দুটি ডুয়েল ফ্ল্যাট, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুরে ল্যাক্সারিয়াস অফিস এবং কোটি টাকার তিন-তিনটি ব্যান্ড নিউ বি এম ডব্লিও গাড়ি । তোমার বাবা আজ আর আমাকে বলতে পারবেনা আমি বেকার, ছোট লোক, আমি রাস্তার ছেলে ! কী নেই আজ আমার ? সব আছে ! কিন্তু, শুধু তুমি নেই ! আমি ভুলতে পারিনি সেদিনের কথা, আজও ভুলতে পারিনি ! যেদিন তোমার বাবা, গরীব ছোট লোক রাস্তার ছেলে বলে অবহেলা অপবাদ গালি দিয়ে তোমাদের বাড়ি থেকে দারোয়ান দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছিল, তুমি একটিবারের জন্য বাবার মুখো-মুখি দাঁড়াতে পারলে না ? বলতে পারলে না, বাবা আমি ওকে ভালোবাসি ! ভীষণ ভালোবাসি ! ওকে ছাড়া আমি বাঁচব না।
কি ছিলো সেদিন তোমার মনে ? কেন বিশ্বাস করতে পারলে না আমাকে ? কি অপরাধ ছিলো আমার ?
আমার ভালবাসা মিথ্যে ছিল না ! পাগলের মত ভালবেসেছি আমি তোমাকে । আমার সমস্ত পৃথিবী জুড়ে ছিলে তুমি, তুমি, তুমি শুধু তুমি ! কেন তুমি আমার উপর নির্ভরতার দুঃসাহস দেখাতে পারলে না ? কেন সেদিন আমাকে মাঝ দরিয়ায় ছেড়ে দিয়ে চলে গেলে তুমি তোমার বাবার পছন্দ করা বড়লোকের ছেলের হাত ধরে ? আমাকে বিশ্বাস করতে পারলে না তুমি ? একবারও ভাবলে না তুমি আমার কথা ?
যে ছেলেটির সঙ্গে দীর্ঘ পাঁচটি বছর প্রেমের সাগরে ডুবে ছিলে, যার সমস্ত হৃদয় স্বত্তা জুড়ে ছিলে তুমি, যার পুরোটা আকাশ জুড়ে বিস্মৃত ছিলে তুমি, যার ভালোলাগা ছিল তোমার ভালোলাগা ! যার ধ্যান জ্ঞান চিত্তে জুড়ে ছিলে তুমি, তুমি শুধু তুমি ! যার হাত ধরে প্রতিদিন ঘুরতে যেতে রমনার বকুল-তলায়, শিল্পকলার সামনে আবুলের দোকানে ফুসকা খাওয়া, কফি হাউজের সেই আড্ডা, টি এস সি মোড়ে বসে আমার লেখা কবিতা আবৃতি শোনা, আর প্রতিদিন সন্ধ্যার পর মহসিন হলের সামনে খেলার মাঠে বসে আমার কোলে মাথা রেখে, খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে কত যে রঙ্গিন নিত্য নতুন স্বপ্ন দেখা ।
ভুলে গেলে তুমি ? সব ভুলে গেলে ? কিন্তু আজও ভুলতে পারিনি আমি সেই সব স্মৃতি গুলো । হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা ক্যাঞ্চার রুগীর মত সেই সব স্মৃতি গুলো আজও আমার হৃদয়কে গুনে ধরা কাঠের মত খুঁড়ে খুঁড়ে খাচ্ছে, নি:শেষ করে দিচ্ছে আমার ভিতর, রক্ত ক্ষরণ হয়ে দেহের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বেয়ে শুষ্ক
মাটিকে সিক্ত করছে সমস্ত লোহিত কণিকা, আজও আমার হৃদয় তোমার প্রতীক্ষায় অপেক্ষমান ।
তুমি কেমন আছো সখী ? সেদিন গরীব দুঃখীদের মাঝে ত্রানের বস্ত্র বিতরণ করতে গিয়ে দেখি ওদের সারিবদ্ধ লাইনে দাঁড়িয়ে আছো তুমি, আমি নির্বাক ! অপলক চোখে তোমার প্রাণে চেয়ে আছি, নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিনা, এ আমি কী দেখছি ? আমার প্রিয় সখী ! যে আমার সমস্ত পৃথিবীকে ভেঙ্গে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ভবিষ্যৎ জীবনে সুখী হাওয়ার অভিপ্রায়ে বাবার পছন্দ করা বড়লোকের ছেলের ঘরে গিয়ে সুখী হতে চেয়েছিল, তাকে আজ আমি এভাবে দেখব, কোনদিন ভাবতে পারিনি ।
হে খোদা আমিতো তাকে কখনো বদ্ִদোয়া করিনি ! তাহলে কেন এমন হলো ? অবাক বিষ্ময় আমি রূদ্ধ-বাক, নিজেকে খুব অপরাধী মনে হলো । হয়তো আমার হৃদয়ের ক্ষয়ে যাওয়া প্রতিটি লোহিত কণিকা, আমার নিজের অজান্তে তার জীবনে অভিশাপ হয়ে ধরা দিলো । বড়লোক স্বামীর সাথে ডিভোর্স এবং বাবার ব্যাবসা ডাউন, অসুস্থ বাবা বিছানায় মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করছে, এসব কিছু যেন তাকে খুব বিমর্ষ লাগছে, আমার সমনে দাঁড়িয়ে আছে সে।
প্রিয় সখী, ফিরে এসো, ফিরে এসো । আজও আমি তোমার তোমার প্রতীক্ষায় অপেক্ষমান ! আজ আমার যা কিছু সব তোমার জন্য, আমার হাতটি ধরো, খুব শক্ত করে ধরো ! নির্ভয়ে ! আমি তোমার, শুধু তোমার ।