ইরা - এই বাচ্চা ছেলে, চাদরটা দাও না!
ধ্রুব - হা হা হা
ইরা - হাসো কেনো?
ধ্রুব - এখন বয়স তোমার উনসত্তর, আমি সত্তর উর্ধ্ব,
আমার চোখের জ্যোতি এখন ক্ষীণসম্পন্ন
আগের মতো প্রখরতা নেই।
কয়েকটা দাঁত পড়ে গেছে বলে হাসলে এখন
আমায় যে বড় বেজায় দৃষ্টিকটু দেখায়।
হাসলে কখনো কাশি আসে, সাথে কখনো কফ।
ইরা - ধ্রুব মহাশয় আর আমার ক্ষেত্রে?
ধ্রুব - তুমি হাসলে আগের মতো টোল পড়ে না,
চামড়া জড়োসড়ো হয়ে আসে,
তবে আমার থেকে অনেক কম।
তাতে কি বাচ্চা মেয়ে,
তোমার প্রতি আমার প্রেমতো কমেনি !
সেদিনের সেই তীব্র প্রেম আজো জাগ্রত প্রহরী।
তোমার জন্যে চক্রবৃদ্ধিহারে বেড়েই যাচ্ছে।
আমার স্বচক্ষে ভাসমান
সেই চঞ্চলা বুড়ি কামিনী তুমি।
এই বুড়ি, আমায় ভালোবাসো তো আগের মতো?
ইরা - তোমার চুল বেজায় পাক ধরেছে
মাঝের গুলো তো কাকে নিয়ে গেছে।
তোমার ঠ্যাং হয়ে গেছে তিনটা। কি জানি
ক' দিন বাদে আমারো দরকার পড়বে নাকি?
আচ্ছা বুড়ো, আমার দরকার লাগলে,
তোমার লাঠিটা দেবে তো?
ধ্রুব - না দেবো না?
ইরা - কেনো দেবে না?
ধ্রুব - আমি লাঠিতে ভর, তুমি আমাতে, দুজনে
পাঁচ চাকার ট্রেন বানিয়ে চলবো, কি বলো?
সেদিনের মতো।
ট্রেনের লাইনে তোমার ঘাড়ে হাত রেখে
একই লাইনে হেঁটেছিলাম যেমন।
ইরা - তুমি বাচ্চা বুড়ো।
এখনো আগের মতোই রোমান্টিক আছো।
এতো রোমান্টিকতা আসে কোথা থেকে?
ধ্রুব - ইরাবতী, তোমার দৃষ্টিপল্লবে যে প্রেমভাসে,
ঘননিবিড় প্রেমপল্লবের উষ্ণতা এখনো যে
তোমার প্রতিটি উক্তিতে।
ইরা - অনেক বয়স হয়েছে গো, এভাবে বলো নাতো
ভীষণ লজ্জ্বা লাগে আমার।
আমার ভাংগা স্বরের কথায়, কোথায় যে
তুমি এতো অমৃত পাও?
ধ্রুব - তোমার সরলতায়, তোমার পবিত্র হৃদয়ে
যেখানে রংধনু আছে, গোধূলি আছে
আছে স্বাধীন মেঘের বৃষ্টিবিলাসের উল্লাস
আছে খুঁনসুটি, আছি আমি।
ইরা - আহা! চিমটি কাটো কেন বুড়া?
ধ্রুব - একটু খুঁনসুটি আর কি।
আচ্ছা, চুলটা টানি একটু?
ইরা - না একদম টানবা না।
তোমার টানার কারণেই চুল পাতলা হয়ে গেছে।
ধ্রব - আচ্ছা, নাবালিকা বুড়ি, আমি মরে গেলে
তারপর কার সাথে খুঁনসুটি করবে?
ইরা - ক'দিন বাদেই আমি চলে আসবো তোমার কাছে।
কিন্তু আমি আগে মরে গেলে,
তুমি কি আবার বিয়ে করবে?
ধ্রুব - এই বয়সে! কি যে বলো, ইরাবতী?
তুমি জন্ম দিয়েছো হাজার স্মৃতি,
সেই স্মৃতিচারণার মাঝেই থেকে যাবো।
তারপর এক অজানা প্রহরে তোমার কাছে গিয়ে
তোমাকে চমকে দিবো।
ইরা- তারপরো দুষ্টুমি।
মরার পরও খুঁনসুটি ছাড়বা না!
ভাগো দুষ্ট বুড়ো,
তোমায় একটুও ভালোবাসি না।
৩ জানুয়ারি, ২০২০
(কাব্যগ্রন্থ- সম্ভাষণ)