মানুষ ও আইন, আইন ও মানুষ আজ যেন এক পরিপূর্ণ গোলকধাঁধা
একে অপরের সাথে কেবলই এক আজব বৈপরীত্যে  বাঁধা
এমনই করে, যেন দোহেঁ এক ছায়ার জীবন, এক হাওয়ার গান
কম্পন জাগায় সমাজের শরীরে, কখনও ভাটার টান
কখনও জোয়ারের বান বয়ে যায়
সময়ের শিরায় শিরায়

আসলে তারা কেউ কি কাউকে কখনো চেনে?
বলি, কীভাবে তারা একে অপরেরে জানে?
আইনের পাতায় কোথাওতো মানুষের কোন সংগা নাই
ঠিক তেমনই রাষ্ট্র নয়, ব্যক্তি মানুষের খাতায় আমরা কি পাই
কখনো আইনের কোন নাম? কোন বংশ-পরিচয়?
তাহলে কে কাকে রহস্যভরে ঘোরায় এই যৌথ গোলকধাঁধায়?

যদি প্রশ্ন করা হয় দার্শনিকের মতো-মানুষের সংগা কী, মানুষ কাকে বলে
কেউ যদি জবাব দেয় একেবারে এভাবে এক দৈব-কৌশলে-
যে মানুষের মতো আচরণ করে সে-ই মানুষ, আর কেউ নয়
তাহলে সেই স্টান্ডার্ড আচরণটিই বা কী, কী তার লক্ষণ, কী তার পরিচয়?
হয়তো এবার সামাজিক ছলে বলবে-যে আচরণ স্বাভাবিক, সেটি
তাহলেতো আবার প্রশ্ন হবে-স্বাভাবিক আচরণ কোনটি? আর যেটি
স্বাভাবিক নয়, তবে
তার কী হবে?

এবার নিশ্চয় মাথা চুলকাতে চুলকাতে এসে
ভারী বিজ্ঞ সেজে কেউ একজন বলবে শেষে-
সেটিই স্বাভাবিক আচরণ, যেটি কেবলই সমাজে, আইনে গ্রাহ্য
আর সব অস্বাভাবিক, সকলই পরিত্যাজ্য
হবে। তাহলেতো বিজ্ঞের মতো হেসে শেষ প্রশ্নটি করতে হয়,
যার সঠিক জবাব জানা নেই কারো নিশ্চয়-
সমাজ কাকে বলে, কী তার স্বভাব, কী তার ধরণ আর আকার?
যা কিনা কেবলই এক ভিত্তিহীন-ছাদবিহীন কাঠামো মাত্র, যার সীমাহীন ভার
কথিত সমাজবাসি নিরন্তর বয়ে চলে এক অজানা আকাঙ্খায়
যেখানে কথিত সমাজবাসি কেবলই অন্ধ-বধির-বোবা থেকে যায়;
তারা কিছুই দেখে না, শোনে না, বলে না। আসলে কি তারে সমাজ বলা চলে?
যেখানে মানুষগুলো কেবলই বেঁচে থাকে মরণের ছলে?

আর যদি বলো আইনের সংগা কী, কী তার ক্ষুরধার ধারা
কিবা তার কিংবা কেমনতরো তার আইনী লেবাস চেহারা
তাহলেতো বিজ্ঞের মতো বলতেই হয়-
আইন আসলে কিছুই নয়;
আইন মাত্র একটি প্রতিশ্রুতির ছক, যেখানে
মানুষ হয়ে ওঠে মানুষের মতন, আর সমাজ সেখানে
ঠিক স্বর্গেরই মতন। এটি অবশ্য একটি আদর্শিক অবস্থা মাত্র; অতঃপর
ফলিত দিক তার যে বড়ই ভয়ংকর

আমি তাই বলবো বারবার-
আইন অবশ্যই জলের মতন; কী তার হবে আকার-
কীবা তার গড়ন
তা নির্ভর করে-পাত্রটি হবে কেমন
মনীষীতো বলেছেন-আইন কিছুই নয়; একটি মাকড়সার জাল
সকলেই জানে কী তার দশা, কী তার হাল;
ক্ষুদে মাছি আটকে যায়
বিগ বাগস্ জাল ছিড়ে পালায়
আরো একজন মনীষী বলেছেন-আইন অন্ধ, সে পথ দেখে না, তাকে
পথ দেখাতে হয় বাঁকে বাঁকে

তাই আইন যদি হয় কারো তৈরি করা ধুরন্ধর ফাঁদ মাত্র
আর ব্যবহারকারীর হাতের এক ক্ষুরধার অস্ত্র
ছাড়া কিছু নয়, যদি বলিকাষ্ঠ রেডি থাকে
সর্বদা, আর ব্যবহারকারী সর্বদা বলির জন্য অস্ত্র হাতে রাখে
তাহলেতো সেই আইন হলো সেই সে গোলকধাঁধা
যেখানে মানুষগুলো কেবলই বাঁধা
সেই ভগবানের(!) হাতে, যেন এক অসহায় ভিকটিম তার
যার চারিপাশে হিংস্র হায়েনার
দল কেবলই করে কিলবিল, করে কিলবিল
আর মাথার উপরে বাঁকা-ঠোঁট শকুন-শকুনী আর শঙ্খচিল
কেবলই ওড়ে, কেবলই ওড়ে। হাঁ! সমাজ, হাঁ! মানুষ, হাঁ! আইন, হাঁ! সেই ভগবানেরা!
আসলে কোথাও কেউ নেই, কিছু নেই কোনখানে, কেবলই বন্যরা সেরা