আজকাল ক্রাউডেড বাসের মধ্যে কেউ কেউ বড্ড করুণা করে
‘আঙ্কেল বসেন’ বলে প্রিয় সিটটি ছেড়ে
করিডোরে দাঁড়িয়ে থাকে বেশ
কখনো খোঁচা-খোঁচা দাঁড়ি-গোঁফের আলুথালু কেশ,
কিংবা স্মার্ট কেউ একজন এসে ‘আঙ্কেল ভাড়াটা দেন’
বলে পাওনার হাতটি বাড়িয়ে দিব্যি দাঁড়িয়ে থাকেন।
আজকাল কেউ কেউ দাদু বলে ডাকে
ইচ্ছে করে লাউয়ের ডগার মতন তকতকে
মুখটিকে কাছে নিয়ে
কপালে আলতো করে চুমো এঁকে দিয়ে
বলি-দাদুভাই ভালো থেকো, সারাজীবন
দাদুভাই হয়ে থেকো, যেন আমার মতন
দাদু হয়ে যেও না কখনো
ভাড়া দিতে ভুলে যাই, তখনো
ভাবতে থাকি কখন যে ভাই থেকে আঙ্কেল হয়ে গেলাম
চুপিচুপি, একটুও টের না পেলাম
জানি হয়তো এমনি করেই বয়স বাড়ে রাতের প্রহরের মতো ক্ষণে-ক্ষণে
হয়তোবা আরো গোপনে গোপনে
ভাবি- এই আমি কি সেই আমি, যে কিনা শীতের শূন্য-পত্র-বৃক্ষের মতন
কেবলই শূন্যতাকে বাড়িয়ে চলেছি সারাক্ষণ
সযত্নে গোপন করে চলেছি শূন্য মাথায় দাঁড়ি ও গোঁফের পক্কতাকে
অথচ একদিন টেরীকাটা চুলের অরণ্যে সমুদ্রের ঢেউ দেখে
হয়তোবা চেয়ে থাকতো কেউ একজন
আর এখন কেবলই গবেষকের মতন
মুখের ত্বকের ভাঁজ পরীক্ষা করে করে
সময় কাটাই একান্ত অন্তরে
বর্ষাবিকেলটাকে বাতাবি লেবুর বলে লাথি দিয়ে দিয়ে
উপভোগ করা এই জীবনে কত কুয়াসার ক্ষেত মাড়িয়ে মাড়িয়ে
কত বিড়ম্বনা, কত নিথরতা, কত দূরন্ত ছোটা
কত হারানো, কত পাওয়া শেষে অতঃপর এই আঙ্কেল-দাদু হয়ে ওঠা
একি জীবনের পরিপক্কতা!
বয়সের সার্থকতা!
নাকি কচি লাউয়ের মতন দ্রুত লয়ে বয়স বাড়িয়ে
বৈরাগ্য সংগ নিয়ে
এক অনন্ত শূন্যতার দিকে ধাবিত হওয়া
আর কেবলই শূন্যতার পুঁজির ভার বওয়া।
একদিন ভাবনাগুলোর ঘাসফুল গ্রোথ ছিল; মেরুণ রঙের স্বপ্নরা
ফুটতো ক্ষণে ক্ষণে। এখন যেন তারা
সব কেবলই জ্যামিতির জটিল ফর্মুলা
উপপাদ্যে বারবার রেখাভেদ, কোণ খন্ডন করে চলা
তবুও প্রমাণিত হতে নাই চায়
কেবলই অপ্রমাণিত থেকে যায়
জীবনের জীবন হয়ে ওঠা
ভাবি-বয়সের কেন এই দূরন্ত ছোটা?
তাই অবশেষে
জীবনের এই কুয়াশা প্রান্তে এসে
ব্যর্থ সন্তের মতো কেবলই প্রশ্ন করি –হে, অন্তর্যামি!
এই আমি কি সেই আমি?