চলছে খুনের মহোৎসব দিনে কিংবা রাতে
চলছে চলুক চলবে আরো কি এসে যায় তাতে?
ছোট একটি বাড়ির মাঝে ষোল কোটির বাস
বাড়ির জন্য ততই ভাল যত পরবে লাশ।
পোশাক শিল্পে আগুন লাগলে গেটে তালা মারিয়া
দারোয়ান যায় পালিয়ে নরসিংহপুর ছাড়িয়া।
শত শত জীবন পুড়ুক তাতে কি আসে যায়
তালা না মারিলে যদি তৈরী পোশাক খোয়া যায়?
জামার চেয়েও মূল্য কম জামা তৈরির কারিগর
'মানুষ না হবি যদি এমনি করেই মরবি মর।'
"দুই দিন পরেই বেতন পাবি সারা মাস খাটার ফল
ফাটা দালান তাতে কি? কাজ করিবি ভেতর চল।
গার্মেন্টসে চাকুরী করিস, প্রাণের এত ভাবনা ক্যান?
ঢং দেখিয়া মনে হয় জমিদারের কন্যা যেন।"
তেরশ গেল প্রাণ আমার কঁচি ভাই বোনের
তাতে কি গেল এলো এই বাংলার সুখী জনের?
বিছানাতে করল পেশাব সারা রাত্র ভরিয়া
সকাল বেলা বসে আছে গাড়ির স্ট্রিয়ারিং ধরিয়া।
নাবালকের হাতের মুঠোয় মহামূল্য ষাটটি প্রাণ
বাম হাতে গাড়ির গিয়ার ডান হাতে বিড়ির টান।
একটা মোটা কাপড় পেতে জীবন গেল গোটা বিশ
যেন ভাত ছিটিয়ে কাক ডেকে করল তাদের পদপিষ্ঠ।
যাকাত, খয়রাত মিলল নাতো, বাড়ি ফিরলো শূন্য লাশ
দান করিয়া বেহেশত পাবে, বেহেশত পাবার কত আশ!
এতই তাদের দিবি যদি, ছিল না তোর গভীর রাত?
এক হাতের মানব প্রেম জানত নাতো অন্য হাত।
এক জানিত নেওনেওয়ালা আর জানিত তোমার রব
আকাঙ্খিত বেহেশত পাবার দূর হইত বাধা সব।
ডাক পিটিয়ে দান করিয়া জানান দিলি 'দানশীল'?
দেখিস, দান তোর দানব হয়ে তোরি কপালে মারবে কিল!
ধরবে নায়ে শ'খানেক ভরলো তিন গুন ঠাসিয়া
মহুর্তে পদ্মার জলে দুইশ গেল ভাসিয়া।
একটু শক্ত আইন যদি থাকত সেদিন পদ্মা পাড়
বাতাস ভারি করতো না শত মায়ের হাহাকার।
আহা! কি চমৎকার দেখা যায়,
বাংলাদেশের সিনেমায়।
থানা-পুলিশ, আইন -আদালত শুভোংকরের ফাকি
এসো, লাশের খূনে ক্যানভাসে সোনার বাংলা আঁকি।
পিনাক পতি বড় অতি টুটা আইনের সাধ্য কি
ঝাপটে ধরে মানুষ খেকো রক্তে ভেজা লাল টুটি।
থানা আছে পুলিশ আছে মাঝখানেতে বাজার
খুন করে গেল দু'জন দেখল হাজার হাজার।
বিষ-বর্শায় মারছে কত মারছে গাড়ি চাপায়
পিচ পথে পৃষ্ট দেহ পা দুখানি দাপায়।
হায় কিছুই করার নেই
করছে খুন যেমনে পারে যেই।
হাটতে গিয়ে লাগলে পায়ে আরেক জনের পা
অমনি করে জ্বলে উঠে অগ্র জনের গা।
কোমরে থাকলে তার ছুড়ি পিস্তল গোঁজা
ট্রিগার টেনে বুকের মাঝে এঁটে দেবে সোজা।
যেন মুরগি খেল চাল
পিষ্ঠদেশে মারছে জোরে শক্ত গাছের ডাল।
প্রতি দিন ঝরে পড়ে হেথায় তথায় শিশুর লাশ
রশির কেন এত অভাব পরাতে খুনির গলায় ফাঁস?
রশি পাকাতে আইন কানুনের থাকে যদি এত ভয়
লারকি করে ওসব আইন উনুনে গুজো তয়।
সন্তান আমার খুন করিয়া অট্ট হাসবে খুনির দল
আমি পাঠা সারা জীবন ফেলব কেবল চোখের জল?
আইনের দ্বারে বিচার চেয়ে কাঁদব দিবারাত্রি?
কি অসহায় স্রোতের শেওলা হায়রে বাঙলা জাতি।
পঁচাত্তরের পিতার খুনি আজো বেড়ায় বিশ্ব ঘুরে
আমি অদম হতভাগা পারিনি তাদের আনতে ধরে।
চার চাচাকে করল খুন জেলের ভেতর কুপিয়ে
চার যুগ ধরে শোকে তাঁদের কাঁদছি আজো ফুঁপিয়ে।
বার তের হলে দিনে মাসে তিনশ আশি
হতেতো দেখিনা খুনের বছরে চার ফাঁসি।
যদিওবা হয় দু'য়েক বছর কুড়ি পরে
কেঁদে কেটে শোক সম্পদ সবই যায় ঝরে।
উনবিংশে করল খুন ধারালো কাঁচি দিয়ে
একবিংশে হবে বিচার খুনির কবরে গিয়ে?
মাঝখানেতে এক শতাব্দী খাবে চেটে গিলে
পুলিশ-দারোগা, উকিল-মোক্তার, বিচারপতি মিলে।
একটা কেন পদ্মা সেতু, চল্লিশটাতেও লাভ নাই
সেতুর শোভা না দেখিয়া মরে যদি আমার ভাই।
সেতু চড়ে দেখতে যাবে জন্মভূমি ফরিদপুর
না জানি গাড়ি চাপায় মরতে হয় বিক্রমপূর।
খুনাখুনির মহোৎসব চলছে সারা দেশেময়
যেন কসাইখানা পুরো দেশেটা, পিতার সোনার বাংলা নয়।
'আইন ইলিশ' 'ক্রাইম কুমির' বাংলাদেশের নদীতে
বিচারপতি লাভ কি তোমার থেকে পাক গদিতে?
অপরাধীর সাজা দিতে এতই যদি অল্প বল
কালো কোট পড়ে কেন জাতির সাথে করছ ছল?
কলম যদি না হয় তোমার মানব রক্ষার হাতিয়ার
তুলে দাও তা শিশুর হাতে, কার্টুন আঁকবে খাতায় তার।
খুনির ফাঁসি দিতে হবে খুন শুকনোর আগে
কানুন সাজাও তেমন করে যেথায় যেমন লাগে।
পকেট ভারি বন্ধ করো আইন বাড়ির লোক
মানবতার চশমা পড়ুক তোমার দুটি চোখ।
'বিচারপতি' করেছে তোমায় আরেক বিচারপতি
তাঁর এজলাশে যেতে হবে সময় অল্প অতি।
সেদিন আসামির কাঠগড়াতে থাকবে তুমি দাঁড়িয়ে
উকিল মোক্তার আসবে না কেউ হাতটি সেদিন বাড়িয়ে।
জোরের খেলা রং-তামাশা বন্ধ করো ভাই
একটি খুনের সাথে সাথে তিনটি ফাঁসি চাই।
জীবন দিলেন আল্লাহ তায়ালা, নিবে শেয়াল কূকুরে
এমন কুত্তা রাখব না একটাও বাংলা পুকুরে।
এমন আইন করো পয়দা এই বাংলার জমিনে
খুন করাতো দূরের কথা ঢিলও ছুঁড়বেনা কমিনে।
(চলবে)