তপ্ত বৈশাখ
শুরু হলো আবার হররা হাঁকডাক
ফিরে এলে তুমি আবার তপ্ত বৈশাখ।
তুমি মদোন্মত্ত হাওয়া, তাণ্ডব নৃত্যের তাল
তুমি হও প্রচণ্ড ক্ষণিকেই বেসামাল।
তুমি আম্র বনে তপ্ত মধুর সমীরণ
ক্ষেপা পাগল তুমি, গুড়গুড় ডেকে কাঁপাও গগন।
হও তুমি উচ্ছল, উর্মীতে তোলো পলকেই হিন্দোল
উপড়ে ফেল শস্যক্ষেত্র বৃক্ষ ফুল ফল ।
তোমার সমীরে আছে প্রচণ্ড রোষানল
জাগাইয়া তোলো আলস্যের মাঝে বল।
তোমারে করে সবে খুশিতে আবাহন
চায় দেখিতে তোমার তপ্ত রুধির তাণ্ডব নাচন।
করে বরণ তোমারে সবে দিয়া বরণডালা
অঙ্গনারা বাঁধে কবরী দিয়ে ফুলেল মালা।
তুমি আস ভাঙিতে অচলায়তন, অশুভ বন্ধন
জাগিয়া ওঠে মনের মাঝে দীপ্ত চেতন।
তুমি কিষাণের আমানি বৌয়ের মিষ্টি হাসি
তুমি রঙিন মুখোশ পিঠা পুলি সর্প পাখি।
ছুটে চলো তুমি দুরন্ত বালকের চড়কায়
মঞ্চে মঞ্চে চলা কবিয়ালের তরজায়।
তুমি গাঁয়ের উদম রাখালের বাঁশের বাঁশরি
তুমি রাঙা-মুখো লাল ফিতে বাঁধা কিশোরী।
মানো না তুমি কোনো বাঁধা, কোনো পিছুটান
ছুটে চলো তুমি দুর্বার বেগে আপ্রাণ।
তুমি বৃষ্টি, ক্ষেপা বৈশাখী, আচম্বিত বন্যা
নও তুমি ঋতুরাজ, তুমি রঙিন অনন্যা।
করো না তুমি পুরাতনেরে স্মরণ
চেয়ে থাকো সম্মুখ পানে-করো নতুনেরে আবাহন।
তুমি হিসাবের পাতা ভরা হালখাতা
বিলাও মিঠাই মুড়কি করে রঙ্গ রসিকতা।
হতে না হতে নব প্রভাত সবে হয় মাত
চায় কেটে যাক জরা ভয় অভাব পরমাদ।
ঝরে যাওয়া ফুল পড়াও তুমি অলকে
দেখো তারে তুমি স্মিত হাস্যে অপলকে।
ভাসাও আকাশেতে কালো মেঘ-তরী
তরসে চলে তাতে শ্বেত-পরী।
মেঘে ঢেকে করো নীলাভ গগন কালো
ফাঁকে ফাঁকে উঁকি মারে মধু পিঙ্গল আলো।
তুমি লয়ে আসো মৃদঙ্গ বাতাসা মুড়কি গজা
মুড়োঘন্ট লাবড়া মুটমুটে মুরলি খাজা।
পসরায় লও ঘোল মৃৎ-পুতুল ডোরাকাটা সার্দুল
কাঠবেলী গোলাপ রজনীগন্ধা কতো না অজানা ফুল।
তুমি বিজুলি প্রভঞ্জনের উল্লাস
তুমি অগ্নি বায়ুর তপ্ত শ্বাস-প্রশ্বাস।
তুমি বাংলার বাঙালি- ভীম প্রমত্ত
করিতে পারো তুমি মত্ত এই মর্ত্য।
এসো ফিরে রুদ্র বৈশাখ এসো এই বাংলায়
স্পন্দিত হোক সকলের জীবন তপ্ত মমতায়।