পুরাতন সময়ের গল্প বলে, অতীতের খামে
একদা এক মহান রাজা ছিল থিসিয়াস নামে
এথেন্সের ছিল সে অধিপতি রাজা মহাশয়
একে একে কত দেশ, দেখে তার জয়।
আকাশ তলে তার মত ছিল না বলবান
একে একে জয় করে কত দেশ ধনবান।
তার প্রজ্ঞা আর জ্ঞানের ছিল না শেষ
বুদ্ধি দ্বারা জয় করে সব আমাজন দেশ।
সেথা এক রাজ্য ইস্কেথিয়া নামে পরিচয়
সেখানের রাণী হিপোলিটার সাথে ঘটে পরিণয়
অতি হরষে, জাঁকজমক উৎসবে বীর মত্ত হয়ে
বিয়ে করে আনে হিপোলিটারে, নিজ গৃহালয়ে।
হিপোলিটার বোন এমেলিরে সাথে করে আনে
জয়জয়কার তার চারদিক, সব লোকে জানে।
মহাসমারোহে থিসিয়াস এথেন্সের পথ ধরে
তার পাশে তার সসৈন্য তার জয় জয় করে।
যদি আজ শোনাতে দীর্ঘ মনে না হত তবে
আমি বিশদে আপনাদের শুনাতাম সবে
কোন উপায়ে ইস্কেথিয়া করেছিল জয়
সেটা কত বড় যুদ্ধ ছিল তখনকার সময়!
সেটা সেই সময়ের সবচেয়ে মহাযুদ্ধ
এথেন্স আমাজন ছিল পরস্পর বিরুদ্ধ। ৮৮০
থিসিয়াস কেমনে করেছিল হিপোলিটারে অবরোধিনী
হিপোলিটা ছিল ইস্কেথিয়ার সুন্দরী সাহসী রাণী।
বলতে পারতাম বিয়ে উৎসব ভোজ সভা বিশদে
ফিরার পথে কিভাবে পড়েছিল ঝড়ের ফ্যাসাদে।
থাক, থাক, এখন সেসব কথা দিচ্ছি ছাড় ফাঁকি
স্রষ্টা জানে, আমার ক্ষেতে এখনো লাঙল চালনা বাকি।
আমার হালের বলদগুলো বড় দুর্বল বড় বেকসুর
থাক সেসব, না বলা গল্পেরই পথ এখনো অনেক দূর।
তাছাড়া যাত্রাপথে আনতে চাই না বাধা বিরক্ত
প্রতেকেরই গল্প হবে তাদের সময় মতো।
দেখতেও চাই নৈশভোজ জিততে পারে কোন গুরু?
চলো, যেখানে গল্প হয়েছিল শেষ, সেখানেই করি শুরু।
যে ডিউকের কথা বলছিলাম প্রথমান্তে
সে এসে পৌঁছিল এথেন্সের প্রায় দ্বারপ্রান্তে
বাদ্য বাজিয়ে সৈন্য সাজিয়ে সগৌরবে
সচেতনে চোখ ভরে দেখতে যাবে যবে
দেখিল জোড়ায় জোড়ায় মহিলা কোনমতে-
হাঁটু গেড়ে বসে আছে সাজানো রাজপথে
কালো পোশাক ছিল তাদের সকলের পরনে
চারদিক ভরে যায় তাদের কোলাহল ক্রন্দনে। ৯০০
এই পৃথিবীর বিশাল জীবকুলের মধ্যভাগে
এমন কান্না অনুতাপ, কেউ দেখেনি আগে।
তাদের কান্না থামার ছিল না কোনো নাম
যতক্ষণ না বীর টেনে ধরে ঘোড়ার লাগাম।
জিজ্ঞাসিল থিসিয়াস, কেন আমার মান সম্মান
কান্না আর গঞ্জনায় দিয়ে মাটি চাপা দিতে চান?
কে তোমরা, উৎসব ধূলিসাৎ করতে এসেছ দ্বারে
তোমারা কি ঈর্ষান্বিত আমার জয়জয়কারে?
অথবা কেউ কি তোমাদের করেছে অসম্মান অপমান
কালো কাপড় পরনে কেন বসে এরও কারণ দর্শান?
বলো কিসে হবে এর প্রতিরোধ প্রতিকার?
উত্তরিল, এক বয়স্ক নারী তাদের মধ্যকার-
বয়স্ক নারীটিকে মৃত পাখির মতো লাগে
সত্যি সত্যি তার প্রতি বড় করুণা যে জাগে।
উত্তরিল, বর্ষীয়সী, ও থিসিয়াস প্রভু, ডিউক দয়াময়
দেবতা দিয়েছে আপনারে সম্মান খ্যাতি গৌরর বিজয়;
দিয়েছে বিজয়ের বেশে জীবনযাপনের অধিকার
তাতে (মোটেই) মোদের নাই কোনো দুঃখ কষ্ট ভার।
অধিকিন্তু চাই প্রভু, আপনার কৃপা করুণাকর
দুর্ভাগিনীদের দয়া করুন আপনি বিজয় মহাধর। ৯২০
সুখ-সমৃদ্ধির জীবন কারো থাকে না চিরকাল
এমনি দুর্দশাপূর্ণ বেহাল আজ আমাদের কপাল;
এককালে আমরা ছিলাম ডিউকপত্নী কিংবা রাণী
এখন মোরা কপালপোড়া, সকলেই কেবল বন্দিনী।
আমরা আপনার চরণতলে, দেখতে পাচ্ছেন সব
ভাগ্যবতী দেবীর মোটেই বুঝি, হয় নাই অনুভব;
আপনার অপেক্ষায় ক্লিমেন্স মন্দিরে প্রভু আছি পক্ষকাল
আপনার উছিলায় ঘোরে যদি এই অসহায়দের কপাল।
ডিউক প্রভু রক্ষা করুন, আপনি রক্ষাকর
আপনি পারেন দুঃখ ঘোচাতে, আপনি শক্তিধর। ৯৩০
করছি চক্ষুজলে আর্তনাদ আমি হতভাগিনী
একদা ছিলাম রাজা কাপ্পানিউসের সহধর্মিণী।
থিবিসের যুদ্ধে হয়েছেন শহীদ, ধিক্কার সেই দিন-
প্রভু, সে দিন থেকে সবাই আমরা গৃহহীন।
এখন আমরা হতভাগিনী দুর্দশা অনুতাপ বেহালে
সকলে হারিয়েছি সোয়ামী থিবিস অবরোধকালে।
ভাগ্যের একি নির্মম পরিহাস
ক্রূর ক্রেয়নে আজ এই সর্বনাশ।
বৃদ্ধ ক্রূর ক্রেয়ন এখন থিবিসের রাজ অধিপতি
অবিচারে অন্ধ জালিম, ক্রোধ অতি অতি। ৯৪০
তার দানবীয় উল্লাস অত্যাচারে
নারকীয় নির্যাতন গেছে ছাড়ে।
আমাদের মৃত স্বামী শহীদদের দেহ
স্তূপাকারে রেখেছে সব, আনতে দেয়না কেহ
ক্রূর রাজা ঘৃণাভরে চালায় অত্যাচার প্রবাহ
করতে দেয় না শেষ কীর্তি কবর কিংবা দাহ।
বরং কুকুর দিয়ে খাওয়াচ্ছে লাশ ঘৃণাবশত
বর্ষীয়সী কথা শেষ হতে না হতেই- কোনমত
সবাই নতজানু হয়ে, কেঁদে ওঠে সমস্বরে
আমাদের দয়া করুন, প্রভু থিসিয়াস, করুণাকরে।
আমাদের বেদনা ছুয়ে যাক আপনার অন্তরে,
দয়ালু ডিউক যুদ্ধঘোড়া থেকে নেমে পড়ে।
দয়ালু ডিউক থিসিয়াসের হৃদয় তাদের কথা শুনে
বিষাদে ভাংগলো হৃদয় যেন তাজা তাজা খুনে..
নিজ হাতে তুলে ধরে, দিলেন স্বান্তনায়
বলিষ্ঠ কথা আর সত্য সাহসিকতায়
প্রকৃত বীরের মতো শপথে ক্রোধ
নিজ হাতেই করবে সে দুষ্টরে বধ। ৯৬০
নেবে প্রতিশোধ অত্যাচারী ক্রেয়নে
বলতে পারে যেন গ্রীসের জনগণে
থিসিয়াসের হাতেই পেয়েছে উচিত শাস্তি
মৃত্যুই হয়েছে তার আসল প্রাপ্তি।
সঙ্গে সঙ্গে বিন্দুক্ষণ কালবিলম্ব না করে
থিসিয়াস তার পতাকা দিল উড়ে
সসৈন্যে আগুয়ান থিবিসের পথে
এথেন্সে থেকে অনেক দূরে, কাছের এথেন্স হতে।
চলবে..