বাবা আমাদের নিয়ে তেমন কোথাও যাননি,
তখন শহরে শোভিত শিশু পার্ক ছিলনা ভাল রেস্তোরাও হয়নি
অবশ্য আমাদের নিয়ে আত্মীয়র বাড়িতে বেড়াতে যেতেন,
তখন স্বজনেরা অপেক্ষার উত্তেজনায় আনন্দ পেতেন।
গ্রামের মেঠো পথ বেয়ে প্রিয়জনেরা এগিয়ে আসতেন,
তখন ধুধু মাঠ সবুজ ফসলে ঢাকা ছিল,হরিৎ স্বপ্নে ভাসতেন।
দিগন্ত জোড়া নীল আকাশ নেমে গেছে পাশের গ্রামে হয়তো,
মানুষের মমতা ছিল সদ্য ফোটা পলাশ ফুলের মত।
তখন মানুষের ভালোবাসা লোক দেখানো ছিল না,
কোন বাড়িতে গেলে ভাত না খেয়ে আসতে দিত না।
মানুষের হৃদ্রতা ছিল মনে হতো পদ্ম পাতার বিল
ভালোবাসার প্রকাশ ভিন্ন রকম, প্রিজনদের ছিল ভীষণ মিল
বাবা ছিলেন সবুজ মাঠের উপর সূর্যের মতোন,
ছুটির দিন রবিবার আমাদের নিয়ে বাড়ি পরিষ্কার করতেন।
সেদিন আমরা শিমুল তুলার মতো তুলতুলে থাকতাম,
সুবোধ বালকের মত সারাদিন তার মর্জি মতো চলতাম।
বাবা আমাদের নিয়ে তেমন কোথাও যাননি,
পরীক্ষা শেষে প্রতিবছর নানা বাড়ি আসেননি,এমন হয়নি।
সদ্য বিবাহিত নরম নোলক পরা,ছোট খালা থাকেেতো
তাকে দেখলে সব কষ্ট প্রজাপতির মতো উড়ে যেত।
রাত্রিবেলা ট্রেনের বাঁশি শুনতে বেশ ভালো লাগতো,
মায়ের উপহার দেওয়া কোট পড়ে বাবা আসতো।
ব্যাসপুর রেলস্টেশন থেকে নানাবাড়ি খুব একটা দূরে ছিল না
চোখের মনিতে এখনো সে মানুষটির ছায়া তার,তুলনা হয় না
বাবা আমাদের নিয়ে তেমন কোথাও যাননি
অবশ্য খেলতে,সাঁতরাতে বনভোজনে যেতে বারণ করেননি।
তিনি ছিলেন সত্যবাদী, বিনয়ী বটবৃক্ষের ছায়ার মত,
তিনি মুচকি হাসলে মনে হতো বাগানে ফুল ফুটেছে যত।
তিনি শিশুর মত নরম মেজাজের, ঠিক চোখের পাতার মত,
অনেকবার মনে হয়েছে এখনো বেঁচে আছেন হয়নি গত।
হায় ৩৯ বছর আগে চাঁদ ডুবে গেছে অমাবস্যার সন্ধ্যায় ,
সে চাঁদ ইহজগতে কি জাগবে? জানি কক্ষনো নয়।