আমার মা কবিতা বোঝেন না
তিনি বোঝেন যাপন।
মুক্তক কিংবা স্বরবৃত্ত
ছন্দ মা বোঝেন না
তিনি বোঝেন মধ্যবিত্তের আর্তনাদ।
ধ্বনি কিংবা ছন্দের গৎ বাধা ছক
আমার মা বোঝেন না
তিনি বোঝেন, কোন ঋতুতে রোপন করতে হয় ধানের চারা।
তিনি বোঝেন, জমির কোন প্রান্তে স্থাপিত হয় কাকতাড়ুয়া।
কোনো সম্ব্রান্ত বাংলা শব্দ
আমার মা বোঝেন না
তিনি বোঝেন ঘর গৃহস্থালি।
তিনি বোঝেন, কতদিন পরে গাভীর বাঁটে নামবে নহর দুগ্ধ পানা
তিনি বোঝেন, কত দিন পরে ডিম ফুটে বের হবে মুরগী ছানা।
আমার মা কবিতা বোঝেন না
তিনি বোঝেন শিক্ষিত হবার প্রয়োজনীয়তা,
তিনি বোঝেন মুক্তির স্বাদ, স্বাধীনতার হতাশা।
আমার মা কবিতা বোঝেন না।
তিনি বোঝেন, কোন কালে ভীটে জমিতে ফলে কোন ফসল?
তিনি বোঝেন, কিসের দাবীতে অশ্রু ভেজা হচ্ছে মফস্বল ।
তিনি বোঝেন, মাটিতে লেগে থাকা শোসিতের রক্ত।
আমার মা কবিতা বোঝেন না।
তিনি বোঝেন, আধুনিকতার নামে শিক্ষার পরিহাস।
তিনি বোঝেন, উন্নয়নের নামে গণতন্ত্রের লাশ।
আমার মা কবিতা বোঝেন না।
প্রতি বছর বইমেলা থেকে আমার বই বের হয়।
প্রতি দিন কোনো কাগজে কিংবা ওয়েব পোর্টালে
প্রকাশিত হয় প্রতিনিয়ত কোনো না কবিতা।
কিন্তু ওসবে আমার মায়ের কোনো ভ্রু-ক্ষেপ নেই।
একদিন বিকেলে ইছামতি নদীর কোল ঘেষা গ্রামে
গায়ে গোধুলি রং মাখা মা আমাকে বললেন,
“কি লিখিস রে ও সব?
যেখানে
ফসলের হাসি নেই।
রাখালের বাঁশি নেই।
যেখানে
হত্যার প্রতিবাদ নেই।
ঘরছাড়াদের আর্তনাদ নেই।
অশ্রুর ফোঁটা নেই।
গণতন্ত্রের দাবী নেই।
কি লিখিস রে ও সব?”
আমার চোখে তখন ঘোর অন্ধকার।
আমার বিবেক ও বোধের আগুনে তখন পুড়ছে
আমারই প্রকাশিত শত শত কবিতা।
যে কবিতা মানুষের কথা বলে নি।
যে কবিতা মুক্তির কথা বলে নি।
মস্তিস্ক জুড়ে তখন কোনো প্রশ্ন ছিল না।
এক বার ও মনে হয় নি
ক্লাস সেভেন পাশ করা মা
কিভাবে জানলো এখন মানবতা নিঃস্ব।
জানি, মায়েরা কখনো মূর্খ হয় না।
আমি আর কবিতা লিখি না।
আমি আর কখনো কবিতা লিখি নি।
এখন আমি লিখি এবড়ো থেবড়ো শব্দের বিন্যাস।
আমার মধ্যবিত্ত জীবনযাপন, আমার ঘরগৃহস্থালি।
উৎসর্গঃ মা।