আজ সন্ধ্যায় আমার কেবলই মনে হলো-
সকলেই যেন অনেক অনেক দিন পরে অকস্মাৎ সম্পূর্ণ জেগে উঠলো     
এক জীবনের কুলে, যে আমরা এতকাল ফসিলের মতন আধোস্বপনে
আধোঘুমে, আধোজাগরণে     
কেবলি হল্লা করেছি আমাদেরই নষ্টামির সাথে    
আমার কেবলই মনে হলো আজ এই রাতে-      
আমরা আর এতিম কিংবা দিশেহারা নই;
কোন এক প্রাক-ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসা ঐ
পরিশুদ্ধ অভিভাবকত্বের স্বর্গীয় ছায়াতলে
আজ আমরা দিব্য আসীন সকলে
একই কাতারে। আমরা কেবলই স্বপ্ন দেখি এখন-
পনের কোটি মানুষের আজ একসাথে গমন;
ছন্দে-ছন্দে এগিয়ে যাওয়া বিজয় মিছিলের মতন
আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে; যেন একটি মানুষও আজ মুখ ফিরিয়ে নেই     
কোন ঘৃণা-দ্বেষ-তাপে। আমরা এখন কেবলই স্বপ্ন দেখি-সেই
সে দিনের, যে দিনের পূর্ব দিগন্তের লাল সূর্য পশ্চিমে এসে    
লাল হয়ে অসীম বিশ্বাসে মেশে
একেবারে আমাদেরই বিশ্বাসের ভূমির সাথে       
আদিগন্ত স্বপ্নকে আমাদের রাঙিয়ে দিয়ে যায় দক্ষ হাতে
এক; আমরা তখন মাঠভরা ফসলের মাথার পরে
হাওয়ার মতন ভাসতে থাকি থরে-বিথরে      
সারাক্ষণ। আমাদের এই মাটি ও মানুষের দেশে,
ফসল ও কিষাণের দেশে আমরা এখন স্বপ্ন দেখি হেসে হেসে-
যেন ১৬, ২১ কিংবা ২৬ এর মধ্যরাত ছাড়া এ দেশের বাতাসে
কোন গুলির শব্দ শোনা যায় না আর    
কখনো। আমরা এখন দিব্যি স্বপ্ন দেখি বারবার-
আমরা যেন ভুলে গেছি- বেমালুম রক্তের রং, জিঘাঙ্সার গড়ন   
দানব বাস কিংবা ট্রাকের হনন
মানুষ কেড়ে নেয়না আর মানুষের অন্ন        
কখনো, মানুষ কেড়ে নেয়না আর ভাঙনের মতন মানুষের স্বপ্ন        
বর্ণিল স্বপ্নের সাথে কেবলই রঙিন বসবাস যেন আমাদের সকলের     
আজি এ দিনবদলের
কাঙ্খিত শুভলগ্নে আমরা এখন স্বপ্ন দেখি অফুরন্ত-
আমরা যেন সকলেই আজ অতিজীবন্ত
নিঃশ্বাসে ও বিশ্বাসে, মননে
ও উচ্চারণে       
বৈশাখের মাঠে-মাঠে নতুন জেগে ওঠা জীবন্ত     
কোন ঘাসেদের মতো
শুধুই ঘাসেদের মতো        
      (এই অংশের রচনাকাল-জানুয়ারি ২০০৯)

পুনশ্চঃ 
সুদীর্ঘ পনের বছর পরে এসে
ভাঙলো গভীর ঘুম বুঝি অবশেষে
আমাদের সকলের! চারিদিকে দেখি আজ কেবলই এক মহাহুলুস্থুল;
রহস্যে ঘেরা জীবন, অস্থির সময়- তাহলে কি সবই ছিল ভুল?
এতোদিন যে স্বপ্ন দেখেছিলাম-সবই মিথ্যে? তা কিছুই ঠিক নয়?
যাকিছু দেখেছিলাম, সবই ছিল রঙমাখা? নিখুঁত অভিনয়?
চারিদিকে দেখি আজ- স্বপ্ন কেবলই ধর্ষিত
নিদারূণভাবে। মানবতা রক্তাক্ত, বিপন্ন সকলের অস্তিত্ব
সকলেই আজ কেমন যেন সকলের পর!
ঘরে-ঘরে কেবলই আজ জীবন্ত কবর
দেখা যায়। দেখি-কোথাও কেউ নাই, কিছু নাই কোনখানে
কেবলই বিপন্ন বাতাস কাঁদে শূন্য শশ্মানে।

(এই অংশের রচনাকাল-জানুয়ারি ২০২৪)

অতঃপর-
এ কোন জমিনের পরে এলাম
আর একি দেখলাম!
সময় আজ বড্ড বিগড়ে গেছে, সে আজ উল্টাপথে চলে
হাতিয়ার কথা বলে না কিন্তু বয়সের বিবেচনাতো ভিন্ন কথা বলে;
সব বাঁধা অস্বীকার করে পিঁপড়ার সারির মতো
আজ রাজপথে বেরিয়ে আসে পড়ুয়া তরুণ-তরুণী যত
হাজারে-হাজারে, পিছে তার লাখো জনতার ঢল
আকাশ-বাতাস মুখরিত করে-চল্ চল্ সবে রাজবাড়ি চল্
কী অবাক কান্ড! কী বিস্ময়কর! রাজা নাই কোথাও?
আর পারিষদবর্গ, লাঠিয়াল সব উধাও?
অতঃপর জাতি দেখল এক বিধ্বস্ত রূপ মিনি পর্দায় ঘরেঘরে
হাতেহাতে, আর প্রকৃতি কেবলই অট্টহাস্য করে
দিকেদিকে। ধ্বংসের ভেতর থেকে কেবলই ওঠে জ্বলে
সবুজ স্বপ্নেরা; তারা শান্তির কথা বলে, তারা স্বস্তির কথা বলে।

              (এই অংশের রচনাকাল-৫ আগস্ট ২০২৪)