(১)

              কোথা রে রাখাল-চূড়ামণি?
গোকুলের গাভীকুল,          দেখ,সখি,শোকাকুল,
              না শুনে সে মুরলীর ধ্বনি!
   ধীরে ধীরে গোষ্ঠে সবে পশিছে নীরব,—
   আইল গোধূলি, কোথা রহিল মাধব!

(২)

              আইল লো তিমির যামিনী;
তরুডালে চক্রবাকী         বসিয়া কাঁদে একাকী--
              কাঁদে যথা রাধা বিরহিণী!
   কিন্তু নিশা অবসানে হাসিবে সুন্দরী;
   আর কি পোহাবে কভু মোর বিভাবরী?

(৩)

             ওই দেখ উদিছে গগনে—
জগত-জন-রঞ্জন—                সুধাংশু রজনীধন,
             প্রমদা কুমুদী হাসে প্রফুল্লিত মনে;
   কলঙ্কী শশাঙ্ক, সখি, তোষে লো নয়ন--
   ব্রজ-নিষ্কলঙ্ক-শশী চুরি করে মন।

(৪)

            হে শিশির, নিশার আসার!
তিতিও না ফুলদলে         ব্রজে আজি তব জলে,
            বৃথা ব্যয় উচিত গো হয় না তোমার;
    রাধার নয়ন-বারি ঝরি অবিরল,
    ভিজাইবে আজি ব্রজে—যত ফুলদল!

(৫)

             চন্দনে চর্চ্চিয়া কলেবর,
পরি নানা ফুলসাজ,           লাজের মাথায় বাজ;
            মজায় কামিনী এবে রসিক নাগর;
     তুমি বিনা, এ বিরহ, বিকট মূরতি,
     কারে আজি ব্রজাঙ্গনা দিবে প্রেমারতি?

(৬)

           হে মন্দ মলয় সমীরণ,
সৌরভ ব্যাপারী তুমি,       ত্যজ আজি ব্রজভূমি--
           অগ্নি যথা জ্বলে তথা কি করে চন্দন?
    যাও হে, মোদিত কবলয় পরিমলে,
    জুড়াও সুরতক্লান্ত সীমন্তিনী দলে!

(৭)

          যাও চলি, বায়ু-কুলপতি,
কোকিলার পঞ্চস্বর                 বহ তুমি নিরন্তর--
         ব্রজে আজি কাঁদে যত ব্রজের যুবতী!
    মধু ভণে, ব্রজাঙ্গনে, করো না রোদন,
    পাবে বঁধু---অঙ্গীকারে শ্রীমধুসূদন!


(ব্রজাঙ্গনা কাব্য)