দুই বাংলার প্রবীণতম কবি কৃষ্ণ ধর আর আমাদের মধ্যে নেই। গত বছরের বারোই অক্টোবর, কলকাতার এক নার্সিংহোমে চুরানব্বই বছর বয়সে তাঁর জীবনাবসান হয়। তাঁর প্রয়াণের পরে তাঁর মরদেহ যেন মানুষের কাজে ব্যবহার করা হয়, এই মর্মে 'ইচ্ছাপত্র' নামে একটি কবিতায় তাঁর আকাঙ্ক্ষার কথা তিনি ব্যক্ত করে গিয়েছিলেন। কবির ইচ্ছাপত্র-র বয়ান নীচে দেওয়া হল।
ইচ্ছাপত্র
অগ্নিতে দিয়োনা শরীর, দিওনা পুণ্য বারিস্রোতে
কিংবা মাটির গোরের বুকে
দেহটাকে দিয়ো যাতে মানুষের কাজে লাগে
এ আমার ইচ্ছাপত্র লিখে যাই দেওয়ালের গায়ে
প্রিয় বৃক্ষের পাতায়, শাখাপ্রশাখায়
অন্যথা করোনা, মায়ায় ভুলোনা, যেতে দাও নশ্বর শরীর
শোক নয়, এ দেহকে নতুন সজ্জায় ঢেকে
দিয়ে এসো শুশ্রূষার কাজে, সে তাই চেয়েছে
কান্না দিয়ে ভিজিয়ো না তাকে,
দুয়ার পেরোতে দাও, আকাশ দেখুক তাকে
পৃথিবীকে ভালবেসে, পৃথিবীর নিরাময় চেয়ে
রেখে যাব নিজের শরীর
অগ্নিতে দিয়োনা তাকে, দিয়োনা নদীতে
মাটিতে শোবেনা শরীর
যাবে মানুষেরই কাছে যার জন্য ছিল তার
আজীবন মনন শিল্পের চর্চা, মোহহীন
ছিল অন্বেষণ জীবন সত্যের।
কবির ইচ্ছাপত্র অনুযায়ী, মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই তাঁর চোখের কর্নিয়া সংগ্রহ করা হয়। পরের দিন, চিকিৎসাবিজ্ঞানের কাজে ব্যবহার করার জন্য কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে তাঁর মরদেহ তুলে দেওয়া হয়।
কবি তাঁর শেষ কবিতা 'স্মরণ' লিখেছিলেন দু-হাজার কুড়ি সালের অক্টোবর মাসের তিন তারিখ। এই কবিতা লেখার পরে কবি আরো দুবছর আমাদের মধ্যে ছিলেন। তবে একদিন চেয়ার থেকে পড়ে গিয়ে পায়ে আঘাত পাওয়ার কারণে তিনি শারীরিক সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিলেন। তারপরে কবি আর কোনও কবিতা লিখে উঠতে পারেননি।
স্মরণ
কেউ কেউ মনে রাখবে
হয়তো বা রাখতে চায়
হলফ করে বলতে পারার মতো
মনের জোর তার অবিচল
সাক্ষীর হাততালি দেয়
সাবাস সাবাস সাবাস!
অক্ষরবিন্যাসে দুঃখ সুখ
অক্ষরেই হৃদয় বিদরে
সময়েই হৃদয় পাষাণ
অক্ষরেই যত মধুরিমা।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার: কবির লেখা শেষ কবিতাটি কবিকন্যা শ্রীমতি সুরঞ্জনা চৌধুরির সৌজন্যে প্রাপ্ত।