(গত শরৎ কালের কোন এক মেঘাচ্ছন্ন সকালের আমার ভাবনা)

শরৎ কাল, বৃষ্টি ভেজা সকাল
কর্দমাক্ত পথ, স্যাঁতসেঁতে চারপাশ
গম্ভীর প্রকৃতি মেঘাচ্ছন্ন আকাশ।
প্রভাত প্রার্থনা শেষে প্রাতঃ ভ্রমণ যথা
বিষণ্ণ প্রকৃতি বলে মোরে
তার যত বেদনার কথা।
চলেছি দু’জন গ্রাম্য পথ ধরে
কাক ডাকা ঐ ভোরে,
দুঃখের কথা বলছে সে বারংবার
শ্রবণে তা পেরিয়ে বট ধার
গিয়ে পৌঁছলাম মোরা তটণীর পার।
দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে প্রশ্ন,  কী দেখছ!
হ্যাঁ, নদী আমার খুব প্রিয়
কিন্তু তুমি কি লক্ষ করছো !
সে আর আগের মত নেই
তার সৌন্দর্য যেন ফেলেছে হারিয়ে
কচুরি পানা আর দুর্গন্ধময় আবর্জনায়
দু-কুল গেছে তার ছেয়ে।
ঠিকই বলেছো তুমি,
তাই দেখেই তো ব্যথিত আজ আমি।
ও আমার আদরের বড় মেয়ে
পর্বত তার মাতা, ঝর্ণা তার বোন
সাগর তার পতি, বৃষ্টি মোর নাতি।
স্বামীর প্রেম টানে শক্তি নিয়ে বানে
তোমাদের শত বাঁধা পেরিয়ে
ছুটে চলেছে সে অবিরাম বয়ে।
মিলন মোহনায় তারা করে আলাপন
প্রিয়তম, জানায় তোমায় স্বাগতম
কি নিয়ে মোর ঘরে, করলে আগমন।
মলিন হয় তার মুখখানি
বলে, বর্জ্য আবর্জনা, দাহ্য পদার্থ
আর সামান্য কিছু মিঠা পানি।
ক্ষুব্ধ তার স্বামী! সামান্য মিঠা পানি!
ক্ষমা কর পতি অবরুদ্ধ মোর গতি
ময়লা আবর্জনায় আর বালু কণায়
মোর শিরা উপ-শিরা গুলো গেছে আজ ভরে
জানিনা কখন জানি আমিও যাবো মরে।
ক্রোধে গর্জে উঠে সে ছাড়ে হুংকার
এই বুঝি লোকালয়ে ঢুকে সব করবে চুরমার।
মেয়ে চলে বুকে নিয়ে নিদারুণ কষ্ট
তাই দেখেই হয় মোর মাথাটা নষ্ট।
তাইতো আজ আমি দারুণ বিষণ্ণ
বলোনি তো তাই প্রকৃতি তুমি এক অনন্য।

আদুরে কন্যার এই দুঃখ কী শুধু তাই
আরও তীব্র যন্ত্রণা রয়েছে জমা মোর ভাই।
শুনবে কী বলো, তবে মোর সাথে চলো
পদ্মা পাড়ের জীর্ণ পথ ধরে
চলি মোরা এক পা, দু -পা করে
থামিয়ে মোর চলন্ত গতি
যন্ত্রণার বর্ণনা করে প্রকৃতি।

ঐ যে,  দেখো সুরম্য অট্টালিকা
দেখো তার দরজা, জানালা, আলমারি
হ্যাঁ, মন নেয় সে কাড়ি,
এ যে চমৎকার এক দালান বাড়ি।
বাহারি আসবাবপত্র ঘটিয়েছে সমাহার
হাই আফসোস!
ওগুলো ছিলো সবই আমার
সবুজে মোড়ানো যত অলংকার
মালিক বল যারে সে তার হাইজাকার।  

এবার বলি শোন, ছোট্ট বৎসের কথা
স্মরণে তার হৃদয়ে অনুভূত হয় তীব্র ব্যথা।
নাতী মোর বৃষ্টি খোদা তালার অপরূপ সৃষ্টি
মেঘের ভেলায় চরে আসে তোমাদের দোরে
রিমঝিম তালে, করে সে নৃত্য, ঘুরে তার বৃত্ত
পায়ে দিয়ে নূপুর, সকাল সন্ধ্যা দুপুর
মামার সাথে মিশে হইত ভরপুর।
ভাগ্নিরে পেয়ে করে সে উচ্ছ্বাস
মৎস কুল দেখে তা করে সব উল্লাস।
কলমি লতা দোলে মোর বৎসের কোলে
দখিনা বাতাসে সে, হাসে আর খেলে।
ফোটাত শাপলা আরও ফোটাত শালুক
তাতেই শোভা পেতো তোমাদের মুলুক।
এখন সে কোথায়? চিনেছি আমি তারে,
গুর গম্ভীর কণ্ঠে, কান্না জড়িত স্বরে
দালান বক্ষে ধরে শুয়ে আছে সেথায়।
নির্দয় তোমারা রাখোনি তার খবর
নির্মম ভাবে তারে জ্যান্ত দিয়েছো করব।
সঙ্গী ছিলো যত বিল ঝিল আর নালা
ভাগ্নিরে লয়ে তারা খেলতো সারাবেলা।
জবর দোস্তি করে, করেছো তাদের ভরাট,
অবরুদ্ধ করে চিপে ধরেছ তার সুদীর্ঘ ললাট।
ময়লা আবর্জনার স্তূপে তাদের করেছ স্তব্ধ,
মৃত লাশ তারা আজ ছড়ায় শুধু দুর্গন্ধ।
ছেলে হারা বেদনায় করি আমি আত্ম চিৎকার
হাহাকার করে জানায় তোমাদের ধিক্কার।
ভেবো নাকো তুমি আছি আমি নিবর
আমার দুষ্ট ছেলের দল হয়েছে আজ সরব
ঝড়, ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাস, ভূকম্প, খরা
খোদার দেওয়া শক্তির এক মহা বলায়
আসলে তারা ঘটাবে তোমাদের মহাপ্রলয়।
আয়লা, নার্গিস, সিডর দিয়েছে তো হানা
ক্ষত-বিক্ষত হয়েছ যা তোমাদের ই জানা।
তারা বিক্ষুব্ধ, বাঁধাবে সাথে তোমাদের যুদ্ধ
জমিয়ে রেখেছে তারা মহা ক্রোধ
নিবেই নিবে তারা ভ্রাতা হত্যার প্রতিশোধ।