আশি র দশকে বিংশ শতকে
কোন এক ক্ষণে অজ্ঞাত এক সনে
করিতে ক্রন্দন ধরণীতে আগমন,
চঞ্চলা চপলা দুরন্তপনা সারাবেলা
শিশুকাল শেষে কিশোর বয়সে
হৈহুল্লোড় দ্বিধাহীন মাতামাতি সরাক্ষণ।

কিসের জীর্ণ কিসের জরা
প্রচণ্ড শীত কিংবা তীব্র খরা,
বাবার বকুনি মায়ের পিটুনি
নই আমি তাতে যেন বাঁধা ধরা।

বেড়িয়ে প্রভাতে খেয়ে পান্থাবাশি,
মুখে নিয়ে হাসি খেলতে ভালোবাসি।
হাতেরই আঙ্গুলি ধরে রেখে গাঙ্গুলী,
এ গোলির তাড়া খেয়ে ছুটেছি ওগোলি।
নিয়েছি সাথে বল, বেরিয়েছি কিশোরের দল,
তেষ্টা পেয়ে দু’হাত ভরে পিয়েছি নদীর জল।
আম্র কানন বা উন্মুক্ত রৌদ্র গগন
আমাদের খেলার মাঠ,
এক দলে সাত থেকে আট
জমিয়েছি খেলা সব করে হেলা
বাবা দেয় ঠেলা ফিরেছি যখন সন্ধ্যাবেলা।

কিশোর বয়স শেষে জীবন অষ্টাদশে
তারুণ্যের হাতছানি, ভালো-মন্দ কখনও বুঝিনি,
মন যা চাই করি আমি তাই
সীমাহীন আবেগে স্বপ্ন বুনে ছুটেছি স্ববেগে
বাস্তবতায় জীবনের মান তখনও খুঁজিনি।

অবশেষে পেরিয়ে স্নাতক
জীবন চলার সাথি খুঁজি হয়ে পাখি চাতক।
তারুণ্যের আঁকা স্বপ্ন ছিল যত,
বেকারত্বের কষাঘাতে মলিন হলো তত।

স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় যখন আমি কাতর,
অসময়ে শুয়ে থাকি গায়ে মুড়িয়ে চাদর।
তবুও স্বপ্ন বুনি বন্ধু আসবে তুমি (চাকরী)
সাথে নিয়ে ঘুরবো শত আমি,
আছে যত পৃথিবীর সু চারণ ভূমি।

যত আশা বাঁধি নিরাশ হয়ে নিরবে তত কাঁদি
এভাবে আর কত? প্রশ্ন শত শত
পাই নাতো সদুত্তর উৎরিয়ে স্নাতকোত্তর।

হতাশার সাগরে পাড়ি দিতে সাঁতারে
ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত দেহে, ভগ্ন হৃদয়ে
করি এক আত্ম চিৎকার!
তুমি আর আসবে না ভেবে
নিজেকে করি ধিক্কার।

অবশেষে সময়ের হাত ধরে এক দুই করে
দুই হাজার পাঁচ সাল,
তিমির রাত্রি কাটিয়ে উদ্ভাসিত সকাল।
এসেছে প্রতীক্ষার বন্ধু যারে পেয়ে মুগ্ধ,
উদিত রবির সোনালী রোদ মাখা রাঙ্গা প্রভাত
হতাশার দুয়ারে কষাঘাতে শুরু জীবন যুদ্ধ।

এ যুদ্ধ বড়ই কঠিন বড়ই নির্মম
বন্ধু যে আমার বড়ই অক্ষম:
সে যে বধির, অন্ধ, খোঁড়া প্রতিবন্ধী,(মাষ্টার রোল)
জীবন সংগ্রামে হয় নাতো সে কারো প্রতিদ্বন্দ্বী।

তবুও পথ চলা যাই না কাউকে বলা
আমি যে আহত সৈনিক ব্যথিত দৈনিক
যন্ত্রণায় কাতর এমনি ভাবে বারোটি বছর
স্বপ্নের পর স্বপ্ন শুধু বুনেছি
স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় হৃদয়ের আর্তনাদ শুনেছি।



আজ বন্ধু যখন শিখেছে কিছু বুলি,
বিদ্ধ আমি চাহিদা নামক রণাঙ্গনের গুলি।
বন্ধু যখন হাঁটিতেছে ধরিতে তাদের তরে
সাথে তে আমার দৌড়াচ্ছে তারা আজ দূর বহুদূরে।

বন্ধু এখন যখন আমায় স্বপ্ন দেখায়,
দেখিতে চায় না তারে যেন ভয় পায়!
বন্ধু আমার আপন তুলিতে যখন ছবি আঁকায়,
সীমিত রঙ্গে তখন তারে বিবর্ণ দেখায়।
নাহি ছিলো মোর সঠিক শিখন
কারে দুষবো আমি জানেন শুধু তিনি
এ যে আমার ভাগ্যে রই লিখন।

তিন যুগ পরে আজ শুধু মনে পড়ে
শৈশব কৈশোর আর তারুণ্যের কথা,
হারিয়ে তাদের আজ যেন লাগে ব্যথা।

জীবন অষ্টাদশে সীমাহীন মুক্ত আকাশে
ছাড়িয়েছি ডানা গুটিয়ে নয় পুরো ষোল আনা
দিগন্ত দিয়েছি পাড়ি ফিরি নিতো বাড়ি
বেরিয়ে প্রভাতে এড়িয়ে সকল মানা।

শতাব্দীর অষ্টাদশ শেষে আবদ্ধ এক দেশে
আকাশ আমার অফিসের চার দেয়াল
ঘর-বাড়ি, অফিস চারণ ক্ষেত্র আমার
প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল।

সেই আমি আর এই আমি
এসেছে কত না তফাত
বালিশ ছাড়া শক্ত শয্যায়
বেহুঁশ ঘুমে কাটিয়েছি কত রাত।
নরম আজ বিছানা নিশীথের ঠিকানা,
বৈদ্যুতিক পাখার বাতাসে এপাশ থেকে ও পাশে
তবুও সেই নিদ্রা আর আসেনা।



বলিতে নাহি লাজ কহিতেছি আজ
কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ আর পন্থাবাশি
খেয়ে পূর্ণ থালা করে নিতো এতটুকুও জ্বালা
পেয়েছি তাতেই যে স্বাদ,
কোর্মা, পোলাও আরও কত সুস্বাদু খাবার
করে এতটুকু আহার, তাতেই যেন অবসাদ,
ডাক্তার বলিতেছে এসবই আপনার বাদ।

খেতে হবে বেশি বেশি জল সাথে ওমেপ্রাজল
হয়েছি জীর্ণ ধরেছে কত জরা,
ব্যথিত আমার আপাদমস্তক গিরা।
আর বাধি নাতো দল খেলি নাতো বল
হারিয়েছি যেন আজ সকল মনবল।

প্রভুর ডাকে কভু জানি দিতে হবে পাড়ি,
ছিন্ন করে নাড়ি ফেলে রেখে বাড়ি।
মরণ যাত্রায় আসিস তোরা
কিশোরের বন্ধু আছিস যারা,
আজ তাদের মনে পড়ে
অকালেই যাঁরা গিয়েছে মারা।
করিস বন্ধু তোরা মোরে সকলে ক্ষমা
মনেতে ক্ষোভ যদি থাকে কিছু জমা।

সকলের শুভ কামনায় প্রার্থনা জানায়
মুক্ত বিহঙ্গের বন্দি দশার
কিয়ত্ বিবরণ করি অন্ত
বহতা নদীর মত সুখ দুঃখ যত
আমার এ জীবন বৃত্তান্ত।