যাতাওয়ালা লোকটি ছিল মোটাসোটা বেশী
শক্তিশালী ও মজবুত ছিল তার হাড্ডি আর পেশী।
এবং বলতেই হয়
যাতাওয়ালা কু্স্তিখেলায় পুরস্কার পায় সবসময়
তার শরীর কাঠের গুড়ির মতো শক্ত, চওড়া, বলিষ্ঠ
যেকোনো দরজা টেনে খুলতে ভালোই কর্মনিষ্ঠ ৫৫০
অথবা মাথা ঠুকে দরজা সহজে ভেংগে ফেলতে পারত।
তার দাড়ি ছিল লাল, ঠিক শূকরী বা শেয়ালের মতো
এবং ছিল কোদালের মতো চওড়া প্রশস্তশীল
নাকের ডগার কোণে ছিল একটা ছোট্ট আচিল
ছোট আচিলের উপরে গজিয়েছে কয়েকগাছা চুল
ঠিক একেবারে শূকরীর কানের চুলের মত রাতুল।
প্রকান্ড উনুনের মতো বিশালাকৃতির মুখ ছিল তার
হাসি মশকরার বিষয়ে সে ইতরভাষার গোপাল ভাঁড়
বেশীরভাগ হাসি তামাশাই পাপপূর্ণ, বেশ্যাগিরিতে ভরা
জানে গমচুরি করে কেমনে আদায় করা যায় তিনদরা।
সে কিছুটা সৎলোক যদিও বেশ কিছুটা অশ্লীল
তার কোটটা সাদা ছিল আর ঢাকনাটা ছিল নীল।
সে একটা বড় বাঁশি ভালোরকম বাজাতে জানে
আমাদেরকে শহরছাড়া করতে পারে তার সুরের টানে।
সাথে চাকচিক্য ইয়ারগোছের ছিল এক ভান্ডারী
বেচাকেনা বিষয়ে সে ছিল অন্যদের উচ্চ কাণ্ডারী
ছিল বিচক্ষণ, বেচাকেনার ব্যাপারে
সে জিনিসপত্র নগদে কিনুক কিংবা কিনুক ধারে ৫৭০
সবার প্রতি রাখত সে সাবধান নজর কড়া
প্রতি বারই তার কিছু না কিছু মুনাফা থাকে ধরা।
ভান্ডারীর মতো একজন অশিক্ষিত লোকে
একগাদা শিক্ষিত লোককে যদি ঘোল খাইয়ে থাকে
সুতরাং তার বুদ্ধি, সেটা কি নয় ঈশ্বরের বিশেষ দান?
তার মনিবের সংখ্যা ছিল তিরিশের সমান।
তাদের ছিল আইনের জ্ঞান এবং ছিল বিশেষ দক্ষ
তারা ছিল জমি জমা বিষয়ে বেশ পরিপক্ব।
তার মনিবদের মধ্যে অন্ততপক্ষে দশ বারোজন
ইংল্যান্ডের যেকোনো লর্ডের টাকাপয়সা জমিজমা এমন ৫৮০
বিষয়ে খববদারি করার ক্ষমতা রাখে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে।
যদি ঋণগ্রস্থ না হয়, ধার কর্জ না করে তবে স্বীয় উপার্জনে
অর্থনৈতিকভাবে সম্মানের সাথে ইচ্ছেমত কাটাতে পারে দিন,
কোনো জেলার যেকোনো জুরুরি কিংবা বিপদকালীন -
দুর্যোগ সময়ে, উকিলবাবুরা দায়িত্বভার গ্রহণের সক্ষমতা রাখে
অথচ এই ভান্ডারী তাদের সবাইকে বোকা বানিয়ে থাকে।
নায়েবমশাই ছিলেন লিকলিকে দজ্জাল স্বভাবের লোক
যথাসম্ভব পরিষ্কার দাঁড়ি কামানোয় ছিল তার ঝোঁক
তার চুলগুলো ছিল কানের সম্মুখ থেকে ছাঁটা
ঠিক পুরোহিতদের মতো গোল করে কান পর্যন্ত কাটা। ৫৯০
পাগুলো সরু লাঠির মতো আর ভীষণ রোগাপাতলে
দেখতে পাওয়ার মতো পায়ের গুল ছিল না বললেই চলে
শস্যভান্ডার এবং ভাড়ার, রাখতে সে ভালো রকম জানে
কোনো হিসাবরক্ষক টেক্কা দিতে পারত না তার বুদ্ধিজ্ঞানে
অনাবৃষ্টি(খরা) কিংবা অতিবৃষ্টির (বন্যা) ফলে
কতটুকু ফসল পাওয়া যাবে তাও দিতে পারত বলে
তার প্রভু-মালিকের মেষ, গবাদিপশু এবং দুগ্ধখামার
শূকর, ঘোড়া, তৈজসপত্র, হাসমুরগির খামার
সবকিছু নায়েব মশায়ের হেফাজতে। দেখাশোনা করে
তার মালিকের কুড়ি বছর বয়স থেকে, এ যাবৎকাল ধরে- ৬০০
তার করা সব হিসেব নিকেশ মেনে এসেছেন মালিকে
কখনো তার হিসেবে কোনো বাকি-বকেয়া না থাকে।
কৃষি ম্যানেজার, পেয়াদা কিংবা কোনো মজুরের
ছোটখাটো চুরি-চালাকি তার সব জানা; নখদর্পনের।
এবং সবাই তারা তাকে যমদূতের মতো ভয় করে
বাস করত সে সুন্দরভাবে ঊষর মরুপ্রান্তরে
বাসাটি ছিল তার সবুজছায়া বৃক্ষরাজি ঘেরা চারদিক
মালিক বাড়িটি কিনতে পারেনি কিন্তু সে কিনেছে ঠিক।
টাকা সে পূঞ্জীভূত করেছিল বেশ গোপনে গোপনে
প্রভুকে কিভাবে খুশি করতে হয় খুব ভালো করে জানে ৬১০
এটাও জানত, কীভাবে প্রভুর টাকা প্রভুকেই দিয়ে ধার
ধন্যবাদসহ কোট আর টুপিও নেওয়া যায় উপহার।
যুবক বয়সেই শিখেছিল হাতের কাজের কারুশিল্পধর্ম
সে একজন দক্ষ ছুতোর, জানত কাঠের শিল্পকর্ম।
নায়েবমশাই বসেছিলেন ধূসরকালো রঙের ছিটে
“স্কট” নামক এক বড় সুন্দর ঘোড়ার পিঠে।
পরনে ছিল তার গাঢ় নীল রঙা গাত্রাধার
তার পাশে ঝুলেছিল মরচেধরা এক তলোযার
তখন থেকে যে নায়েবের কথা আমি বলছি হেঁকে হেঁকে
এসেছে বডস্ওয়েল শহরের নিকটবর্তী নর্থফল্ক থেকে। ৬২০
তার কোটটি ছিল ভাঁজ করা, ভিক্ষু ফকিরের বেশে।
ঘোড়াটি তার সবসময় থাকে দলের সবার শেষে।
আমাদের সাথে ছিল আদালতের এক পেয়াদা
তার আগুনে লাল মুখ স্বর্গীয় দূতের মতো সাদা
মুখ ছিল ব্রণময়, বিবর্ণ। সে ফোলা চোখের অধিকারী।
ছিল চড়ুইয়ের মতো কামুক আর লম্পট ব্যভিচারী;
তার কালো মামড়ি পড়া ভ্রু আর দাঁড়ি খোঁচা চটচটে
ছেলেমেয়েরা তাকে দেখলে ভয়ে আঁতকে ওঠে,
পারদ সীসা গন্ধক কত জীবনে মেখেছিল হরদম
সোহাগা শ্বেত সীসা লাবণিক কত তেল কিংবা মলম
কোনো কিছু সারাতে পারেনি সাদা সাদা গুটিকার
কোনভাবে পোড়েনি ব্রণ এবং দাগ হয়নি পরিষ্কার।
সে রক্তের মতো লাল কড়া মদ খেতে ভালোবাসে
তারপর সে চেঁচায় এবং কথা বলে পাগলের উল্লাসে
এবং যখন পেয়াদা মদ তার গলা অবধি টানে
তখন সে ল্যাটিন ছাড়া আর কোনো ভাষা না জানে।
গীর্জার কিছু কাগজ পত্র থেকে
পেয়াদা, হাতে গোনা দু তিনটে ল্যাটিন শব্দ শিখে।
আপনারা জানেন, যে কাক পোপের পাশে সারাদিন থাকে ৬৪১
সেই কাকও পোপের দুই একটা শব্দ অনর্গল ডাকে
সুতরাং এই বিষয়ে খুব বিস্মিত হওয়ার কিছুই নেই,
যদি তার সাথে কেউ গল্প করতে বসে, তবে অচিরেই
বুঝতে পারে তার বুদ্ধির ঝোলাটা শূন্য বৈ কি!
তখন চিংকারে বলবে, "কথা হচ্ছে, এ ব্যাপারে আইনটা কি"?
ছিল সে বদমাশ বন্ধুসুলভ; এক প্রকার দয়ালু ইতর
তার মত খুঁজে পাওয়া যাবে না পুরো এলাকার ভিতর।
এক চিমটি মদের বিনিময়ে, এই পেয়াদা এক বছর ধরে
নিজ স্ত্রীকে রাখতে পারে অন্যজনের রক্ষিতা করে।
এজন্য অন্য লোকটির প্রতি বিন্দুমাত্র জন্মাবে না ক্ষোভ ৬৫১
অন্যের সাথে সে এই খেলা খেলতে পারে দক্ষতার সুলভ।
এবং যদি সে কোথাও কোনো নতুন ভালো সঙ্গী খুঁজে পায়
তবে সে তাকে এই শিক্ষা দিয়ে যায়-
যে, যদি টাকার ঝুলিটাই তার না হয়
তবে বিশপের কাছ থেকে নেই শাস্তির ভয়।
কারণ "শাস্তি মানেই অর্থ দন্ডমূল্য"
তার ভাষ্যমতে, "অর্থঝুলিটাই বিশপের নরকসমতুল্য"
কিন্তু আমি ভালো করেই জানি সে মিথ্যা কথা কয়,
প্রতিটি অপরাধী মানুষের থাকা উচিত শাস্তির ভয়।
যেমন, ক্ষমা আত্মার রক্ষক, তেমন শাস্তি আত্মার হত্যার অন্তরিন ৬৬১
এবং যাই হোক তাকেও কারাদণ্ড থেকে সাবধান থাকতে দিন।
এই পেয়াদাই এলাকার সব যুবকদের রাখে নিয়ন্ত্রণে
এবং সে তাদের গোপন খবরাখবর বিষয়াদি জানে
সেসব যুবকদের কাছে পছন্দের পরামর্শদাতা সমতুল্য
পেয়াদা তার মাথায় বসিয়েছিল এক পুষ্পমাল্য।
এটা দিয়ে সে চিহ্নধারী সব মদের দোকানে যায়
জমাট পিন্ড দিয়ে সে নিজ কসরতে একটি ঢাল বানায়।
আমাদের সাথে ছিল পোপের এক পেশকার
রাউন্সিভেলের, সাথে ছিল বন্ধুবান্ধব সহকর্মী তার।
এসেছে সে সরাসরি রোমের রাজদরবার থেকে
উচ্চস্বরে গাইছে গান "প্রিয় কাছে আস, ভালবাসো" আমাকে
পেয়াদাও পেশকারে সাথে, গানে মিশিয়েছিল দেয় সুর
কোনো ভেঁপু'র অর্ধেক শব্দই নয় তার মত সুমধুর।
পোপের পেশকারের মোমের মত হলদে হলদে কেশ,
কেশ তার সূক্ষ্ণ শনের ঝাড়ের মতো ঝুলছিল বেশ
মাথার উপরে ক খানা চুল ছিল দাঁড়িয়ে
এবং সে তাদেরকে ঘাড়ের উপর দিচ্ছিল ছাড়িয়ে।
কিন্তু ছড়াচ্ছিল কয়েক দফা পাতলা পাতলা স্তর করে,
চাকচিক্য ধরার জন্য, কোন আভরণ ছিল না পড়ে। ৬৮০
ছোট টুপি পড়ে ঘোড়ার পিঠে চড়ার কৌশল
অতি যতনে অন্যদের শেখানোর চেষ্টা ছিল প্রবল।
ছোট টুপি বাদে বাকি মাথা তার খোলা বলা চলে
চোখগুলো ছিল খরগোশের মতোই জ্বলজ্বলে
তার গলার স্বর ছাগলের স্বরের মতো ফ্যাসফ্যাসে।
সদ্য রোম থেকে আনা ঝোলা, তার কোলের উপর বসে
টুকটাক তল্পিতল্পায় হয়ে আছে ভর্তি
তার টুপিতে সেলাই করে আঁকা এক ধর্মীয় মূর্তি।
মুখে তার দাড়ি ছিল না কিংবা কখনো না দাঁড়ি হবে
মুখ পালিশ করা যেন দাড়ি কামানো হয়েছে সবে।
আমার বিশ্বাস সে নপুংসক নয়তো সমকামী ৬৯১
বারউইক থেকে ওয়ারের মধ্যগামী
তার মত পেশকার পাওয়া যাবে না খুঁজে আর।
যখন পাল তুলে সমুদ্রযাত্রা করে সেন্ট পিটার
এবং যীশু খ্রিস্ট তখন তাকে ফিরিয়ে আনে
দাবী করে, তার কাছে আছে সেই পালের টুকরোখানে।
এবং তার থলের মধ্যে বালিশের আছে যেই আবরণ
সেটিও নাকি মেরী মাতার পরদার অবগুন্ঠন।
তার কাছে ছিল ধাতুর প্রস্তরখচিত এক ক্রুশাকার
অন্য পাত্রে ছিল শুকুর ছানার অস্থিচর্মসার।
দূরদূরান্তের যদি কোনো অচেনা পাদরির দেখা পায়
তাদের কাছে সে এসব পবিত্র স্মারক বিকায়
এবং এক দিনে সে দুইমাসের সমপরিমাণ আয়
পবিত্র ওড়, অস্থি, পালের টুকরো বেচে কামায়।
এভাবে তার খোসামোদ এবং ধাপ্পাবাজির ফুসমন্তরে
অচেনা পাদরি এবং লোকজনদের বোকা তৈরি করে
কিন্তু সত্য কথা বলি, এই ধোঁকাবাজ লোক
গীর্জার ভেতরে একজন মর্যাদাসম্পন্ন ধর্মপ্রচারক।
জানত গ্রন্থ পাঠ করতে এবং নীতিশিক্ষার গল্প বাইতে
কিন্তু খুব বেশি ভালো পারত প্রার্থনা সঙ্গীত গাইতে
সে খুব ভালো করে জানে, প্রার্থনাসভা শেষ হলে
জিভে মধু মাখিয়ে ভারী মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে
তাকে যথাসাধ্য করতে হবে টাকা (সিলভার) আয়,
তাই সে সুখ মনের আনন্দে, গলা ছেড়ে গান গায়।
এখন আমি আপনাদের বললাম সংক্ষিপ্ত আকারে
তীর্থযাত্রীদের পদমর্যাদা, সংখ্যা, বেশভূষা, সহকারে
এটাও বললাম, কেন তারা সমবেত হয়েছে একসাথে
সাউথওয়ার্কের এই সুন্দর সরাইখানাতে
বেল এর কাছাকাছি এই সরাইখানা, ট্যাবার্ড নামে পরিচয়।
এখন আপনাদের বলবার হয়েছে সময়-
সরাইখানায় আমরা কীভাবে সেই একই রাতে
পৌঁছে আমরা করলামটা কি, একে অন্যের সাথে।
এবং তারপর আমি বলব আমাদের যাত্রাভ্রমণ
এবং তীর্থযাত্রীদের বাকি সব কাহিনী বিবরণ
তীর্থ যাত্রীদের কাজকর্ম, কথাবার্তা, আচরণ হুবহু সহকারে
যেহেতু আমি খোলাখুলিভাবে বলছি; এই ব্যাপারে
তাই আপনাদের কাছে আমার একান্ত অনুরোধ
কেউ আমাকে ইতরজন ভেবে করিয়েন না বিবেচনাবোধ।
যদি আমি তাদের কথা সঠিক ভাবে না তুলে আনি
আপনারাও জানেন এবং আমিও ভালো করে জানি ৭৩০
যদি কেউ পুনরাবৃত্তি করে কারো কোনো গল্প কথন
হুবুহ সে কাহিনী পুনরাবৃত্তি করবে আসলের মতন
প্রতিটি শব্দ অশিষ্ট এবং নীচুভাষা যতোই হোক না কেন
গল্পে অন্তর্ভুক্ত রাখা দরকার হুবুহু হেন (মতন)
যদি কোনো কথা কোনোভাবে অসত্য, ভুল কয়
তবে গল্প বানোয়াট অথবা গল্পে নতুন শব্দ সৃষ্ট হয়
নিজ ভাইয়ের মনের কথাও দেওয়া যাবে না চাপা
তাই কাহিনীর প্রতিটি শব্দকেই বলতে হবে সুস্পষ্টমাপা।
পবিত্র গ্রন্থে খ্রিস্ট সবকিছু স্পষ্টভাবে বলেছেন নিজেই
আপনারা ভালো করে জানেন, তার কোনো গরমিল নেই। ৭৪০
প্লেটের বই যারা পড়েন, তিনি পড়ুয়াদের উদ্দেশ্যে বলে যান
সবসময় "কথা আর কাজ হওয়া চাই সমান সমান"।
আমি অনুরোধ করি আপনারা রাখবেন আমায় ক্ষমায়
এই গল্প কাহিনী বলার সময় স্বতঃস্ফূর্ত পরিক্রমায়
চরিত্রসমূহকে সাজাতে পারিনি তাদের পদমর্যাদা ক্রম।
আপনারা ভালোই বুঝতে পারছেন, আমি চসার, আমার বুদ্ধিশুদ্ধি কম।