রণমদে মত্ত সাজে রক্ষঃকুলপতি;-
হেমকূট-হেমশৃঙ্গ-সমোজ্জ্বল তেজে
চৌদিকে রথীন্দ্রদল; বাজিছে অদূরে
রণবাদ্য; রক্ষোধ্বজ উড়িছে আকাশে,
অসংখ্য রাক্ষসবৃন্দ নাদিছে হুঙ্কারে।
হেনকালে সভাতলে উতরিলা রাণী
মন্দোদরী,শিশুশূণ্য নীড় হেরি যথা
আকুলা কপোতী,হায়; ধাইছে পশ্চাতে
সখীদল। রাজপদে পড়িলা মহিষী।
যতনে সতীরে তুলি, কহিলা বিষাদে
রক্ষোরাজ,–“বাম এবে,রক্ষোকুলেন্দ্রাণি;
আমা দোঁহা প্রতি বিধি; তবে যে বাঁচিছি
এখনও,সে কেবল প্রতিবিধিৎসিতে
মৃত্য তার; যাও ফিরি শূন্য ঘরে তুমি;–
রণক্ষেত্রযাত্রী আমি,কেন রোধ মোরে?
বিলাপের কাল,দেবি,চিরকাল পাব;
বৃথা রাজ্যসুখে,সতি,জলাঞ্জলি দিয়া,
বিরলে বসিয়া দোঁহে স্মরিব তাঁহারে
অহরহঃ। যাও ফিরি; কেন নিবাইবে
এ রোষাগ্নি অশ্রুনীরে,রাণী মন্দোদরি?
বনসুশোভন শাল ভূপতিত আজি;
চূর্ণ তুঙ্গতম শৃঙ্গ গিরিবরে;
গগনরতন শশী চির রাহুগ্রাসে;”
ধরাধরি করি সখী লইলা দেবীরে
অবোরোধে; ক্রোধভরে বাহিরি,ভৈরবে
কহিলা রাক্ষসনাথ,সম্বোধি রাক্ষসে;–
“দেব-দৈত্য-নর-রণে যার পরাক্রমে
জয়ী রক্ষ-অনিকনী; যার শরজালে
কাতর দেবেন্দ্র সহ দেবকুল-রথী;
অতল পাতালে নাগ,নর নরলোকে;–
হত সে বীরেশ আজি অন্যায় সমরে,
বীরবৃন্দ;চোরবেশে পশি দেবালয়ে,
সৌমিত্রি বধিল পুত্রে,নি্রস্ত্র সে যবে
নিভৃতে; প্রবাসে যথা মনোদুঃখে মরে
প্রবাসী,আসন্নকালে না হেরি সম্মুখে
স্নেহপাত্র তার যত–পিতা,মাতা,ভ্রাতা,
দয়িতা মরিল আজি স্বর্ণ-লঙ্কাপুরে,
স্বর্ণলঙ্কা-অলঙ্কার;বহুকালাবধি
পালিয়াছি পুত্রসম তোমা সবে আমি;–
জিজ্ঞাসহ ভূমন্ডলে,কোন বংশখ্যাতি
রক্ষোবংশখ্যাতি-সম? কিন্তু দেব নরে
পরাভবি, কীর্ত্তিবৃক্ষ রোপিনু জগতে
বৃথা; নিদারুণ বিধি,এতদিনে এবে
বামতম মম প্রতি; তেঁই শুকাইল
জলপূর্ণ আলবাল অকাল-নিদাঘে;
কিন্তু না বিলাপি আমি। কি ফল বিলাপে?
আর কি পাইব তারে? অশ্রুবারিধারা,
হায় রে দ্রবে কি কৃতান্তের হিয়া
কঠিন? সমরে এবে পশি বিনাশিব
অধর্মী সৌমিত্রি মূঢ়ে, কপট-সমরী;–
বৃথা যদি যত্ন আজি, আর না ফিরিব–
পদার্পণ আর নাহি করিব এ পুরে
এ জন্মে; প্রতিজ্ঞা মম এই, রক্ষোরথি;
দেবদৈত্যনরত্রাস তোমরা সমরে,
বিশ্বজয়ী; স্মরি তারে,চল রণস্থলে;–
মেঘনাদ হত রণে, এ বারতা শুনি।
কে চাহে বাঁচিতে আজি এ কর্ব্বুরকুলে,
কর্ব্বুরকুলের গর্ব মেঘনাদ বলী”