মহাপ্রস্থানে
লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল
যেতে যেতে সদ্য দুধ জমা ধান শিষের কাঁটায় হাত বোলালাম
আঙুল চেরার যন্ত্রণারা পশ্চিমে গড়িয়ে যাওয়া আলোয় গেরুয়া হয়ে যাচ্ছে
থমকে নেই কোন অপরাহ্ন
সে আলোয় প্রজাপতি উড়ছে আগুনের দিকে -
ঘাড় উঁচু করে দেখা সহিদ স্তম্ভের মাথা নীল হতে হতে ঢুকে যায় আকাশে
জীর্ণ বিরহের কান্নাক্লান্ত আমজনতা ভেসে ওঠে প্রতিদিন
এইসব কাচের গর্ত ; ভেতরের ভগ্নাংশ বাতাস
আর এদিকে ভাঙা ভাঙা রাস্তায় ঢুকে যাচ্ছে জঙ্গল -
আমি জিনসে গাঁথা কাঁটা তুলতে তুলতে পকেটের মোবাইল খুলে দেখি
এখানে ওখানে যা কিছু ছিল মূল্যবান অতীত
কোথাও দ্বিপ্রহর শেষ হলে বলে ওঠে মা মাসি -
হে ঠাকুর প্রণাম নাও
এসব ভাবলেও কয়েকটা আনতাবড়ি ইউটিউব দেখার ম্যাসেজ ছাড়া
কিছুই নেই নোটিফিকেশনে - চারপাশে কেবল অলীক সময়
কেউ ভাবছেনা আমাকে - আমিও কাওকেই না
শীতকাল অতিক্রম করতে করতে কুয়াশা হয়ে যাচ্ছে কোকিলের গান
কীপ্যাড খুলে একটাই মাত্র টেক্সট করলাম - আসছি তাহলে
মোবাইলটা ফেলে দিলাম ঝোপের রাস্তায়
স্ক্রিনটা ক্রমশ ধূসর হতে হতে আলো কমিয়ে দেয়
অন্ধকার এগিয়ে আসে জঙ্গলের ভিতর -
জাম পাতার মতো জড়ো করা অণ্ডকোষের ইতিকথায়
কোনো সাদা বক নেই
আকাশে আকাশে নীল তলোয়ার - তাদের ঝলকে কোটি কোটি মৃত্যুমুখ
ডালপালার ধাক্কার ভার বইতে পারছি না আর
দেহাতি দুঃখ ভোলানো বাঁশি অন্তহীন
মাঝে মাঝে আগুনের হলকায় বেড়ে যাচ্ছে তাপ
লিবিডোর নিঃশব্দ আকাঙ্খায় ঝোলানো ব্যাগটা পড়ে যায় কাঁধ থেকে
এত ভার ঘুর্নায়মান আবহে
খুলে ফেলতে থাকি পায়ের জুতো , কব্জির ব্রেসলেট, আঙুলের আংটি
এমনই হয় , পুরো স্বরলিপিটাই বাঁক নেয় কলিঙ্গ থেকে
নিরাময়ের ভারমুক্তির জন্য ঠিক কুয়াশা নয়
হৃৎপিণ্ডের ধোঁয়ায় হেঁটে হেঁটে বিষাক্ত বৃষ্টিতে ভিজি মিথিলা ছাড়িয়ে
আর কোন পথ নেই
নীরবতা পালনের সময় বাড়ছে খুব, এমনই ঘটে বার বার
কেবল অন্ধকার ঘন হতে হতে ছড়িয়ে যাচ্ছে গভীরে
কানামাছি খেলার মতো দু হাত হাতড়ে হাতড়ে এগিয়ে যেতে থাকি -
টি শার্ট ছিঁড়ে যায় - চামড়াও ছিঁড়ে কাঁটারাগে
অদ্ভুত এক জ্বালা ছড়িয়ে যায় আপাদমস্তক
তারপর টুকরো পাথরের ফাঁক থেকে চিতি সাপ ছুটে যায় কোথায় কোথায়
যেখানে যাওয়ার কোন আগাম সংবাদ নেই
চোখ কচলাতে কচলাতে দেখছি অনির্বাণ , লিরিক্যালি অনন্তকাল
আলো বেড়ে উঠছে আবার - কঠিন রাত্রির ওপাশে যেন সুতীক্ষ্ণ স্ট্রিট লাইট
শুনতে পাচ্ছি কোন এক উন্মাদের কলকল শব্দ
স্রোতের কাছেই আছি তাহলে
ভূমণ্ডলের খাপছাড়া ভারসাম্যে স্বচ্ছ এক দর্পণের মতো
শ্রেণি বিভাজনের নানান আসবাবের কাছ দিয়েও একঝাঁক পাখির উড়ে যায়
আকাশ গড়িয়ে নামে প্রজাপতির রং
সেই শব্দে তাকিয়ে দেখি ঝিরঝিরে স্রোতের আলপনা
জিনস টি-শার্ট খুলে দৌড়ে যাই বার বার উচ্চারিত নিঃসঙ্গ মহাপ্রস্থানে
আমার আবহমান কাল সমস্ত শরীরে মাখা অরণ্যগন্ধ
ডুবে যাচ্ছে পা কোমর বুক
আর কোন শরীর নেই - গলে যাচ্ছি - জল শুধু জল , শীতল শান্ত