।কবি অরুণ চক্রবর্তী।
পেশায় এঞ্জিনিয়ার, নেশায় কবি। কবি অরুণ চক্রবর্তী। কলকাতার বাগবাজারে জন্ম। বাস করতেন হুগলির চুঁচুড়ায়। হাওড়ার শিবপুর এঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে সিভিল এঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক, চাকরি করতেন হিন্দুস্তান মোটরে। কোনও একটি কবিতার জন্য তাঁর মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতি ইদানিং আর কোনও বাঙালি কবির বরাতে জোটেনি। কবিতাটির নাম “শ্রীরামপুর ইস্টিশনে মহুয়া গাছটা।” কবিতাটি একবার পড়ে নেওয়া যাক।
হাই দ্যাখো গ’, তুই এখানে কেনে,
লালপাহাড়ির দেশে যা
রাঙা মাটির দেশে যা
হেথাকে তুকে মানাইছে নাই গ’,
ইক্কেবারে মানিয়ে নাই
অ– তুই লালপাহাড়ির দেশে যা….
সেখান গেলে মাদল পাবি
মেইয়ে মরদের আদর পাবি
অ– তুই লালপাহাড়ির দেশে যা
লারবি যদি ইক্কাই যেতে
লিস্ না কেনে তুয়ার সাথে
নইলে অ তুই মরেই যা
হাই দ্যাখো গ’, তুই এখানে কেনে
লালপাহাড়ির দেশে যা
রাঙা মাটির দেশে যা
রাঙা মাটির দেশে যা….
কবিতাটি কবি শ্রীরামপুর স্টেশনের কাছে একটি ফুলভর্তি মহুয়া গাছ দেখে লিখেছিলেন। তাঁর মনে হয়েছিল গাছটি শ্রীরামপুরের মতো জায়গায় একেবারেই বেমানান।
পরে কবিতাটি গান হয়ে অসম্ভব জনপ্রিয়তা পায়। মূল কবিতার সঙ্গে কবির দ্বারা দু-লাইন যুক্ত হয়ে কবিতাটি গান হওয়ার পরেই সেটি চারদিকে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল।
উঁচু পদে চাকরি করলেও কবির কোনও ঠাটবাট ছিল না। সদাশিব টাইপের মানুষ অরুণ চক্রবর্তী রঙিন জামাকাপড় পরে মাথায় ফেট্টি বেঁধে হকার, বেকার, মাছবিক্রেতা, রিক্সাওয়ালা সবার সঙ্গে আন্তরিক ভাবে মিশতেন, তাঁদের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করতেন।
লোকসংস্কৃতি তাঁকে চুম্বকের মতো টানত। দরদ দিয়ে লোকসংস্কৃতির চর্চা করতেন। লোকগান, লোকনৃত্য ও দেহাতি মানুষের টানে বারে বারে ছুটে যেতেন রাজ্যের ও রাজ্যের বাইরে পাহাড়, জঙ্গল, নদীর কাছাকাছি জনজাতি ও নিম্নবর্গের মানুষদের সান্নিধ্যে। মৃত্যুর দুদিন আগেও তিনি কলকাতার মোহর কুঞ্জে জঙ্গল মহল উৎসবে গিয়েছিলেন।
সবাইকে তিনি খুব সহজেই আপন করে নিতেন। সঙ্গের ঝোলায় রাখতেন অগুনতি চকোলেট। যাঁর সঙ্গেই দেখা হত তাঁর হাতে চকোলেট ধরিয়ে দিতেন।
অনুজ কবিদের সঙ্গে দেখা হলে কবিতা শুনতে চাইতেন। এমনও হয়েছে কেউ হয়তো সদ্যলেখা একটি কবিতা তাঁকে শোনালেন। শুনে অম্লানবদনে তিনি বলতেন, “এটি আগে পড়েছি।” যাতে কেউ কষ্ট না পান তাই সবার কবিতাই তাঁর “পড়া” ছিল।
এমনই ছিলেন কবি অরুণ চক্রবর্তী।
।অরি মিত্র।