শৈশবে সকলের একটা স্বপ্ন থাকে-
পার্থিব জগতে দেখা যায় মানুষ
শৈশবে হতে চেয়েছিলো খেলোয়াড়
বড় হয়ে হলো অন্য কারো ফলোয়ার,
কিংবা কেউ কেউ হয়েছে জানোয়ার।
যারা আজ জগৎ বিখ্যাত
তাদেরও একটা স্বপ্ন ছিলো,
সেই স্বপ্নের হাত ধরে তারা সামনে চলে-
পৃথিবীতে খ্যাতি অর্জন করেছে।
আমি জগৎ বিখ্যাত কেউ নই
তবে আমিও স্বপ্ন দেখেছিলাম।
৭ম শ্রেনীতে পড়ার সময়ে-
ডাক্তারদের সাদা ড্রেস দেখে-
মেডিকেলে পড়ার খুব ইচ্ছা হয়েছিল,
কী ধব ধবে সাদা অ্যাপ্রন !
দুস্থ মানুষের সেবা করবো বলে
সেই শিশু বয়সেই শপথ নিয়েছি।
তারপর ৯ম শ্রেণিতে উঠে-
সৈনিক হওয়ার স্বপ্ন জাগলো,
বীরদের সাহস আর দেশ প্রেম
খুব করে আমাকে টানলো।
মনে হচ্ছিল অস্র হাতে যুদ্ধ করছি
যুদ্ধ করে দেশ রক্ষা করে চলছি।
কিছু দিন পর, মনে হলো
আমার কোন ইচ্ছা বা লক্ষ্য নেই,
হঠাৎ ১০ শ্রেণিতে থাকা অবস্থায়
খাতা ভরে ফেলি আঁকা ঝোকা করে ।
গ্রাম-গঞ্জ, নদী-নালা, গাছ-পালা , পাহাড়-পর্বত
এগুলোই ছিলো আঁকার বিষয়বস্তু।
বরাবরই প্রকৃতি আমারে টানে-
প্রাণহীন এই ইট কাঠের খাঁচায়
দম বন্ধ হয়ে আসতো,
এইস.এস.সি পাসের পর-
চারুকলায় ভর্তি হবো ভেবেছি।
কিন্তু হয়ে উঠেনি,
তুমুল স্ট্রাগল করেছি, জানিনা সামনে কী -
সেই সময়ে জীবনের মোড় ঘুরে গেল,
বন্ধুরা বললো -
চারুকলায় পড়লে না খেয়ে মরতে হবে।
তাই চারুকলায় পড়ার চিন্তা বাদ দিয়ে -
ভর্তি হয়েছি অর্থনীতিতে অনার্স।
ভাবনা একটাই ছিল,
টাকা রোজগারে নামতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের পাঠ চুকিয়ে -
২৭ পেরিয়েই চাকুরী শুরু করি,
যাকে বলা যায় আধুনিক গোলাম
গোলামি করতে গিয়ে বুঝেছি
ক্যারিয়ার নামক বিষয়টাই আসলে সব।
বাস্তবে দেখেছি, অর্থ কথা বলে!
অর্থ না থাকলে সকলে করুণা করে
প্রতিষ্ঠিত হতে গেলে অর্থের বিকল্প নেই।
তাই ৩৩ পেরিয়ে অন্যের দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়ে-
নিজেই হয়ে উঠেছি অর্থ কামানোর মেশিন।
সেই থেকে অর্থ কামাই করে চলছি।
জীবন বড় অদ্ভুত!
জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ;
নিজের জীবনের সকল গ্লানি
দেহের বোঝা, নিজেকেই টানতে হয়।
প্রাণহীন শহরে দম বন্ধ হয়ে আসতো বলে -
সময় পেলেই, অর্থ জমিয়ে-
পাহাড়-পর্বতে হাওর-বাওরে ছুটে চলেছি।
এরপর আর বাঁধতে পারেনি কেউ
পাহাড় আমাকে সারাক্ষন ডাকে।
কখনো প্রথাগত জীবন ভালো লাগেনি
আর সবার মতন বিয়ে কর,
সন্তান নাও, সংসার সামলাও
একসময় মরে যাও -
এই নিয়ম মানতে ইচ্ছা হয় নাই।
নিজের মত করে চলতে চেয়েছি
কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারিনি!
নিজের মতন করে বাঁচা হয়ে উঠেনা
এখানে প্রতিটি পদে পদে-
প্রতিটি সময়ে কম্প্রোমাইজ করতে হয়।
কখনো সময়ের সাথে
কখনো পরিবারের সাথে
কখনো নিজের সাথে।
মধ্যবিত্ত জীবনের বড় দুর্বল দিক এটা
নিজের মতন করে কিছুই হয়ে উঠেনা।
তবুও মনের সুখে ঘুরি দেশের আনাচে কানাচে এখনো সময় পেলে বের হয়ে পড়ি,
সুন্দর জায়গা গুলো ক্যামেরায় ধরে রাখি।
তাই বলে, আমি ফটোগ্রাফার নই
আমি সুন্দরের পূজারী।
যা কিছু সুন্দর, তা আমাকে আকৃষ্ট করে -
তা সে ছবি হউক বা কবিতা
গান অথবা কোন তৈলচিত্র।
একটা আফসোস রয়ে গেল -
না হতে পারলাম কবি ,
না ফটোগ্রাফার,
না ট্রাভেলার
না বিশাল ধনকুবের বা প্রভাবশালী।
শুধুই বয়ে চলি জীবনের পান্ডুলিপি।
----------------------০---------------------
সময়ঃ সকাল ১০:৩০ ঘটিকা
তারিখঃ ১২/০৩/২৫
স্থানঃ কলেজ রোড, কলমাকান্দা।