রসাল কহিল উচ্চে স্বর্ণলতিকারে;---
''শুন মোর কথা, ধনি, নিন্দ বিধাতারে।
             নিদারুণ তিনি অতি;
             নাহি দয়া তব প্রতি;
তেঁই ক্ষুদ্র-কায়া করি সৃজিলা তোমারে।
             মলয় বহিলে, হায়,
             নতশিরা তুমি তায়,
মধুকর- ভরে তুমি পড় লো ঢলিয়া;
             হিমাদ্রি সদৃশ আমি,
             বন-বৃক্ষ-কুল-স্বামী,
মেঘলোকে উঠে শির আকাশ ভেদিয়া!
    কালাগ্নির মত তপ্ত তপন তাপন,---
       আমি কি লো ডরাই কখন?
             দূরে রাখি গাভী-দলে,
             রাখাল আমার তলে
             বিরাম লভয়ে অনুক্ষণ,---
শুন, ধনি, রাজ-কাজ দরিদ্র পালন!
আমার প্রসাদ ভুঞ্জে পথ-গামী জন।
            কেহ অন্ন রাঁধি খায়
            কেহ পড়ি নিদ্রা যায
                      এ রাজ চরণে।
            শীতলিয়া মোর ডরে
            সদা আসি সেবা করে
মোর অতিথির হেথা আপনি পবন!
মধু-মাখা ফল মোর বিখ্যাত ভূবনে!
           তুমি কি তা জান না ললনে?
           দেখ মোর ডাল-রাশি,
           কত পাখী বাঁধে আসি
                           বাসা এ আগারে!
           ধন্য মোর জনম সংসারে!
কিন্তু তব দুখ দেখি নিত্য আমি দুখী;
নিন্দ বিধাতায় তুমি, নিন্দ, বিধুমুখি!''
যুদ্ধার্থ গম্ভীরতার বাণী তব পানে!
           সুধা-আশে আসে অলি,
           দিলে সুধা যায় চলি,---
কে কোথা কবে গো দুখী সখার মিলনে?''
         ''ক্ষুদ্র-মতি তুমি অতি''
           রাগি কহে তরুপতি,
''নাহি কিছু অভিমান?ধিক্ চন্দ্রাননে!''
নীরবিলা তরুরাজ; উড়িল গগনে
যমদূতাকৃতি মেঘ গম্ভীর স্বননে;
           আইলেন প্রভঞ্জন,
           সিংহনাদ করি ঘন,
যথা ভীম ভীমসেন কৌরব-সমরে।
আইল খাইতে মেঘ দৈত্যকুল রড়ে;
          ঐরাবত পিঠে চড়ি
          রাগে দাঁত কড়মড়ি,
ছাড়িলেন বজ্র ইন্দ্র কড় কড় কড়ে!
ঊরু ভাঙ্গি কুরুরাজে বধিলা যেমতি।
                          ভীম যোধপতি;
          মহাঘাতে মড়মড়ি
          রসাল ভূতলে পড়ি
                         হায়, বায়ুবলে
হারাইয়া আয়ু-সহ দর্প বনস্থলে!
ঊর্দ্ধশির যদি তুমি কুল মান ধনে;
করিও না ঘৃণা তবু নীচশির জনে!
এই উপদেশ কবি দিলা এ কৌশলে।।