মেঝেতে পড়ে থাকা টুকরো রুটিতে দুই
তেলাপোকার টানাটানি
এমনি সময় হুড়হুড় করে
আরো বেরিয়ে এলো এক দুই চার...
তারা ওৎ পেতে ছিলো আলমারির নিচে
খালি পড়ে থাকা জুতের বাক্সে
অপেক্ষায় ছিল সুযোগ সন্ধানের।
এখন তারাও রুটিযুদ্ধে।
আমার ফেলে দেওয়া রুটি টুকরোতে
তাদের জীবিকা খুঁজে
গলিতে ছুড়ে মারা ডালের প্লেটের পাশে
একটি বিড়াল বলে ম্যাও।
আমি নিম্ন বিত্তের সন্তান, আমি ক্ষুধার্ত
প্রতিদিন এক খাবার অর্ধাংশ পেট ভরে ঠিক
কিন্তু মন ভরে না।
এখন রুটি টুকরোতে তেলাপোকার রাজত্ব
ডালের প্লেটে দুই বিড়ালের দ্বন্দ্ব।
দুই বিড়ালের দ্বন্দ্বে তৃতীয় বিড়াল করলো সাবাড়
এখন বাকি দুজন এসে চেটে খায়।
আমি কপাট ভাংগা দরজায় দাঁড়িয়ে
তালি মারা জুতোর দিকে তাকিয়ে
ভেতর থেকে জননীর চিৎকার
যা, যা, এবার পৃথিবী খেয়ে আয়।
পরে এসে আমার মাথাটা খাস্।
আমি নিম্নবিত্তের সন্তান ক্ষুধা পেটে সামনে ধরি পথ।
মোড়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ভাবি,
এভাবে জীবন কতদিন?
এক প্রান্ত হতে আসে বিরিয়ানির সুগন্ধ
অপর প্রান্ত হতে ডাস্টবিনের পঁচা নির্যাস গন্ধ।
সেই পঁচা গন্ধে খাবার খুঁজে চলে চারটি কুকুর।
তাদের দিকে তাকিয়ে তলপেটে ডান হাত দিয়ে
গভীর শ্বাসের সাথে বিরিয়ানির গন্ধ নেওয়ার চেষ্টা করি।
আমি এগিয়ে যাই সামনে বটতলার মোড়ে
পকেটে পাঁচ টাকার কয়েন
আর আমার পেটে হাঙর ক্ষুধা
হিমালয় কম পড়ে যাবে এ ক্ষুধার কাছে।
আমি নিম্নবিত্তের সন্তান আমি রোজ হাঙর ক্ষুধার্ত।
হোটেলের সুস্বাদু গন্ধে আত্মতৃপ্তির চেষ্টা চলে
আর ডালবিহীন এক পুরীতে আমার সাহারা পেট।
সম্মুখে বসে দুজন। একজন খায় আর একজন খাওয়ায়।
না, বিরিয়ানি মোগলাই পরোটা নয়।
টাকা খাওয়ায়
সাথে খাওয়ায় মিনতি।
রায় তার পাশে আসা চাই।
তারাও ক্ষুধার্ত। তারা ক্ষুধার্ত অর্থের।
বটতলায় এসে দেখি ভীষণ শোরগোল
গুলি খেয়ে পড়ে আছে এলাকার সমাজ সচেতন ব্যক্তি।
আমি নিম্নবিত্তের সন্তান
পৃথিবী দেখেছি অনেক আগে
রোজ দেখি
আজকে আবার দেখা হয়ে গেলো।
এই পৃথিবীতে সবাই বুভুক্ষু
সবার জঠরে ক্ষুধা কামড়ায়
এখন আবার শুকনো রুটি প্লেটে
আমি সাহারা আগুন থামানোর চেষ্টা করি।
আমি নিম্নবিত্তের সপ্তম সন্তান, আমি হাঙর ক্ষুধার্ত
বুঝা হয়ে গেছে এই পৃথিবীকে।
এই পৃথিবীতে
কাউকে প্রভাব খায়।
কাউকে স্বভাব খায়
আর কাউকে অভাব খায়।
১৫ ডিসেম্বর ২০১৯
সংস্করণ - ২২ ডিসেম্বর ২০২০
(কাব্যগ্রন্থ- সুন্দরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ)