।ছড়ার গল্প।
আমাদের মেয়ে অরিত্রী তখন প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে পড়ে। বছরের মাঝামাঝি পরীক্ষার প্রথম দিন বাংলা পরীক্ষা। পরীক্ষার দিন স্কুল থেকে ফিরে এসে হাসিমুখে বলল, 'পরীক্ষা ভালো হয়েছে।' ও খুশি, খুশি আমরাও।
পরদিন সকালে কী একটা কাজে আমি ওর স্কুলে গেছি। আমাকে দেখতে পেয়ে বাংলার দিদি হাসতে হাসতে বললেন, 'জানেন, গতকাল বাংলা পরীক্ষায় আপনার মেয়ে কী করেছে!'
উৎকণ্ঠিত হয়ে আমি বললাম, 'কিছু দুষ্টুমি করেছে বুঝি?'
দিদি বললেন, 'না, তেমন কিছু নয়। বইয়ের সব ছড়াই ওর মুখস্থ, কিন্তু ওর জানা যে কোনও একটি ছড়া বলতে বলায় ও বইয়ের ছড়া না বলে অন্য একটা ছড়া বলেছে।'
দিদির কথায় উৎকণ্ঠা ঝেড়ে ফেলে আমি জানতে চাইলাম ও কোন ছড়াটা বলেছে।
দিদি বললেন, 'ছড়াটা মনে নেই। তবে পেনসিল, রাবার এইসব ছিল ওতে।' ওইটুকু শুনেই আমি বুঝলাম ব্যাপারটা। অতঃপর, অফিস যেতে হবে বলে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে এলাম।
সন্ধেবেলা অফিস থেকে বাড়ি ফিরে অরিত্রীকে বললাম, 'গতকাল তুই পরীক্ষায় কোন ছড়াটা বলেছিস?' আমার প্রশ্ন শুনে ও মিচকে হাসি হাসতে থাকে। ও বুঝতে পেরেছে, আগের দিন স্কুলে ওর বলা ছড়াটার কথা আমার কানে এসেছে। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পরে পরীক্ষায় যেটা বলেছে সেই ছড়াটা শোনাল–
পেনসিল এবং রাবার
অনেকগুলি কাবার
পয়সাগুলো বেরিয়ে গেল
পকেট থেকে বাবার!
ছড়াটা শুনে আমি হাসতে হাসতে বললাম, 'তুই বইয়ের কোনো ছড়া বললি না কেন?'
উত্তরে ও বলল, 'দিদি আমাকে আমার জানা যে কোনও একটা ছড়া বলতে বলেছিলেন। তাতে বইয়ের ছড়াই বলতে হবে তা বোঝায় না। তাই আমি এই ছড়াটা বলেছি।'
আমি বললাম, 'চমৎকার! কিন্তু তুই এই ছড়াটাই বললি কেন?'
আমার এই কথার উত্তরে সে বলল, 'ইচ্ছে হল, তাই।'
বুঝলাম, এই ছড়াটার অনুষঙ্গে অরিত্রী নিজে আছে এবং ছড়াটার নির্মাণ প্রক্রিয়া ও প্রত্যক্ষ করেছে বলেই ও এই ছড়াটা বলেছে। সেই অনুষঙ্গটি এই রকম।
ওই সময় ওর প্রিয় খেলা ছিল পেনসিল দিয়ে রাবার (ইরেজার) ফুটো করা। রাবার ফুটো করতে গিয়ে পেনসিলের সিস ভেঙে যেত। তখন আবার শার্পনার দিয়ে পেনসিলের সিস বার করে দিতে হত। তখন আবার পেনসিলের সিস দিয়ে রাবার ফুটো করার প্রচেষ্টা। এইভাবে চলতে চলত একসময় পেনসিল দিয়ে রাবারটাকে এফোঁড়-ওফোঁড় করে ফেলত। তখন আঙুল ঢুকিয়ে রাবারটাকে দুভাগ, তারপর টেনে টেনে তিন/চার ভাগ করে ফেলত। তখন নতুন রাবার দিতে হত। ঘনঘন নতুন পেনসিলও দিতে হত। ওর এই খেলা খেলার সময়েই একদিন এই ছড়াটা লিখে ওকে শোনাই। ছড়াটা ওর দারুণ পছন্দ হয়ে যায়। তাই বারবার শুনতে চায় ও শুনে শুনে স্মৃতিতে তুলে নেয়। তারপর সুযোগ পেয়ে পরীক্ষায় ছড়াটিকে ব্যবহার করেছে।
।অরি মিত্র।