শতবর্ষে মুজিব
আজ শত বছর পরে হে বীর জাতি
গভীর শ্রদ্ধায় আমায় করছো স্মরণ।
আমিও স্মরণ করি তোমাদের।
নিভৃত এক জনপদের
ছোট্ট সৌম্য শীতল কুটিরে
অতী সরলমনা স্নেহময়ী জননীর গর্ভে
সাহসী দৃঢ়চেতা সৎ পিতার ঔরসে
এ ধরায় আমার আগমন।
আমার প্রথম কান্নায় জেগে ওঠেছিল চারপাশ,
যেন শেকল ভাঙার গান শুনতে পেয়েছিল।
প্রথম দৃষ্টিতে ছিল মায়ের মুখ
যেখানে আমি দেখতে পেয়েছি
আরেক জননীর বদন - এ বাংলার রূপ।
মায়ের হাসি দেখে হেসে ওঠেছি
বিসন্নতা দেখে বিসন্ন হয়েছি।
বাবার হাতের শীতল স্পর্শে মমতা পেয়েছি,
পেয়েছি অদম্য সাহস, ভালো মানুষ হয়ে
ওঠার প্রেরণা।
পিতার কাছেই শিখেছি অজেয়কে
কীভাবে জয় করতে হয়, অন্যের সাথে
কীভাবে কষ্টকে ভাগ করে নিতে হয়।
উদম দেহে ঝাপিয়ে পড়েছি
কাজলা দীঘির জলে,
নিজের পরনের জামাটি পরিয়ে দিয়েছি
অতি দরিদ্র বন্ধুকে,
দুরন্ত সাথীদের সাথে দৌড়ে খেলেছি
উন্মুক্ত সবুজ মাঠে।
ফিরেছি গোধুলিতে ক্লান্ত হয়ে,
মা আঁচল দিয়ে মুছে দিয়েছেন
মুখখানা আমার, গভীর মমতায়।
আমার শরীরে মিশে আছে এ দেশের
উর্বর সলিলের মিষ্টি ঘ্রাণ, যা
আমি ছড়িয়ে দিয়েছি তোমাদের মাঝে।
আমি এখনো ছুটে যাই তপ্ত পিচঢালা রাজপথে,
ছুটে যাই অগ্নিঝরা মিছিলে।
আমার শ্লোগানে এখনো থরথর করে কেঁপে ওঠে
মাটি আকাশ, পালিয়ে যায় কালো মেঘমালা।
রেসকোর্স আমাকে চেনে,
চেনে কেন্দ্রীয় কারাগারের ঐ প্রকোষ্ঠ;
আমাকে চেনে জেলের লোহার গারদগুলো।
লাল ইটের চুন শুরকিতে আছে
আমার দীর্ঘশ্বাস, আছে রক্তের ফোটাও।
মেঝের গাত্রে মিশে আছে
আমার দেহের নোনা ঘ্রাণ।
ত্যাগীরাই তা এখনো পরখ করে।
আমি পেরেছি তোমাদের মুক্তি দিতে
স্বৈরাচারীর হাত হতে ;
তার মৃত্যু হয়েছে আমার হাতে।
আমি এখানো উচ্চ কন্ঠে শ্লোগানে
নিরন্ন মানুষের কথা বলি,
বেকার যুবকটিকে জাগিয়ে তুলি,
নিপিড়ীত মানুষটিকে সাহসী বানাই,
মাথা তুলে দাঁড়াবার শক্তি যোগাই।
কিন্তু, আজও আমার অন্তরে
গভীর দুঃখ গুমরে কাঁদে।
কেন, কী অপরাধে কিছু কৃতঘ্ন
আমাকে সপরিবারে হত্যা করেছে?
তারা কি বাঙালির মুক্তি চায়নি?
বুলেটে বুলেটে ক্ষতবিক্ষত করেছে;
কিন্তু আমাকে মারতে পারেনি,
মৃত্যুজয়ী প্রাণকে হত্যা করা যায়না।
রক্ত পিশাচেরা কাপুরষ, এখনো ভয় পায়।
আমি মৃত্যুর কাছে মৃত্যুদূত।
ভয় পেওনা তোমরা,
আমি এগিয়ে নিয়ে যাবো তোমাদের
আলোর দিকে।
বেঁচে থাকো বীরের জাতি হয়ে
তোমাদের সন্তানেরা যেন থাকে দুধেভাতে।
মাহমুদ লতিফ
১৫ আগষ্ট, ২০২০
মুজিববর্ষে লেখা।
** জাতিরপিতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা **