ছোট্ট 'বিলে' দুষ্টু বড়ো
কি যে করেন মা?
সারাটাদিন ছুটে বেড়ায়
থামেইনা তার পা।
রাগলে 'বিলে' রক্ষে তো নেই
এমন করে কাণ্ড,
সকল কিছু ভেঙে চুরে
করে লন্ড-ভন্ড।
এতো রাগের ওষুধ মায়ের
ভালোই ছিল জানা,
'শিব','শিব' বলে বিলের মাথায়
জল ঢালতেন টানা।
কাজও হতো ওই ওষুধে
শান্ত হতো ছেলে,
চুপটি করে থাকতো বসে
দুষ্টুমি সব ফেলে।
মা বলতেন ছেলে আমার
মহাদেবের চ্যালা,
শেষমেশ এই ভূতটা কিনা
পড়ল আমার বেলা??

তখন 'বিলে' একটু বড়
খেলে সবার সাথে,
বেশীরভাগ দিনই তারা
ধ্যানের খেলায় মাতে।
বাচ্চারা সব ধ্যানের কথা
কত বোঝে আর!
মাঝে মাঝেই চোখটি খুলে
দেখে বার বার।
'বিলে' কিন্তু ধ্যানের সময়
চোখ খোলেনা মোটে,
মনটা যে তার স্রোতের বেগে
কোথায় যেন ছোটে।
একদিন এই ধ্যানের খেলায়
হঠাৎ এল সাপ,
ছেলেরা তো ভয়ের চোটে
ছুটলো দিয়ে লাফ।
'বিলে' কিন্তু বসেই আছে
ধ্যানে মগন হয়ে,
সাপটি শেষে বেরিয়ে গেল
মেঝের উপর দিয়ে।
দয়া মায়ায় ভরা ছিল
'বিলে'র কোমল মন,
সকল কিছুই বিলিয়ে দিত
চাইলে দুখী জন।
বিপদ হল মায়ের ভারী
জিনিস রাখা দায়,
শেষে একদিন রেগে মেগে
ভাবলেন উপায়।
দোতলার এক ঘরে রেখে
আটকে দিলেন তারে,
দেখি, এবার কি করে সে
দান করতে পারে??
কিন্তু তাকে আটকে রাখা
বড়োই কঠিন কাজ,
জানলা দিয়েই মায়ের শাড়ী
দান করলো আজ।
'বিলে'র বাবা মস্ত উকিল
ব্যস্ত দিবস রাত,
তাঁর কাছে তাই বহুলোকের
হত যাতায়াত।
সকলেরই আপ্যায়নে
হুঁকো দিতে হবে,
অনেকগুলি হুঁকোর যোগান
রাখতে হবে তবে।
একের হুঁকো অন্যে খেলে
জাত কি করে থাকে?
অনেকগুলি হুঁকোকে তাই
রাখতে হত তাঁকে।
'বিলে'র মাথায় প্রশ্ন এল
জাত কি করে যায়?
প্রতি হুঁকো খেয়ে খেয়ে
দেখলো কি পাল্টায়?
জাতটা গেলে কি হবে তার?
কে বলবে তাকে?
জানতে পেরে বাবা ই তাকে
বুঝিয়ে দিলেন ডেকে।
কোনো কথা যদি বিলে
একটিবারও শোনে,
সেই কথাটি সারা জীবন
রয়ে যেত মনে।
শিক্ষক তাই পড়ে যেতেন
তার কাছেতে বসে,
'বিলে' শুধু সেই পড়া
শুনতো বসে বসে।
একটিবার শুনলেই তার
যদি মনে রয়,
লেখাপড়া করতে আর
কিবা লাগে ভয়?
সময়ও বাঁচানো যায়
অনেকটা করে,
সে সময় কাটাতো সে
নানা কাজ করে।
লাঠি খেলা,ছবি আঁকা
আরও কত কিছু!
পড়াশোনা ছাড়াও সে
করে এসব কিছু।

এই 'বিলে' বড় হয়ে
ভারত জাগালো,
'বিবেকানন্দ' হয়ে
ভুবন ভরালো।

-------------------------------------------------------------
(সেই মহামাণব 'স্বামী বিবেকানন্দের' জন্মদিনের শুভলগ্নে তাঁকে জানাই শতকোটি প্রণাম।)