এখনো মনে হয় তুমি বেঁচে আছো,
এখনো মনে হয় জানালার সারসিতে দাড়িয়ে আছো,
শিয়রে মা, হায় শিশুকাল,এখনো দোলনায় বারবার দোলে,
এখনো মনে হয় ওম নিচ্ছি তোমার মমতামাখানো কোলে,।

কুয়াশা মাখা শীতে বারবার কাথা পালটিয়েছো,
নিজেকে উজাড় করে সন্তানকে ভালোবাসিয়াছো,
চোখে কাজল লাগিয়ে সন্তানদের দেখিয়াছো বারবার মেটেনি আশা,,
শেষবারের মতো মায়ের সুরমাজড়ানো চোখ দেখিয়াছি,, মেটেনি পিপাসা,,

ভোরের স্নিগ্ধ রোদ এসে পরেছিল তোমার উঠোনে,,
যেখানে গোসল দিয়েছিল বোনেরা মমতার,যত্নের বুননে,
এইবারেই সেই উঠোন পাকা করেছিলে, তুমি হয়তো জানিতে,
ভোরের পাখি হয়ে এলে, শেষ বিদায় জানাতে,মানুষের চোখের পানিতে,,

যখন শুনলাম তোমার শ্বাস উঠেছে তাড়াতাড়ি এসো,
অন্ধকারে পা চলেনা,কাছে আপন জন কেউ নেই যাকে ভালোবাসো,
পূর্ব, পশ্চিম, দক্ষিণ দিক থেকে সন্তানেরা দৌড়ায়,সে এক ভয়াল রাত্রি,
হাত পা কাপে যানবাহন নেই,নিভু নিভু জ্বলে রাস্তার বাতি,।

আমাদের আশা ছিল প্রানের কথা বলবো শেষ বারের মতো,
মেঘ কেটে কেটে চলে গেলে ইল্লিনে,সব হয়ে গেল গত,
একা একাই তুমি কালেমা পড়েছো হে!মহিয়সী রমনী
প্রায় ৪০ দিন হয়ে এলো তোমার স্মৃতি একটুও ভুলতে পারিনি

৩৬ বছর স্বামীর কবর ঘিরে রেখেছিলে যত্নে, পরম মমতায়
মনে হয় তুমি জানতে শেষ ঘুম তোমার ঘুমাতে হবে চিরচেনা এই বিছানায়,।
এতোদিন পরেও কিছুই ভালো লাগে না নেই মায়ের মতো আন্তরিকতা,
আহা!বিষন্ন হৃদয়ে বৃক্ষ কিভাবে দাড়িয়ে থাকে,ঝরায় শোকের পাতা,

মাঘের রাতে,হাড়ে লাগা তীব্র শীত মনে পড়ে স্মৃতিকথা,
উনুনের পারে পলোর উপর শুখিয়েছো ভিজা কাথা,
তোমার রক্ত বহিতেছে যে সন্তানদের গায়ে,
হায় মা!,ঋণ শুধরাবার না চোখের সব জল ঢালিতাম ও যদি তোমার পায়ে,,।

সান্তনা দিতে যেয়ে নিজেই বাকরুদ্ধ হয়েছি বারবার,
সাদা চাদরে মুখ ঢেকে হয়তো শুনিয়াছ বিদায়ের বক্তৃতা ঈদ-গার
আজ হতে ৬০ বছর আগে বউ হয়ে এসেছিলে পালকিতে ভোরের উদয়ে,
কুমার নদীর দু-ধারে মানুষের ভীড় জমে ছিলো চির-বিদায়ে

আহা!ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির মতো মানুষের দুঃখ নিঃশ্বাসে,
তবুও ঘন মেঘ,শোকাহত শ্রাবণ মৃত্যুই সত্য আমাদের বিশ্বাসে
টুকরো টুকরো দুঃখ নিয়ে চলে গেলে মা,সমৃদ্ধি দেখলে না,
করোনা,মৃত্যু, শোক, গোংরানি আর কান্নার জলকনা

স্বামীর আইনের বই গুলো যত্নে রেখেছিলে ৩ যুগের ভক্তি,
বলে গেলে তুমি বইগুলো যেন সংরক্ষন করি,প্রেরণার শক্তি।
মানুষ ও দেশ নিয়ে ভেবেছো খুঁজেছো জীবন ও মৃত্যুর মানে,
অনেক দিন, অনেক বছর পরেও মনে থাকবে জুলা পাতির কথা বাঁশ বাগানে,।

বলেছিলে আমার মৃত্যুর দিন দেখিস,অনেক মানুষ আসিবে গাছের ছায়ায়
সবাইকে বসতে দিয়ো কেউ যেন না খেয়ে না যায়..
মা তুমি চলে যাওয়ার পর আর তেমন অতিথি দেখি না
তুমি ছিলে রহম আমাদের,শুকনো পাতার মরমর বেদনা

মা তুমি মুতমায়িন আত্মার মত ঝরে গেলে যেমন ঝর্ণা ঝরে
মৃত্যুতে কষ্ট নেই দুঃখ নেই চলে গেলে কবর দেশেতে স্থায়ী সেই ঘরে,,
সে ঘরেতে তুমি কেমন আছো? কেমন রেখেছে হায় দয়াময়?!
কবরের পাশে দাড়িয়ে ভাবিতেছি এখন সামনে কতো সূর্যের বিদায়.

খাবার টেবিলে খাবার বেরে বসে থাকতে,খেতে সবার শেষে
যত দূরে যাই ভাবিতাম ভয় কিসের?মা ডাকিলে ভয় চলে যেত ভেসে,
কোনদিন মা,ভৎসনা করিনি স্কুল পালিয়ে ঘুড়ি উড়িয়েছি
খড়েরপালার পিছে, বাবার ভয়েতে মায়ের আচল ধরেছি।

সে মা আজ কবর দেশেতে, ব্যথায় নীল হয়ে আসে চারিপাশ,
মায়ের পদতলে জান্নাত আমার, ঢেকে আছে দূর্বাঘাস,
মায়ের অনুপস্থিতিতে বাবার শূন্যতা জেগে উঠেছে,জীবনের সন্ধ্যা এলো বুঝি,
শেষ খাবার তুমি খেলে মা দুধ,সাগু আর সুজি।

কোনদিন আর দেখা হবে নাকো,আহা তোমার সোনামুখ,
এখনো মনে হয় ফজর নামাজে ডাকিতেছো তুমি,সন্ধ্যায় ঢেকেছে সুখ,।
এখনো তোমার কাঠের সিন্দুক ভরা স্বামীর জামাকাপড়,মায়া জড়ানো বিবাহের শাড়ি,
পিতৃপুরুষের পুরনো দিনের কেউ আর নেই,আছে শুধু বৃক্ষ সারি সারি,

মধ্যরাতে তখনকার দিনে আসিতো ভাই,আত্মীয়-স্বজন,
জোসনার আলোতে চুলা ধরাতো কোথায় কাসার বাসন?
আহা!,কি মজা হতো ভাত আর দেশি মোরগের ঝোল,
এইসব আয়োজন মধ্যরাতের কোথায় হারিয়ে গেছে আউশের ধান ক্ষেতের দোল,!


শিয়রে বসিয়া সারারাত তুমি মাথায় জল ঢালিতে,
জ্বর দেখিতে আসিতে বারবার মাথায় মমতার হাত বুলাতে।
রসের ঝরা দিয়ে হাত পা আর মাথায় ডলিতে..
পিপুল পাতা শরীরে মাখাতে, পারছি না সে স্মৃতি ভুলিতে

এখন ঘুঘুরা দল বেঁধে নামে, কি সুন্দর ডাকে তোমার নিকানো উঠোন...
পায়রা গুলো উড়ে যায় নিলিমায়,ফিরে আসে সন্ধ্যা তখন।
পোষা পাখিগুলো ফিরে আসলেও, তুমি আর আসো না
তালগাছ টার মাথার উপর চাঁদ উঠলেও, তুমি আর হাসো না!

মাটির মানুষ তুমি মাটি হয়ে গেছো, রেখে গেছো ঢেড় অভিজ্ঞতা ,,
জনম জনম তুমি স্মৃতি হয়ে থাকবে স্নেহের স্নিগ্ধতা,
কোনদিন মুখ ফুটে বললে না মা,প্রবীন সেই সব গল্প,
বুকের কষ্ট বুকেতে লুকালে জানিয়েছো খুবই অল্প।

নিজের কাজ তুমি নিজেই করেছো,আদেশ দাওনি নিজ প্রয়োজন,
জোনাকির মতো আলো জ্বেলে গেলে সবই ছিল নিঃস্বার্থ আয়োজন।