এইমাত্র ঝাঁপ দিলে জল এইমাত্র ডাঙা
ঘুম মেয়েটির জানলা ঘরে তিনপাল্লা ভাঙা।
রোদ ঝড়েতে দোর পড়ে না। দোর বলতে কি?
দালান ভেঙে রূপ নেমেছে। অকালবোশেখী।

কালবোশেখী ঝড়ের পরে আকাশ দেখা যায়?
দেখলে তাকে পাড়ার মোড়ে বিদ্যুৎ চমকায়।

বিদ্যুতেরও দোষ ছিল না,দোষ কি কারো থাকে?
নীল শাড়িতে, পুকুর ডুবে দেখলে পরে যাকে
সুয্যিগুরুও চাইবে আগুন। সদ্য বিকেল বেলা
শরীর ভেঙে শরীর চেনে চিলেকোঠার খেলা।

তোমার অসীম বুকের পাশে স্বচ্ছ দীঘি জল।
যেমন ছিলো রাতবিরেতে আলাপটি সম্বল।
আমিও ছিলাম যেমন করে তারা সবাই থাকে,
দিনের ভেতর রাতের জামায় অসহ্য বৈশাখে।

ইকিরমিকির ডুবছে জানি কলসি যেমন ডোবে।
জলের পাড়ায় জলপারানি কে ছোঁবে কে ছোঁবে।

এরপরে কি তারপরে কি? পরের কথা পরে
যেমন আছে বিষম প্রভেদ তাপে এবং জ্বরে,
তেমন ছিলো জোছনা মাখা ছাদের ঘরে ভুল,
একের পিঠে দুই দেখেছে প্রথম কদমফুল।

পূর্ণ থেকে শূন্য হলে হাতের পাতায় ফাঁকি।
গল্প জুড়ে নকশিকাঁথা। কি আঁকি কি আঁকি?

দু'এক মুঠো অগ্নিদাপট দু'এক মুঠো ওম
ভরদুপুরে পাহাড় চেনায়। খোদারই কসম
মন্ত্র পড়ে শীতের হাওয়া। শান্তি মেলে যদি...ম


মেঘে শুয়ে থাকে কনকপুরুষ,মেঘে শুয়ে থাকে নদী।

এই ছুঁয়ে যায় চোখ থেকে চোখ,এই ছুঁয়ে যায় বাসা
কথায় কথায় কি যেন হয় দারুণ সর্বনাশা।

তিন পাল্লা ভাঙা মেয়ে জানলা পারে বসে
বৃষ্টি ভেজে হাত বাড়িয়ে।অনেকখানি দোষে
ঘর পুড়েছে মনের মতোই,চাঁদ পুড়েছে জলে
প্রেমটুকু রূপ ক্ষয় জেনেছে দোসর চেনা ছলে।

দোসর চেনে মাটির নরম? মাটির কঠিন রূপ?
পাণ্ডুলিপি ঝুলির ভেতর, পদ্ম দীঘি চুপ।
বিবাহ বসন্তজল! এই পথে দুঃখ হেঁটে যায়।
খরা থেকে মহামারী। বাঁধ ভেসে যায় বন্যায়।
প্রেমটুকু ছিল বুঝি? এক কণা কোনো দিন ছিল?
আরো এক কাঠফাটা বাঁকা নিশি দেবীটি বলিল–

আমিও মরেছি রোজ।রাধা নাম লিখেছে জয়দেব।
কবিতা চন্দনকাষ্ঠ।পুড়ে গেছি রোজ,অতএব–

অতএব শরীর স্মরণ করো।
আর তো বাকি কিছু নেই। ধরো
রাক্ষুসী তৃতীয় পক্ষ ধীরে খুব ধীরে
রিপু থেকে উঠে আসা পাঁক লাগা তীরে
ভালোবাসা থেকে ছিঁড়ে দিচ্ছে তোমার দেহ,
এরপর কি চেনাবে তাকে? ভালোবাসা সন্দেহ!
নাকি কালো দিন, শীত মাস থেকে ঋতু অভিশাপ।
দোষ থেকে পাতা খসা। দোষ থেকে পাপ..
জমা হয়। জমে যায় পুরোনোর ভুল।
তুমি তার ভার নেবে শুকনো বকুল?
মুদ্রা হয়েছ নীড়ে, মাঠ পাতা গ্রাম
ডাকনাম অসাড়। শোনো,সুবহ্ থেকে শাম,
তুমি শুধু পর পর পেরিয়ে আসছো পরিক্রমণ।
মরে গেছে সমর্থ প্রেমিক, প্রথম রমণ।
এসো,কিছু উর্বরতা উপহার দাও। কিছু পরাগের গুঁড়ো...
আমিও তো তেমন কিছু করিনি, শুধু খুদকুঁড়ো
কুড়িয়ে রেখেছি রোজ, মাটিদের রূপ দেবো বলে
পালক রেখেছি যত্নে আদরের কোলে।
দেবতা স্মরণ করো বা কাশফুল কণা,
শোনো, মৃত্যুকালে আমারও কোনো নাম ছিলো না।
কি পেয়েছ,কি দিয়েছ কাকে– ভুলে যাওয়া ভালো।
তাই পুনর্জন্মের পর হে শুদ্ধ আলো,
নিজেকে ঈশ্বরী ডেকেছি।
ভালোবেসেছি।

ঈশ্বরীরও জীবন জটিল। ঈশ্বরীও মোহনার জলে
পড়ে থাকে বিচারবিহীন। প্রেমিকটি তৃতীয়ের দলে
দম রাখে। ফেলে দেয় টেড়িদাগ, পথের শহর
মোহমতে চলা দেখে ফিরে যায় শালুকপ্রহর।

এই দ্যাখো চাঁদের আঘাত। তবু আমি গরবিনী মেয়ে।
সমুদ্র ফিরিয়ে দিই। শক্তি আমাতে আছে। অজানার চেয়ে
বেশি জানি চুম্বন। দীর্ঘ জানি আগুনের তাপ।
তুমিও চক্র হও। কলঙ্ক প্রতাপ...
ধুয়ে নাও। ধুয়ে নাও পৃথিবীর দেনা।
শোনো, তোমাকেও কেউ আর হারাতে পারবেনা।

জলের নীচে পতনকাল। মধ্যযামে জরা
এক আলেয়া পেরিয়ে আসে আমার বসুন্ধরা।

তিনপাল্লার ভাঙাঘরে জন্ম হল শেষে
যাজ্ঞসেনী রূপ পেয়েছে সমস্ত প্রদেশে।
তিনিই এখন শক্তিসাধন। গভীর লেখালেখি
মাঠ পেরিয়ে ধান পেরিয়ে আমি কেবল দেখি...
আলোর নীচে জয়ের আকাশ, আলোর পাশে আলো
আমার জন্য আমিই আছি। বিদ্যুৎ চমকালো।

চোখ চলে আশপাশ, পারাপারে কান পাতা দায়।
মহাকাশ নেমে আসে দেবীটির পায়ের পাতায়।