মায়ের চেয়ে দামি কিছু ত্রিভূবনে নাই
মায়ের যতন করতে কভু ভুল নাকো ভাই।
আমি অদম হতভাগা মাকে চিনি নাই
মা যে কি অমূল্য ধন হারিয়ে টের পাই।
আমার মত হেলায় ভেসে করো নাকো ভুল
সারা জীবন বুক চাপড়েও হবে না তার মাশুল।
শক্ত করে বুকে ধরো মায়ের চরণখানি
তাতেই তোমার মুক্তি মঙ্গল, সফল হবে জানি।
গাড়ি বাড়ি, সুন্দর নারী সবই পাবে ভাই
মা হারালে তার বিকল্প এ জগতে নাই।
বায়েজিদ বোস্তামী আর ওয়ায়েছ করনী
মায়ের সেবা করেই তাঁরা জগৎ মাঝে মানি।
তৃষ্ণা কাতর মা জননী গভীর রাতে জাগি
বায়েজিদের ঘুম ভাঙালেন একটু পানির লাগি।
পানি তখন নাহি ছিল গৃহ আঙিনায়
পর্বত সংকুল জনপদে পানি পাওয়া দায়।
শূন্য কলস হাতে নিয়ে দূরের ঝর্ণা হতে
পানি নিয়ে আসে পুত্র গভীর নিরালাতে।
গৃহে ফিরে দেখে পুত্র মা তন্দ্রালোকে
পানি পাত্র হাতে পুত্র দাড়িয়ে অপলকে।
ঘুম ভেঙে মা জননী শিউরে দেখেন চাহি
পানি হাতে শিশু পুত্র চোখে তন্দ্রা নাহি।
মমতায় বিগলিত হলো মায়ের প্রাণ
সপ্তাকাশে পৌঁছে গেল মাতৃভক্তির ঘ্রাণ।
ওলির মর্যাদা পুত্র পেল ধরার মাঝে
মাতৃভক্তির কি যে মূল্য জানব এসব কাজে।
মাতৃপ্রেমী ওয়ায়েছ করনী মাকে বেসে ভাল
জগত মাঝে রেখে গেল ইতিহাসের আলো।
সারা জীবন পৃষ্ঠে রেখে সেবা করে মাকে
নবী ভালবেসে ছিলেন না দেখিয়া তাঁকে।
"আস্তিন তাঁকে দিয়ে এসো আমি মরার পরে"
মূমুর্ষ দয়াল নবী বলেন আলীর তরে।
"মাতৃভক্তি, নবী প্রেমে যাহার হৃদয় ভরা
খবরদার! বিয়াদবি করিস নাকো তোরা।
আমার হয়ে তাঁহার কাছে করো নিবেদন
পাপী উম্মতের তরে করতে আবেদন।
তাঁর মোনাজাত ফেলবে নাহি রহিম রহমান
মাতৃপ্রেমে ভরা যবে তাঁহার মন প্রাণ।"
মায়ের কষ্টে সবই নষ্ট কিতাবেতে পাই
তাঁর সাথে পাপ করবে না মাফ প্রভু মালিক সাই।
মায়ের পায়ের ধূলো যেনো সুরমার চেয়েও দামি
ও ধূলো গায়ে মাখলেই হবে সফলকামি।
বউয়ের কথা শুনে আজ মাকে দিলে ধমক?
অপেক্ষায় থাকো বন্ধু পাবে দারুণ চমক।
জাহান্নামের জ্বালানী হবে তোমার দেহ
খবরদার ভাই! এমন ভুল করো নাকো কেহ।
' উহ্ ' যদি কহে মা তোমার কোন কাজে
শত বৎসরের ইবাদত হয়ে যাবে বাজে।
তেইশ শাল হজ্জ করে নবীর দেশে থেকে
পাহাড় গুহায় কেঁদে কেঁদে চুল গেল তার পেকে।
তবু নাহি হলো হজ্জ, নাহি পেল মাফ
মায়ের প্রতি করেছিল হয়তো কিছু পাপ।
অন্তর চক্ষু দিয়ে দেখেন পথচারী নবী
জৈনক পুত্রের কবরে জ্বলছে আগুন খুবি।
জিঙ্গাসিলেন নবী তাঁহার সাহাবীর তরে,
" কবরবাসির কেউ কি নেই এই দুনিয়ার পরে?"
" দুঃখীনি এক মা জননী আছে তাহার জানি
সারা জীবন পুত্রাঘাতে ঝরেছিল পানি।"
নবী বলেন, "তাইতো বলি এত আজাব কেন?
মায়ের সাথে নাফরমানী করিও না ভাই যেন।"
অত:পর মা জননী কবর পাশে এলেন
নবীর দোয়ায় অন্তর চোখে সবি দেখতে পেলেন।
দেখিয়া চিৎকারে পরে দয়াল নবীর পায়
কহে, "দয়া করে থামান হুজুর কলিজা ফেটে যায়।
আরশে আরোজ করুন আমার পুত্রের হয়ে
রহমতের বাতাস যেন যায় কবরে বয়ে।"
সারা জীবন আঘাত পেলেন পুত্র দ্বারা যিনি
এক মহুর্তের পুত্রকষ্টে সব ভুলে গেলেন তিনি।
এমন দরদি মাকে করো নাকো হেলা
হয়তো ভুল শোধরানোর পাবে নাকো বেলা।
বিদেশ হতে পুত্র যখন ফিরে আসে বাড়ি
সবাই দেখে ব্যাগ-বস্তা, মা পুত্র দেখে তারি।
বউ খুঁজে গয়নাগাটি, বাচ্চা চুইংগাম
মা জননী আঁচল দিয়ে মুছে ছেলের ঘাম।
সপ্ততলা অট্টালিকা, নাম যশ অতি
মাতৃভক্তি না থাকিলে জানবে সবই ক্ষতি।
মা যদি রাজি খুশি থাকেন তোমার তরে
কষ্ট হলেও এ জগতে জান্নাত পারে মরে।
মা নাই যার সংসারে সেই কেবল বুঝে
অন্তরচক্ষু সারা জীবন তাঁকেই যেন খুঁজে।
মা আছে যার সংসারে সে তো বুঝে না
বুঝবে সেদিন ঠিকই যেদিন মা থাকবে না।
স্বর্গ-জান্নাত, হ্যাভেন-বেহেশত যা কিছু আছে
সবই যেনো মা জননীর চরনখানির নিচে।।
***
এই মহিমান্বিত মাসে আমার কবরবাসি বাবা মায়ের জন্য সকল প্রিয় পাঠকের দোয়া কামনা করছি। আপনাদের সকলের পিতা মাতাকে আল্লাহ সহি সালমতে রাখুন।