কবিতা নিয়ে বেঁচে থাকা যাদের প্রধান উপজীব্য তারা নির্বিবাদে লিখে যেতে থাকেন একের পর এক কবিতা, কোনো আলোচনার তোয়াক্কা না করে । আর সেখান থেকেই আমরা আন্তরিক ফসলগুলো পেয়ে যাই ।
আসরের কবি সঞ্জয় কর্মকার হলেন সেই ধরনের এক কবি । কারো মাথার দিব্যি দিয়ে তিনি লিখতে আসেন নি, শুধু কবিতাকে ভালোবেসে কবিতার জগতে আসা । আর তাই তার অন্তস্থল থেকে বেরিয়ে আসে "মন মনন যদি সুস্থ না হয় তাহলে বিপ্লবের কথা চিন্তাই করা যায় না", এরকম কিছু পঙক্তি ।
ধর্ম ও ধার্মিকতা সম্পর্কে তাঁর সুস্পষ্ট মতামত : "অন্তর জাগ্রত না হলে ধর্মের লেবাস পরে লাভ কী!"
কখনো মনুষ্যত্বের অবমাননা লাগে তার কাছে অসহ্য । তাই মেকী সভ্যতাকে লক্ষ্য করে তিনি বক্তব্য রাখেন : "আহা! দাম দিয়ে খায় দামরা ছানা, বিড়াল কুকুর গোস্ত, খাম্বা খাড়া-শ্বাপদ জীব আজ ভীষণ অসন্তুষ্ট ।"
নিজ জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসার বিচ্ছুরণ ঘটে তার একাধিক কবিতায় । বঙ্গজননীর অনন্য রূপে মুগ্ধ কবি গাইছেন : "মিষ্টি মধুর রূপখানি তোর আর ধরাতে নেই উপমা ।"
আবার ইতিহাসবিশ্রুত অজয়ের ছন্দে মাতোয়ারা হয়ে বলছেন :"আলোছায়া মাতোয়ারা অজয়ের কুলু জল, হাঁটু নদী পার হয় গরু গাড়ি সারি ঢল।"
কখনো প্রেয়সীর প্রতি উচ্চারিত হচ্ছে :"কথা কিছু কিছু-সয়ে নিতে হয় সখী মনে নিতে হয় না,
কথা কিছু কিছু মেনে নিতে হয় সখী পিছু পানে চায় না।"
কবির এই সব কবিতা পড়ে বুঝতে পারা যায় কবির অনুভূতি কত প্রবল ও বহুমূখী । তবে, কবি যখন নিজের কবিতা পরের পর একই রকম "ভাবে ও ভাষাতে" লিখতে থাকেন তখন তার ভেতরে দৈনতা প্রকাশ পায় । আমার ব্যক্তিগত আশা যে কবি নিশ্চয় ওনার কবিতার প্রতি আরও বেশি যত্নশীল হবেন এবং আমাদেরকে নিজের অনুগ্রহদানে উপকৃত করবেন ।।