মোড়াল ছন্দঃ
মোড়াল ছন্দ লিখতে হয় ধ্বনির নির্দিষ্ট সংখ্যায়।
এই ছন্দে "ও" ধ্বনি প্রধান, এই "ও" ধ্বনি প্রত্যেক চরণে শব্দের প্রথমে নির্দিষ্ট থাকবে। আর অন্যান্য ধ্বনিরও নির্দিষ্টতা থাকতে হবে। যেমন
চোখ জুড়াল, ওগো তোমার রূপ দেখে
জ্যোতি দেখে জোয়ার জোয়ের ধুপ দেখে
এই দুইটি চরণ লক্ষ্য করুন। প্রথম চরণের প্রথম শব্দ "চোখ" এই "চোখের" প্রথম বর্ণ উচ্চারণে আসে "ও" যেমন (চো>ও) এরপর দ্বিতীয় শব্দ হচ্ছে "জুড়াল" এখানে প্রথম বর্ণ উচ্চারণে "ও" আসেনা। এরপর তৃতীয় শব্দ ও চতুর্থ শব্দের প্রথম বর্ণ উচ্চারণ করলে আসে "ও" ধ্বনি । এরপর পঞ্চম ও ষষ্ঠ বর্ণের প্রথম বর্ণ উচ্চারণে "ও" ধ্বনি আসেনা। ঠিক এমন করে দ্বিতীয় চরণটিতেও আছে। যেমন দ্বিতীয় চরণের প্রথম শব্দ হচ্ছে "জ্যোতি" প্রথম বর্ণ উচ্চারণে "ও" আসে, দ্বিতীয় শব্দে আসেনা, তৃতীয় ও চতুর্থ শব্দের প্রথম বর্ণ উচ্চারণে "ও" আসে, আবার পঞ্চম ও ষষ্ঠ শব্দে "ও" আসেনা। প্রথম চরণ যেমন ঠিক দ্বিতীয় চরণও তেমন করেই।
এই ছন্দ যেই কোনোভাবে লেখা হয় তবে "ও" ধ্বনির নির্দিষ্টতা রেখে। এই ছন্দ চাইলে প্রচলিত ছন্দেও লেখা যায়, তবে এই ছন্দ একেবারে নিজের গতিতে বহমান।
আরও একটি উদাহরণ দেওয়া যাক
এসো বৌছি খেলে ভোর হয়ে যাই
শৈশব শোধে, আবার শোধ করি ভাই।
এখানে খেয়াল করলে দেখা যাবে প্রথম চরণের প্রথম বর্ণ উচ্চারণে "ও" আসেনা, কিন্তু দ্বিতীয় শব্দের প্রথম বর্ণ উচ্চারণ করলে আসে "ঔ" ধ্বনি। "ও" এবং "ঔ" ধ্বনিকে একভাবে নেওয়া যাবে। তাহলে যেহেতু "ও" এবং "ঔ" ধ্বনি একইভাবে নেওয়া যায় তাহলে "ও" ই ধরে নেই। এরপর তৃতীয় শব্দ উচ্চারণে "ও" আসেনা কিন্তু চতুর্থ ও পঞ্চম শব্দের প্রথম বর্ণ উচ্চারণে "ও" আসে, কিন্তু ষষ্ঠ বর্ণে আসেনা। ঠিক এমন করেই দ্বিতীয় চরণটির মিল আছে।
এই ছন্দে লিখলে কী হবে?
এই ছন্দে কবিতা, গান, ছড়া, ইত্যাদি লিখলে ধ্বনির নির্দিষ্টতা একটি দোলা সৃষ্টি করে, বিশেষ করে "ও" ধ্বনি।
মোড়াল ছন্দ নির্দিষ্টতা বোঝাতে ব্যবহার করা হয় ইংরেজি "O" দিয়ে এবং অন্যান্য "ও" ব্যাতিত ধ্বনির নির্দিষ্টতা বোঝাতে ব্যাবহার হয় "%" এই পার্সেন্ট।
তাহলে প্রথম উদাহরণের নির্দিষ্টতা ছিল (O+%+0+0+%+%)
এরপর দ্বিতীয় উদাহরণটির নির্দিষ্টতা বোঝানো হয়েছে (%+O+%+O+O+%)
অবশ্যই "ও" ধ্বনি শুধু ব্যাবহার হলে হবেনা, অন্যান্য ধ্বনিরও ব্যাবহার লাগবে।
পূর্ণ একটি কবিতা দিয়ে শেষ করে নেই।
মোড়াল ছন্দ O+%+O+O+%+%
চোখ জুড়াল, ওগো তোমার রূপ দেখে
জ্যোতি দেখে জোয়ার জোয়ের ধুপ দেখে
ধোঁয়ার ধুপে তনুর জ্যোতি রূপ জ্বালিয়ে
জ্বলছে আগুন যৌবনে জোর ধুপ জ্বালিয়ে
মোহ মাঝে মরছি মোহে মূল ছাড়িয়ে
ছোবলে ছুঁই সমীরে শোন্ ফুল ছাড়িয়ে
কোথায় যেন কোষী জোরে, হৃদ কাননে
গোপন পথে গৌরবে ঘোর বিঁধ কাননে
ধন্য তবেই ধরণী মোর চক্র চালে
বশিভূত বাঁধ বছর বছর বক্র চালে।