সেই ঈদ আর আগের মতো নেই।
আগের দিনের সন্ধ্যায় হুলস্থুল পড়তো পাড়ার ছেলেদের,
আমরা অজস্র পটকা ফুটিয়ে ফুটিয়ে জানিয়ে দিতাম কাল ঈদ।
সারা পাড়ায় আমাদের একটা মিছিল হতো।
নতুন কেনা পাঞ্জাবি আর জুতো পরার জন্য অসীম উন্মাদনায় স্বপ্নে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতো আগের রাত্রি।
গরুর শরীরে আদর করে বলতাম, কাল তোকে জবাই করা হবে।
কুরবানির গুঢ়তথ্য সেই বয়সে আমাদের জানার কথা নয়।
নিয়মিত গরুর গোস্তের ঝোলে মাখা ভাত খেলেও,
সব ভুলে যেতাম।
ঈদের আগের রাত্রীতে মনে হতো,
একশো বছর গরুর গোস্তো খাইনি।
এমন বুভুক্ষিত জীবনের ঈদ।
এমন বাসনার ঈদ আজকাল আর দেখিনা।
যে ছেলেটা ভরা প্রখর রোদে গোসল করতে গিয়ে,
হাত পা শরীর বরফ হয়ে আসতো ঠাণ্ডায়,
সেই ছেলেটি ঈদের সকালে যখন প্রচন্ড ঘনো কুয়াশায়,
অনবরত শীতল জল ঢালছে আর ঢালছে,
ঈদের অছিলায় আনা লাল লাক্স সাবানের প্যাকেট টা তাকে না বলে অন্য কেউ ছিড়লে,
ঈদের সকালে মাটিতে গড়াগড়ি করে কান্নায়,
চোখের জলে উঠোনে এক গলা বন্যা হতো।
আমাদের ঈদের সকালে এই রুপ ছিলো।
নতুন লাল পাঞ্জাবির গলার পাশে কোম্পানির সীলের কাগজটা ঝুলিয়ে রাখতাম এক দুপুর,
নতুন কাপড়ের একটা প্রমান থাকা তো চাই।
বাবা বা চাচাদের সাথে মাঠে যেতাম,
নামাজ টা তখনো গৌণ হয়ে উঠেনি।
বাদাম৷ পাপড় ভাজা, আচারের বুড়ো দাদুর দোকান,
আর বেলুন, পটকার দোকানের লাইন টা মাঠ পেরিয়ে আরও কিছুদূর।
ত্রিশ টাকা ঈদের সেলামী পেলে পাড়ার সব ছেলেদের ডেকে ডেকে থু থু মেখে মেখে গোটা কুড়ি বার গুনতাম।
আমাদের ঈদের দিন মানে বাতাসা, চকলেট বাদাম খেয়ে খেয়ে মুখে অরুচি বাসা বাধা।
বড় ষাড়ের কি তাজ্জব আত্মসমর্পণ,
কি অনায়াসে শুয়ে পরতো,
কুটিকুটি হাসতাম দু চেয়ালে।
রক্তের ফিনকি ছোটা ধারা দেখে,
ঠিক তখনই দুঃখ হতো,
আধা সেদ্ধ গোসত খেতে চুলার ধারে,
ধর্না দিতাম আদিম হয়ে।
মনে হতো গোগ্রাসে উনুন ঢেলে,
একাই সব সাবাড় করি।
দু টূকরো মুখে দিতেই অরুচিরা হুমড়ি খেতো,
মুখ ভরে।
গালা গালের রক্ষা পেতে, ওজর এটে জানিয়ে দিতাম,
ইস তেল এতো।
আমাদের ঈদের সকাল মানে এমন ছিলো।
হৈ-হুল্লোড় পরের বিকাল,
পাড়ার সকল বালক জুটে,
ফন্দি আঁটে।
নিখোঁজ হতাম, দূরে কোথাও,
বন বাদারে, পাখির বাসায়।
সন্ধ্যা হতেই ব্যথা পায়ে,
চোখের দরজায় নক করা ঘুম,
শুন্য উদর, না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়তাম প্রথম রাতে।
আমাদের ঈদের সন্ধ্যায় নাকাল শরীর ঘুমিয়ে যেতো,
এমন ছিলো।