জীবন বয়ে চলে আপন প্রবাহে কখনও মসৃণ কখনও বন্ধুর পথে | ওঠা পরার মধ্য দিয়ে ছুটে চলা নির্দিষ্ট লক্ষ্যে | কি সেই লক্ষ্য? আরাম,বিনোদন,প্রাচুর্য,মোহ,সঙ্গম | না কি প্রেক্ষাপটের নির্ণিত প্রবাহ যেদিকে ধাবিত করে ?
কবির ভাষায় --
কবর,হাশর পুলসিরাত এবং জাহান্নাম
ভেবে ভেবে নিশিদিন রক্তিম করেছে দু ' নয়ন
নৈমিত্তিক কর্ম ভিত্তিক ইসলামিক পুলসিরাত হল সেই সেতু মৃত্যুর পর প্রতিটি কর্মের প্রশ্নানুসারে জবাবদিহি করার পর সুফল মিললে তবেই হাশরে একত্রিত হওয়ার সুযোগ ঘটে | হিন্দু ধর্ম মতে স্বর্গ নরক কর্মফল ইত্যাদির প্রাসঙ্গিকতার সমার্থক শব্দ ,পৃথিবীর গতিতে আবর্তিত হতে হতে লক্ষ্যে পৌঁছে যাওয়া অথবা হারিয়ে যাওয়া, মানুষের আগামী দিনে সুফল পাবার কতনা আয়োজন, ঈশ্বরের কাছে হা হুতাশ চোখের জল, দান,ধ্যান কত কি, তুলনা মূলকভাবে নিজের আত্মিক উন্নতির কথা ভেবেছি কি ? জীবন পরিভ্রমণে ব্যপ্ত মানুষের সর্বাঙ্গীন আয়োজন শুধুমাত্র নিজ আত্মিক পরিতৃপ্তি- রমণ অথবা বিনোদনে | রুপ,রস,গন্ধে ভরা পৃথিবীর ভোগবিলাসের অধিকার সকলেরই আছে, অথচ এক্ষেত্রেও চলে বর্ণ,জাতপাত,ক্ষমতার শ্রেণীগত নানান বৈষম্য |
ব্যাথিতের হাহাকার,যন্ত্রণা দেখেও দেখি না এরিয়ে চলি, পূজা আচ্চা, মন্দির,মসজিদ নির্মাণে সাহায্যের কত শত প্রসারিত হাত সবটাই অর্থবল ও প্রভাবের এসব কি অপব্যায় নয়, কবির ভাষায় পরিব্যপ্ত এই জগতে স্বার্থমগ্ন মানুষের দ্বিচারিতা,স্বেচ্ছাচার সমাজকে বিচ্ছিন্নই শুধু করে না মানুষের সর্বভূত প্রকাশকে করে বিক্ষিপ্ত, অন্তরাত্মার আরেক স্বত্তার জাগরণ ঘটাতে বাধা প্রদান করে,অর্থাত আমি থেকে বেরিয়ে বৃহৎ আমির জাগরণ ঘটাতে পারে না, কাছে টেনে নিতে পারে না স্বীয় বৃত্তের অন্যান্য প্রাসঙ্গিকতাকে | এখানেই কবির সার্থকতা, ক্ষুদ্র আমি থেকে বৃহত আমিতে প্রবেশ,তুচ্ছাতি তুচ্ছ বিষয়েও সমান গুরুত্ব আরোপ | অতএব অশ্রুপাত তখনই প্রাসঙ্গিক হয় যখন অন্তরাত্মার বহিরাত্মার মিলনে প্রভেদ,বিভেদ একাকার হয়ে যায় ,এটাই জাগরণ |
এখানে কবি বলেছেন ---
দুনিয়ার ব্যাস্ততায় সকলের স্বাধীনতা আছে
আলো আর অন্ধকার পছন্দ করার --
বিশাল পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই যে কোনভাবে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চায় যে কোন ধর্ম কর্মে সেটি তার মৌলিক অধিকার , কিন্তু বাস্তবে তেমন হয় কি? অন্ন,বস্ত্র, বাসস্থানের পরেই ওঠে কর্মের অধিকার ,কর্মের মাধ্যমেই মানুষ নিজেকে প্রকাশ, ব্যপ্ত ও প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয় | কিন্তু শ্রেনী বৈষম্য, জাতিভেদের নিকৃষ্ট ব্যবধান মানুষকে করে চলেছে হেয়,অপমানিত,বিচ্ছিন্ন | এছাড়া আর্থিক অসঙ্গতি ইত্যাদি কারণে হেনস্তা, বিরোধীতা,অসম্মাণ,আক্রমণ জনিত অন্ধকার বিচ্ছিন্ন করে ঐক্য,একতা| যদিও আলো অন্ধকার একে অপরের বিপরীত অথচ অবশ্যম্ভাবী তথাপি কিছু ক্ষেত্রে অন্ধকার প্রগতি বিরুদ্ধ হলেও একশ্রেনীর জীবের ইন্দ্রিয়সমূহ সক্রিয় হয়ে ওঠে বিবিধ কর্মবিশেষে ভাল খারাপ যাই হোক ,পছন্দের অধিকার বলতে কবি বলেছেন ব্যাক্তির ভাল মন্দের অন্তর্নিহিত বোধাবোধ -- কোন বিষয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখবে সবটাই তার জন্মগত বোধ | ভাল মন্দ তো কর্ম ভিত্তিক ফলাফল |এই ছত্রে পাঠক এক সূক্ষ্ম মননের পরিচয় পায় ,ভাল মন্দ কাজের ফল বিশেষে স্বর্গ নরক লাভ যদি ব্যক্তিগোষ্টির বৃহত্তর স্বার্থ সিদ্ধির ফলদায়ক হয় তবে নি:সন্দেহে সেই কাজ প্রশংসনীয় | সেটাই বিবেচনার | সেটাই মানবিক বোধ,বিপরীতে প্রাজ্ঞ,পরিণত হয়েও বিচক্ষণ ব্যাক্তিবর্গের দ্বারা অসামাজিক,সমাস বহির্ভূত ,দূষিত বোধশূণ্য কোন কর্মপন্থা সর্বসমক্ষে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ছড়িয়ে চলে পারিপার্শ্বিক দূষণ সামাজিক সভ্য হিসেবে একাংশের উদাসীন হয়ে পরা ছাড়া উপায় থাকে না | বাক্যটির বাস্তব সত্যতা মর্মে মর্মে উপলব্ধির |
তাহজ্জদ গুজার বান্দাকে দেখা গেছে
আলোকের পথ থেকে সরে যেতে দূরে
দম্ভভরে দু:সাহসে , পলকের মধ্যে
রাস্তা ভুলে অন্ধকারে চিরদিন তরে ---------
তাহজ্জুদ গুজার বান্দা ইসলামিক অর্থ ঈশ্বরের সন্তানদের প্রেম যথার্থ হলে নানা কৌশলে তিনি ভরিয়ে দেন ভক্তের হৃদয়| এমন উৎসর্গ টের পায় না সমাজ,নিভৃত মন্দিরালয়ে ভক্তের সঙ্গে ভক্তির আত্মিক সহবাস | হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য হয়ে একান্তে নিজেকে সম্পূর্ণ সমর্পণ করা | আবার বিপরীতে তিনি বলেছেন আলোকের পথ পরিহার করে পাপের অতলে তলিয়ে যাবার বহু নজির আছে | পৃথিবীর প্রানী জগতে মানুষ একমাত্র প্রাণী যার মস্তিষ্ক ঘিলু বাহিত কোষে পরিপূর্ণ অন্যান্য জীবের প্রাণপ্রাচুর্য থাকলেও মগজ বাহিত বুদ্ধিবৃত্তির কোষটি থাকে না | যে কারণে তাদের চিন্তা,ভাবনা করার অবকাশও নেই | হিন্দু শাস্ত্রানুযায়ী ঈশ্বরের অসীম কৃপায় মানুষ জন্ম অধিকতর পূণ্য কর্মের ফল অতএব এই দুর্লভ জীবনকে অধিকতর সেবা ধর্মে নিয়োজিত করে নিজেকে সমস্ত ক্ষুদ্রতা ও সংস্কার মুক্ত করে তোলাতেই হবে জন্মের সার্থকতা | অর্থাত হীনমন্যতা, ক্ষুদ্রতা থেকে বৃহত্তমে উত্তরণ | একটুখানি ইতো জীবন - জাতপাতের উর্দ্ধে সকলের সঙ্গে সকলের, প্রসারিত ভাবধারার বদলে এই ছোট বড় উচ নীচ ধনী গরীব ক্ষুদ্র বৃহৎ তুচ্ছ তাচ্ছিল্যে সময় অপচয় করে কেন মানুষ অযথা নিম্নগামী নরক মুখী হবে | এভাবে ভাববার দিন, এখন থেকেই দিন বদলের শুরু হোক | কবির কবিতার সামঞ্জস্য রেখে আমরাও এগিয়ে চলতে চাই সেই আলোকোজ্জল প্রকৃত সম্ভাবনার দিকে একত্রে,একসাথে |
নামকরণ : উদাসীন হয়ে যাও | কবি : কবীর হুমায়ুন