মানস পুত্র নারদ, ব্রহ্মা তাঁর পিতা,
বিষ্ণু ভজে সদা সে যে ঘুরে যথা তথা।
বিশ্ব ভ্রমণে নারদ আসিল একদিন তথা,
অপরূপ রূপ ধরি বিন্ধ্য রয়েছে যেথা।
জাগিল কৌতুক রস নারদের মনে,
চাতুরী প্রশংসা বাক্য কহিল বিন্ধ্য সনে।
রূপের বাখান শুনি হইল খুশি বিন্ধ্য,
মহৎ সে নয় তবু,ইহা জানি হইল সে ক্রুদ্ধ।
নারদ কহিল এ কারণ যদি জানিবারে চাও,
জিজ্ঞাসিও দিবাকরে, তাঁর সনে যাও।
বিচলিত,ক্রোধে মত্ত বিন্ধ্য, জিজ্ঞাসিল দিবাকরে,
শ্রেষ্ঠ কেন নই আমি কহিয়া যাও মোরে।
দিবাকর কহিল তখন পর্বত মেরুর কথা,
সুউচ্চ সে, শ্রেষ্ঠ সে তোমা হতে,ব্রহ্মা থাকেন যেথা,
শিখর দেশ তাঁর,অতি উচ্চ হেতু,
সদা সেথা ধবল কিরণ, যেন বসন্ত ঋতু।
অতিক্রম অসাধ্য তাই চলি তাঁর পাশ হতে সদা,
অনন্তকাল ধরি এমনি মোর চলাচল বাঁধা।
রবি বলে তোমা হতে উচ্চ অধিক সে বটে,
তাই চলি পাশকাটি পশ্চিম পাটে।
শ্রেষ্ঠ সে নয় তবে জানিল এ প্রকার,
এত জানি গুমোরিয়া মরে অহংকার।
অস্থির বাসনা বিন্ধ্যের পথ ছাড়ি বিপথের পথে,
অনর্থ ঘটায় বিন্ধ্য, অকারণ শ্রেষ্ঠ হইবার ব্রতে।
শুনিয়া রবির কথন,বিন্ধ্য ক্রোধে কম্পিত দেহে,
বৃদ্ধি করে বপু তাঁর, ঊর্ধ্বপানে চেয়ে।
থর থর কাঁপি উঠে মেদিনী তখন,
সময় আসিল বুঝি ধরার পতন।
স্বর্গ কাঁপে, মর্ত্য কাঁপে, কাঁপে ইন্দ্র সিংহাসন,
মানুষ বাঁচিবেনা বুঝি, বিচলিত সকল দেবগন।
উপায় না দেখি ইন্দ্র,ছুটিল অগস্ত্য নিকট,
রক্ষা কর ঋষিবর বিপদ ঘনিয়াছে বিকট।
মুচকি হাসিয়া ঋষি দিল ইন্দ্রেরে আশ্বাস,
ফিরিয়া যাও তুমি, মোর প্রতি যদি রাখ বিশ্বাস।
সকলি হইবে শান্ত, ধর ধৈর্য, তিষ্ঠ ক্ষণকাল,
ধ্যানেতে জানিল ঋষি,এসকল নারদ মায়াজাল।
গৃহে ফিরি ঋষিবর, স্ত্রী পুত্র সঙ্গে লইয়া শেষে,
ভ্রমণে বাহিরিল, চলিল দক্ষিণ দেশে।
বিন্ধ্য তাঁর শিষ্য যে, আসিল তাহার পাশে,
নিকটে ডাকিল তাঁরে, প্রকাশ করিল ইচ্ছা মৃদুহেসে।
ডিঙ্গাইব কেমনে তোমায়,রয়েছো দাঁড়ায়ে উচ্চ শিরে,
চাও কি মৃত্যু গুরুর ভ্রমণের কালে, যাত্রা পথের পরে?
নত শিরে লজ্জিত বিন্ধ্য তখন প্রণমিল গুরুর চরণ,
গুরুর আদেশ মাগি, ক্ষমা চাহি লইল গুরুর স্মরণ।
ঋষিবর করিল আদেশ, রহ তুমি এমনি নত শিরে,
রহ তুমি ততদিন, যতদিন আমি না আসি ফিরে।
গুরুর আদেশ শিরে ধরি বিন্ধ্য আজও রয়েছে এমনি,
অগস্ত্য গিয়াছে চলি, ফিরে তাঁর আজো আসা হয়নি।।