আজ স্বাধিনতার গোল্ডেন জুবিলী আমাদের
একটু আগে লাল-সবুজের
গাদাগাদা বেলুন ওড়ানো হলো সারিসারি থোকাথোকা
আমরা কজন অচ্ছুত-দলছুট-বোকা
কিছুটা দূরে আমতলায় দাঁড়িয়েছিলাম একপাশে
সহসা কোন একজন নারী অফিসার এসে
একটা সবুজ বেলুন দিয়ে আমাকে বললেন-স্যার,
এটা ওড়াবেন। বেলুনটা নিতে নিতে মুখ থেকে আমার
বেরিয়ে গেল –আমাকেও ইতিহাসের সাক্ষী বানাতে চান
উনি কিছু না বলে একটু হাসি দিয়ে চলে যান
হয়তবা কিছু বলে গেলেন রহস্য হাসিতে তার
বুঝি নাই, হয়তবা তখন প্রয়োজনও ছিল না বোঝার
 
একটু পরে হয়তবা ওপাশে
কেক কাটা হলো ছোট্ট কোন সুনসান পরিবেশে
আমার ব্যাচের একজনের নেতৃত্ব দেয়ার কথা
দেখি নাই; দেখার সুযোগও ছিল না সেথা
ওপাশটা একটা লেভেল পর্যন্ত রেস্ট্রিক্টেড ছিল সেদিনে
বৎস্য, জানি তোমার কিছুটা খারাপ লেগেছে মনে  
মন খারাপের কিছু নেই; খুশিখুশি থাকো কেবলই
কারণ আজতো আমাদের গোল্ডেন জুবিলী

অতঃপর, অডিটোরিয়ামের একেবারে শেষ প্রান্তে
শেষ সারিটার ডান কর্ণারে আমরা কজন বসলাম একান্তে
ইতিহাসের শ্রোতা হয়ে
হয়তবা মন ও মগজে কিছুটা ছোপছোপ হতাশা নিয়ে;
যেখানে যাদের থাকার কথা ছিল না মোটেও   
এইতো কিছুকাল আগেও    
রীতিমত সামনের উচুঁ প্রান্তের কতিপয়ের ছিলাম একজন
আজ এখানে; জানি না কতক্ষণ!
আরো কোথায় যেতে হবে, কোন স্বর্গে (!) হবে ঠাঁই
যেখানে মানানসই কেবলই আমরাই!
 
টইটুম্বর ভাবগম্ভীর নিস্তব্ধ হলে
আজ শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে বক্তা সকলে
ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন; কাগজের সাথে চোখের মিতালী
মগজের সাথে ভাবনার ধুন্ধুমার এক গিতালী
কারো কোনদিকে যেন ভ্রূক্ষেপ নেই-
তারা কেউ কি ভাবনায় আজ হারিয়েছেন খেই?
ওপাশে ঘোষক-জুটির ঠোঁটে কেবলই কবিতারা ওড়ে
লাল-সবুজের পতাকার মতো পৎ-পৎ করে
কী ছন্দের দোলা!
কী আবেগের খেলা!
আমাদের মগজের মধ্যে সময় এখন প্রজাপতির মতো ওড়ে
কেবলি ওড়ে
ভাবনারা হাসে নীল আকাশে, দূর থেকে আরো দূরে যায়
যেন ইতিহাসের ঘুড়ি; সুতা কেটে পালাতে চায়
কেবলই পালাতে চায়
 
হলটির সময় এখন দারুণ চলমান, বেশ খানিকক্ষণ পরেপরে
বক্তারা আসা-যাওয়া শুরু করে
শুরু হয় কথার ফুলঝুরি ঝরানোর
কেবলই স্বপ্নের ফানুস ওড়ানোর
তুমুল প্রতিযোগিতার স্রোত বয়ে যায় ফল্গুধারার মতো যেন
শুধুই অনুভব করা যায়, দেখা যায় না কখনো
শুরু হয় শ্রোতাদের বিস্ময়কর এক মগ্নতায় ভেসে যাওয়া
কেবলই ভেসে যাওয়া……….
 
আজকের দিনটি নাকি জাতীয় জীবনের এক গর্বের দিন
দ্বিধা-দ্বন্দ-বিদ্বেষহীন
কেউ একজন বলে গেলেন
আমি শুনলাম-জাতীয় জীবন কথাটা তিনি দু-দুবার বলেছেন
জাতীয় অর্থনীতির কথা শুনেছি
শুনেছি জাতীয় উন্নয়নের কথা। দেখেছি  
জাতীয় অধ্যাপক, ফুল-পাখি-ফল, জাতীয় কবি
দেখেছি সবই
কোথাও কখনো জাতীয় জীবন দেখি নাই
অনেক খুঁজেছি আমি; বলো কোথায় তারে পাই
পেয়েছি কেবলই টুকরো-টুকরো জীবন
পড়ে আছে হেথা হোথা সারাক্ষণ
কত রঙ, কত ঢঙ; কেউ কারো সাথে
কেউ কারো পাতে
কখনো মেলে না। অথচ তিনি অবলীলাক্রমে আবার
শুনিয়ে গেলেন জাতীয় পোষাক-বদলের কথাও তার
আমি আজও কোথাও খুঁজে পাইনি জাতীয় জীবন কোন
দেখি নাই জাতীয় জীবনের পোষাক বদল কখনো
কেউ কখনো পেয়েছেন কিনা, দেখেছেন কিনা   
আমি তাও জানি না, তাও জানি না
 
আজ গোল্ডেন জুবিলী; জাতীয় গর্বের দিন (!) তারে বলো
এইতো গত সন্ধ্যায় ফেলানীর নামে গরু কোরবানী হলো
চারিদিকে কেবলি কালো পতাকারা ওড়ে  
মিছিলে মিছিলে আকাশ মুখর করে
আর শ্লোগানের কাপলেটগুলো! নাই বা বললাম
কারণ শাহবাগের আকাশে আজ সে গুলোর নাম
রেকর্ড হয়ে আছে আকাশের নীল কাগজে
বাতাসের মগজে-মগজে
 
একজন বক্তা বলে গেলেন-আমরা নাকি ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছি এবার
কেননা, আমাদের সৌভাগ্য হয়েছে জন্ম-শতবার্ষিকী করার
সৌভাগ্য হয়েছে স্বাধিনতার গোল্ডেন জুবিলী দেখার  
কী সৌভাগ্য আমার!
কী দেখলাম! কী দেখলাম!
এতোদিন অন্ধকারে ছিলাম!
আসলে তো তাই! ভাবিনিতো এমনি করে
তিনি আরো বললেন খানিকটা বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বরে-
আমরা সোনার বাংলা গড়ার জন্য একসাথে তাই
কাজ করে যাচ্ছি; থামতে চাই না, কেবলি কাজ করে যেতে চাই
আমি ১০০ রান করে ইতিহাস হতে চাই না, তাতে তৃপ্তি নাই
আমি নট-আউট থেকে ইতিহাস হতে চাই
কী গভীর দর্শন!
হায় বাঙালি বুঝবে কখন
কী গভীর দর্শন!
 
একজন ম্যাডাম বলে গেলেন বড় আবেগ ভরে
বিস্ময়কর দেশ-প্রেমের কথা; তত্ত্ব দিলেন-৯৯% হলেও তারে
দেশপ্রেম বলে না; এটা এমন একটা জিনিস-খাঁটি
১০০% হতে হয়, না হলে পুরাটাই মাটি
হে ম্যাডাম, বড়ই ধন্যবাদ আপনারে
কিন্তু কোন স্কেল দিয়ে মাপবেন তারে        
১৮ কোটি মানুষ আজ কে কোন মাত্রায় আছেন,
আপনি নিজেও, কোন স্কেলে তারে মাপবেন       
 
অতঃপর এক মহান বক্তা শুনিয়ে গেলেন এক আজব স্বরে
বিরল বাঙালির বিরল ঘটনার কথা সাজিয়ে থরেথরে-
‘যার আহ্বানে বাঙালিরা পতঙ্গের মতন
আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়লো, হাজারে হাজারে বিসর্জন দিল জীবন
দিল রক্ত, দেশকে করল স্বাধিন, করল মুক্ত বাঙালি জাতিকে
সেই বাঙালিরা কিনা, মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে
মহান পিতাকে করল খুন অকপটে’
এ যেন বিরল বাঙালির এ এক বিরল ঘটনা বটে!
হে মহান বক্তা আজ তোমাকে শুধাই অকপটে
তবে কি বিরল বাঙালির বিরল বাংলাদেশও বটে 
যার ঘাটেঘাটে পথেপথে কেবলি বিস্ময়  
আরও অধিক রহস্যময় মানুষের সম্পর্ক, আত্ম-পরিচয়
 
কোন একজন বলে গেলেন ঐ –
আমরা নাকি এখন আর দক্ষিণ এশিয়ার কেউ নই;
আমরা এখন রীতিমত গ্লোবাল এক জাতি
(শুদ্ধ-সভ্য অতি, প্রথম বিশ্বে বসতি)
তিনি থামলেন না, আরো শুনালেন মহান-মোহন
এক অর্থনীতির আজকের সাতকাহন
যার নাম বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার মহাকাব্যগল্প-
ছিলাম হতদরিদ্র, তলাবিহীন ঝুঁড়ি নাকি, নিঃস্ব-রিক্ত অল্প
একুশে হলাম চমক দিয়ে রীতিমত এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত
একত্রিশে হবো উচ্চ-মধ্যবিত্তের উল্লসিত চিত্ত
আর একচল্লিশে হবো উচ্চবিত্ত, সকলের হবে ঈর্ষণীয় অগাধ সম্পদ ধন
আর এই হলো আজকের অর্থনীতির সরল সাতকাহন
ব্যস, রীতিমত বিশ্ব-এলিটের একজন
আর কোন ভয় থাকবে না তখন
আমার বক্ষ বিনয়ের সাথে বক্তাকে শুধায় বারবার-
এবার তবে দিয়ে যাও ক্লিন জবাবটা তোমার
আর কত ধূসর স্বপ্নের দিন, আর কত কালো রাত
আর কত ধর্ষিত মানবতার সিঁড়ি, আর কত রক্তাক্ত রাজপথ
পেরোলেই তবে পাবো তোমার সেই সোনার বাংলার
সেই কাংখিত সুবর্ণ দুয়ার
সুবর্ণ দুয়ার