।ভাগ্য-- ভাগ্ গো।

ভূতকে ভগবান বানালে ভূত খুশি হয় কিনা বলতে পারি না, কিন্তু ভগবানকে ভূত বানালে ভূত ও ভগবান উভয়েই আপত্তি জানাতে পারে!
        এই কথা কেন উঠল তা একটু খোলসা করে বলা দরকার। অনেক বছর আগে, বিজ্ঞানমনস্কতা নিয়ে একটা ছড়া লিখে একটি পত্রিকায় ছাপতে দিয়েছিলাম। ওই ছড়ায় ভগবান নেই এমন কথা রয়েছে দেখে পত্রিকার সম্পাদক বলেছিলেন, "তুমি আমাকে ধর্মসংকটে ফেলে দিয়েছ ভাই। লেখাটা আমার পছন্দ তাই ছাপব; কিন্তু সেইজন্য আমাদের সমাজের কাছে আমাকে জবাবদিহি করতে হবে।"
        পত্রিকার সম্পাদক একজন আস্তিক মানুষ, তুলসির মালা-পরা নৈষ্ঠিক বৈষ্ণব।
         তাঁর কথা শুনে বলেছিলাম, "থাক, লেখাটা ফেরত দিন আমাকে।"  তাতে তিনি বললেন, "না, তা হয় না; লেখাটা ফেরত দিলে আমার সম্পাদকসত্তা কষ্ট পাবে। তাই, তুমি এমন কিছু করো যাতে আমি ধর্মসংকট থেকে ত্রাণ পেতে পারি। অর্থাৎ, লেখাটাও ছাপা হবে; আর আমাকেও আমাদের সমাজের কাছে জবাবদিহি করতে হবে না!" এই কথা বলতে বলতে তিনি একটা কলম খুলে লেখাটা আমার দিকে এগিয়ে দিলেন।
         তাঁর কথা শুনে তাঁকে 'ধর্মসংকট' থেকে ত্রাণ করার জন্য 'ভগবান'-এর জায়গায় আমি 'ভূত-প্রেত' বসিয়ে দিয়ে লেখাটা তাঁকে ফেরত দিলাম। সম্পাদিত লেখাটি দেখে সম্পাদকমশাই হ্যান্ডশেক করার জন্য আমার দিকে ডানহাত বাড়িয়ে দিয়ে অমায়িক হাসি হেসে বললেন, "তুমি আমাকে বাঁচালে ভাই!"
           আলোচ্য ছড়াটি এই রকম:

                   ভাগ্য– ভাগ্ গো

                   ভাগ্য– ভাগ্ গো
                   মানুষের হাত-দুটি
                   কাজে-কামে লাগ গো ।

                    ভাগ্য– ভাগ্ গো
                    বিজ্ঞানচেতনায়
                    তোর সব জাগ গো।
    
                    ভাগ্য– ভাগ্ গো
                    ভূত-প্রেত* নেই শুনে
                    করো কেন রাগ গো!


* 'ভূত-প্রেত'-এর জায়গায় আগে 'ভগবান' ছিল।


।অরি মিত্র।