ময়না কাঁটার তীর ঘেষে আমার ছোট গাঁ
একটুখানি পা বাড়িয়ে তোরা দেখে যা।
শাপলা শালুক বিলে ঝিলে, গাছে ফুটে ফুল
ডুমুর ডালে দোল খেতে কেউ করনা ভুল।
বালু তীরে দল বেঁধে গড়ব বালুর নীড়
কতজনা তা দেখতে এসে করবে ভীড়।
এ গাঁ থেকে ও গাঁ যাব সাঁকোর পিঠে চড়ে
কেউবা আবার বাঁধ সাধবে পা পিছলে পড়ে।
মাছ ধরতে যাব পাশের বড় দোয়ালী খালে
টেংরা, পুটি, ভেটকি, বোয়াল পরবে কত জালে।
শিংয়ের কাঁটা শূল ফুটাবে হয়তো তোমার পায়
আদর করে মরিচ বাটা লেপে দেবে মায়।
ওষধ পেয়ে কামড় মেড়ে ব্যাথা যাবে চলে
মাছ ধরা ছাড়বে নাকো ভয় পেয়েছ বলে।
চাও যদি শিখিয়ে দেব শূল বিরোধী বান
এক নিঃশ্বাসে মন্ত্র পড়ে মেরে এক টান;
লাউয়ের চুল ছিঁড়ে মাজায় বাঁধতে পার যদি
নিরাপদ হবে তোমার শিং-টেংরার নদী।
ধান কুুড়িয়ে এনে দেব দাদু বুজির হাতে
সন্ধ্যা বেলা চিড়ে কুঁটে মা দেবে তা পাতে।
ঝোলা গুড়ে হাত মাখিয়ে খাব চেটেপুটে
কাড়া কাড়ির পালায় পড়ে কেউ পাবেনা মোটে।
আড়াল হতে মা তা দেখে ডাকবে ঈশারায়
বন্ধ ঘরে একেলা তাকে দেবে পুনরায়।    
তাই দেখে হিংসে করবে বাকি সকলে,
“আচ্ছা করে দেখাব মজা কাল বিকেলে;
মটরশুটি পুড়ে খাব তোমায় না বলে
দেখবে তখন একেলা খাওয়ার মজা কাকে বলে।”
এমনি করে বেলা শেষে সন্ধ্যা হলে পরে
ভুল করেও কেউ আবার ফিরব নাকো ঘরে।
হালোট মাথায় বসে সবে গাঁথব সূরের মালা
তোমার শেষে আমি,আমার শেষে তার পালা।
কেউ দেবে জারি-সারি, কেউ ভাটিয়ালি সূর
দখিনা বাতাসে ভেসে তা যাবে বহুদূর।
সেই সূরের মর্মকথা বুঝতে মোরা নারি
যে বুঝিবে হয়তো তাহার বুকখানি যাবে ফাড়ি।
পুত্র হারা মায়ের বুকে বিঁধবে শীলের মত
সদ্য বিয়ে দেওয়া কন্যার পিতার বুকেও তত।
ভর রাত্রিতে ভয় পেলে শিয়ালের ডাক শুনে
বাম হাতের তালুতে খেলে ডর সারাবে নুনে।
তাতেও যদি কাজ না সারে তোমায় সাথে নিয়ে
কৈতম পড়া আনবে মায়ে হুজুর বাড়ি গিয়ে।
এমনিভাবে ডরে ভয়ে রাত্রি পার করে
সকাল বেলা চলে যাব ‘আড়িয়াল খা’র চরে।
নল-খাগড়া আর চুইন্যা কাশি কেটে কাড়ি কাড়ি
মাথায় করে গো-খাদ্য নিয়ে আসব  বাড়ি।
এত কাজ দেখে বাবা গামছার গিটু খুলে
দুই টাকার দুই খানি নোট হাতে দেবে তুলে।
বুধবার সকাল বেলা যাব মিয়ার হাটে
রঙিন সুতায় গামছা বুনে রাখবে পাটে পাটে।
খান তিনেক কিনে তা লইব মাজায় বাঁধি
খানিক পরে দেব তোমায় পাছে কস্ট পাও যদি।
কখনো তা মাজায় বেঁধে কখনো তা মাথায়
খানিক খেলব বৃক্ষ ডালে খানিক জল কাদায়।
ময়নাকাটার কাদার তলে শালুক সারি সারি
চাও যদি তা এনে দেব নিয়ে যাবে বাড়ি।
তুমি খাবে আর খাওয়াবে বন্ধুদের ডেকে
একলা যেন খেওনাকো তাদের বাদ রেখে।
ভুল করনা বলতে গাঁয়ের গল্প খানি যেন
এযে আমার স্বর্গ সম একথাটি মেন।
স্বর্গ যদি পাই আমি কোন ভাগ্য গুনে
সেখানেতেও গাঁয়ের কথা পড়বে আমার মনে।
বলব আমি তাঁর সমীপে ,“ওহে দয়াময়,
এ খানেতে গাঁ খানি মোর এনে দাও আমায়।”
স্বর্গ বল জান্নাত বল সবই আমার মিছে
এসব কিছু পড়ে থাকবে আমার গাঁয়ের পিছে।
দুপুর রোদে শেখের ভিটায় আম কাঠালের ছায়ে
কলা পাতার বিছানা পেতে থাকব সবে শুয়ে।
লুকোচুরি খেলব সবে শর্ষে-কলাই ক্ষেতে
সকাল-দুপুর, বিকেল-সন্ধ্যা থাকব খেলায় মেতে।
এমনি করে দিন দশেক আমার সাথে খেলে
আবার চলে যাবে তুমি আমায় একা ফেলে।
দল বেঁধে বিদায় দিতে যাব সড়ক টানে
খিড়কি খুলে মা তাঁকিয়ে থাকবে তোমার পানে।
মনে মনে কবে,“যাদু ভাল থাকিস ঘরে
মায়া বুক ভরাতে মায়ের এসো বছর পরে।”
বন্ধু তোমার বিদায় বেলা কাঁদব নাকো আমি
অশ্রু আমার দেখে পাছে কস্ট পাও যদি তুমি।
কাঁদবে আমার হ্যদয় রাজ্য, কাঁদবে আমার মন
তোমার স্মৃতি আমার মনে থাকবে যতক্ষণ।।
কাশিমপুর/০৪,০৭,১০