আজো মনে পড়ে
এইতো সেদিন শীতলা নদীর পারে,
ছোট্ট এক খানা ঘর ছিল তার
তাল গাছে ঘিরা ছোট্ট ভিটার উপরে।
জাল ফেলে মাছ ধরত মজীদ
সারা দিনমান ধরে
দিনান্তে, গঞ্জের ঘাটে
বেচত সে মাছ দরাদরি করে।
শেফালী তখন দাওয়ায় বসে
থাকতো চেয়ে পথের পানে
তাহার ফিরবার তরে
ফিরলে ঘরে আসত কাছে
রইত চেয়ে মায়া জড়ানো
কাজল নয়ন খানি মেলে ।
স্মৃতির পাতায় আজ ও উঠে ভেসে,
সন্ধ্যা যখন মিলিয়ে যেত
দাওয়া জুড়ে বিছিয়ে পাটি
সাজিয়ে দিতো যত্ন করে
ভাতের সানক শাকের বাটি
এক টুকরা মাছের ভাজা
নয়তো বা ডিমের তরকারী।
মাঝে মাঝে হয়ত বা চাঁদ
দিতো দেখা দূরের আকাশ জুড়ে
রূপালী আলোর মায়াবী চাদরে
যেন রাখতো উঠান ভরে
বহে যাওয়া নদীর জলে
ভেঙে পড়া চাঁদের হাজার কণা
যেন ভাসতো দুলায় দুলে
দাওয়ায় বসে শেফালির সাথে
অপূর্ব আবেশে বয়ে যেত মন
শিহরিত দেহ একটু ছোঁয়ার আশে ।
তারপরে যবে আগ্রাসী নদী
কেড়ে নিলো তার ভিটা খানা
পাড়া জুড়ে কেবল ক্ষুধার কান্না
চারিদিক জলে ভাসে ফানা ।
মজীদ এখন স্থবির বিদ্দ্বস্ত
পা দুখানি তার হয়েছে অবশ
কাল ব্যাধি জরার আঘাতে
রেল লাইনের ধারে
কুড়ানো খড়ের তৈরি ঝাপড়ির নিচে
কাঁথা মোড়ে পড়ে থাকে দিনমান ভরে ।
শেফালী এখন ও যায়নি তাকে ছেড়ে
প্রতিদিন দুবেলা দুমুঠো অন্ন
যোগায় সে তাহার তরে ।
রাত্রি বুঝি বা বারো টা এখন
আন্তনগর ট্রেন খানা গেলো ছেড়ে
রোজকার মতো শেফালী গেছে
রজবের রিকশা করে
রাস্তায় ঘোরে যদিবা কোনো
খদ্দের জোগাড় করিতে পারে ।
হয়তোবা কোনো নির্জন পার্কে
কোনও ঘন ঝোপের আড়ালে
মিলিআ ধরিবে তাহার যৌবন
সেই অচেনা মানুষের তরে ।
ক্লান্ত বিদ্দ্বস্ত চরম অপমানিত
দেহ খানি নিয়া যবে সে আসে ফিরে
মুখ খানি তার বিষাদে মলিন
নেই কোনো আলো গভীর আঁধার
থাকে তার দুচোখ ভরে ।
এখনো সমাজ নিত্যনৈমিত্ত
চলিতেছে আগের ই মতো
তাহার আদর্শের ধারা বহিয়া বেড়ায়
নিয়মের বাণী প্রতিদিন ছড়ায় ।
মসজিদে মন্দিরে গির্জা জুড়িয়া
আজো আজানের ধনী, শাঁখের আওয়াজ
আর ঘণ্টার ধনী ফিরে ফিরে বাজে
পুন্যকামীরা দলবেঁধে যায় স্বর্গ পাওয়ার আশে ।
মজীদ শেফালী কিভাবে আছে
সমাজের তাতে কিবা যায় আসে ।