(ট্যাবার্ড সরাই মালিকের পরিচয়)

সরাইখানার মালিক আমাদের প্রতি ছিল অতিথিপরায়ণ,
রাতের খাবার সরাইওয়ালা নিজেই করে পরিবেশন।
রাতের খাবার ব্যবস্থা ছিল অতি উত্তম
মদটা ছিল কড়া এবং আমরা খেয়ে করি উচ্ছ্বাস উদ্যম।
সরাইখানার মালিক প্রকৃতপক্ষে ভদ্র; বিনয়ী বলে যাকে;
যে কোনো ভোজসভার, প্রধান পরিচারকের যোগ্যতা রাখে
অভিক্ষিপ্ত চক্ষুর সাথে সে মোটাতাজা দেহের অধিকারী
তার মতো যোগ্যতর, এই মহল্লায় খুঁজে পাওয়া ভারী।
তার ছিল সাহসী কথা, বিচক্ষণতা, এবং উত্তম স্বভাব
খাঁটি মানুষের কোন গুণের, তার মাঝে ছিল না অভাব।
সরাইওয়ালা একজন মানুষের মত মানুষ ছিল বটে
রাতের খাবারের পর কন্ঠে তার আমুদের ভাব ফোটে;
আনন্দ উল্লাসে সরাইওয়ালা তোলে গল্প কথার ঝড়
রাতের খাবারের পর, চুকিয়ে আমাদের হিসেবপত্তর,
সরাইওয়ালা বলে, ভদ্রমহিলা, ভদ্রমহাশয়গণ
আপনাদের সবাইকে জানাই আমার সাদর অভিনন্দন
আমি বলছি শপথ করে
আমার এই ট্যাবার্ড সরাইখানায় সারাটা বছর ধরে
দেখিনি আজকের মতো এমন আনন্দমুখর দল উদীপ্ত;
আমার উপায় জানা থাকলে, সবাইকে করতাম খুশিতৃপ্ত
ও হো এইমাত্র, আমি একটা ভেবেছি বিনোদনের ভাতি
এই ভাবনা আনন্দ দিবে কিন্তু হবে না কোনো খরচাপাতি।

আপনারা ক্যান্টারবেরিতে চলেছেন, ঈশ্বর হোন সদয়প্রীত
শহীদ মহাত্মা করুন আপনাদের যথাযোগ্য পুরস্কৃত ৭৭০
আমি ভালো করেই জানি, যাত্রা এগিয়ে যাওয়ার পথে
আপনারা গান আর গল্পগুজব করবেন একে অন্যের সাথে
কারণ ঘোড়ার পিঠে চড়ে, হয়ে- পাথরের মতো মূক;
পথ চলতে নেই কোনো আরাম, মজা কিংবা সুখ।
এবং যা বলছিলাম, আমি আপনাদের খুশি করতে চাই
আপনাদের কাছে তাই একটা খেলার প্রস্তাব জানাই
আমার কথা প্রস্তাব জেনে
সর্বসম্মতিক্রমে আমার রায় যদি আপনারা নেন মেনে
এবং আমি যা বলব তাই করবেন, মানেন এই মতামত;
তবে আগামীকাল চলতে গিয়ে ক্যান্টাবেরির পথ
শপথ আমার স্বর্গত পিতার আত্মার নাম নিয়ে  ৭৮১
চলার পথটা আমুদে না হলে, আমার মুন্ডুটাই দেব দিয়ে।
বেশী কথা না বলে, যারা রাজি, তারা উপরে তুলুন হাত।
আমাদের সিদ্ধান্ত হয়ে গেল অতি দ্রুততার সাথ।
এটা মেনে নিতে বেশী কথা, বাকবিতন্ডার হল না দরকার
বেশী আলোচনা লাগল না, সরাইওয়ালার সিদ্ধান্ত মানার
তারপর সমস্ত ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলার করলাম অণুরঞ্জন
সরাইওয়ালা বলতে লাগল, ভদ্রগণ, শুনুন দিয়ে মন
কিন্তু দোহাই, দোহাই আপনারা কেউ, সিটকাবেন না নাক
এখন সংক্ষেপে এবং পরিষ্কার ভাবে বুঝিয়ে বলা যাক-
যা আমি মনে করি, আমাদের এই তীর্থযাত্রা যাতে
আমার ট্যাবার্ড সরাই থেকে ক্যান্টারবেরি যাওয়ার পথে
চলার পথটা সংক্ষিপ্ততর যেন সকলের মনে হয়; তাই
যাওয়ার পথে এবং ফিরার পথে দুটি করে গল্প বলা চাই।
পুরনো অভিজাত অভিযানের কাহিনী যেন হয়
এবং আপনাদের যাদের কাহিনী হবে সর্বশ্রেষ্ঠময়
এই খেলার প্রেক্ষাপট দৃশ্য
নীতিবিদ্যা উপদেশে আমোদ প্রমোদে হবে সর্বশীর্ষ
আমাদের সকলের খরচে সে রাতের খাবারটা খাবে
এই সরাইখানায় যেখানে বসে আছি, এখানেই পাবে-
যখন ক্যান্টারবেরি থেকে আমরা আসব ফিরে। ৮০১
এবং আপনাদের যাত্রা সুখ আনন্দময় করার তরে
আমি আমার সমস্ত নিজ ব্যয় খরচেও হোক;
আপনাদের সঙ্গী হব এবং যাত্রাপথের পথপ্রদর্শক।
এবং চলার পথে যে মানবে না আমার বিচার ন্যায়
তাকে বহন করতে হবে তীর্থযাত্রীদের সকলের ব্যয়।
আপনারা এই বিষয়ে যদি রাজি কিংবা রাজি না হোন
বেশী কথা না বলে, আপনারা আমাকেই সরাসরি কন
কারণ যাওয়ার জন্য আমাকেও নিতে হবে প্রস্তুতি।
আমরা শর্ত মেনে নিতে নিলাম শপথ, দিলাম প্রতিশ্রুতি।
আরো স্বীকার করলাম সরাইওয়ালার নির্দেশমতো ৮১১
তীর্থযাত্রী আমরা সকলে যাত্রাপথে হব পরিচালিত।
এবং সরাইওয়ালা হবে আমাদের মালিক সরকার
আমাদের গল্পগুলো লিপিবদ্ধ করে, করবে বিচার।
এবং রাতের খাবার পরিবেশিত করবে নির্ধারিত দামে
এবং আমরা সবাই পরিচালিত হব তার ইচ্ছার নামে।
এইভাবে আমরা তীর্থযাত্রীদল সর্বসম্মতিক্রমে
সরাইওয়ালার রায় মেনে নিলাম পুরো উদ্যমে।
সাথে সাথে পরিবেশিত হল মদ
আমরা পান করেছিলাম, এবং হালকা মাতাল বোধ;
তারপর পায়াচারিতে বিলম্ব না করে, চলে গেলাম শুতে ৮২১
পরদিন সকালে বসন্তের ভোর হতে না হতে
আমাদের মালিক আমাদেরকে ডেকে তোলে
এবং একত্রিত করে আমাদের সদলবলে
এবং আমরা আমাদের ঘোড়ার পিঠে চেপে
পৌঁছালাম অদূরবর্তী সেন্ট থমাস কূপে।
সেখানে আমাদের মালিক ঘোড়া থামিয়ে কন
দয়া করে শুনুন, শুনুন, ভদ্রমহিলা, ভদ্রমহাশয়গণ,
আপনারা পূর্বসম্মতি জানেন, তবু স্মরণ করাতে চাই
রাতের সাথে সকালের কোনো মতভেদ আছে কি নাই? ৮৩০
এখন দেখা যাক প্রথম কে শুরু করে কাহিনীকথ্য?
সারাপথে মদ বীয়ার পান করব এটা যেমন সত্য
তেমনি সত্য, যে মানবে না আমার কথা বিচার ন্যায়
সে চুকাবে তীর্থযাত্রীদের পথের সকল খরচ ব্যয়
এখন পথ এগোনোর আগে, টানুন খড়ের একটি করে ডাটা
যার আঁটিটা ছোট হবে, সেই প্রথম কাহিনীর জন্য সাঁটা।