আবু জহল, আবু লাহাব, উতবাহ ও আবু সুফিয়ান
মিলিত হয় যেথা, দার আল-নাদ্বা নামে খ্যাত সেই স্থান।
মুহাম্মদকে কারারুদ্ধ অথবা গুমের আলোচনা হয়
অবশেষে সিদ্ধান্ত; খুন ছাড়া অন্যকিছুই সমাধান নয়।
একক কোন গোত্রের উপর না পড়ে যাতে সে খুনের দোষ
না হয় যাতে কোন একক গোত্রে মুহাম্মদের গোত্রের রোষ
ঠিক হয় সমস্ত গোত্র থেকে এক জন করে হবে এক দল
মুহাম্মদের খুনে একসাথে প্রয়োগ হবে সবার অস্ত্রবল।
হা রে নরাধম, দুর্বৃত্ত! তোদের চক্রান্ত যত হোক গোপন
আল্লাহর অজ্ঞাত রাখে কিছু, এ জগতে আছে কোনজন?
আল্লাহর ফেরেস্তা জিব্রাইল আসে তাই নবীজির কাছে
নীচের বাণী নিয়ে, যা কোরানের অষ্টম সুরায় লেখ আছে।
"তোমাকে অবরুদ্ধ অথবা খুনের পরিকল্পনা করে অবিশ্বাসীগন,
অথচ জানে না সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী শুধু আল্লাহ - একজন।"
অতপর নবীজিকে জানায় আল্লাহর সেই শ্রেষ্ঠ পরিকল্পনা
মক্কা ত্যাগ করে মদীনায় গমনে হবে ইসলামের নতুন সূচনা।
নবীজি জানায় আলীকে আল্লার দেওয়া সেই নির্দেশ -
সে রবে নবীজির বিছানায় শুয়ে ধরে নবীজির বেশ।
তাকেই নবী ভেবে শত্রুরা একসাথে করবে আক্রমন
সবার অলক্ষ্যে তখন শুরু হবে নবীজির মদীনা-গমন।
কে আছে ধরায় অকাতরে অন্য কারো তরে দিতে প্রাণ,
আল্লাহর দরবারে জ্ঞাপন করে হৃদয়ের অকৃপণ শুকরান?
জগত জানুক তবে, আলী ভেবেছিল এ তার এমনই সম্মান
পড়েছিল দুই রাকাত জগতের প্রথম নামাজই-শুকরান।
আলী যখন শুয়ে ছিল নবীজির বেশে নবীজির ঘরে
শত্রুরা উঁকি দিয়ে দেখে মুহাম্মদ শায়িত ভেতরে।
অতপর ব্যস্ত হয় নিজেদের ভেতর বিভিন্ন শলায়
ভোরে মুহাম্মদ বের হলেই শেষ আক্রমনের আশায়।
ঘর থেকে বের হয়ে নবীজি এক মুঠো ধুলো নেয় হাতে
সুরা ইয়াসিনের প্রথম আট আয়াত পড়ে ফুঁ দেয় তাতে।
অতপর ছুড়ে মারে তা গল্পে মগ্ন শত্রুদের উপর
স্বশরীরে হেঁটে গেল নবী, দেখলো না কারোর নজর।
স্বর্গে তখন মহান আল্লাহ খেলে এক মজার খেলা
ফেরেস্তা জিব্রাইল ও মিকাইলকে ডাকে সেই বেলা।
বলে, ভাতৃপ্রতীম ফেরেস্তা আমার তোমরা দুইজন
কে আছো প্রস্তুত অন্যের তরে দিতে নিজের জীবন?
দুজনেই রয় নিরুত্তর। আল্লাহ বলে, পৃথিবীর বুকে
চেয়ে দেখো শুয়ে আছে আলী সাগ্রহে সহাস্য মুখে
নিশ্চিত নিজপ্রাণ যাবে জেনেও মুহাম্মদের তরে
তাঁর প্রাণ রক্ষায় যাও দুজনেই মুহাম্মদের ঘরে।
জিব্রাইল ও মিকাইল নামে স্বর্গ থেকে মুহাম্মদের ঘরে
একজন দাঁড়ায় আলীর পাদদেশে, অন্যজন তার শিয়রে।
জিব্রাইল বলে, আবু তালিবের পুত্র আলী, তোমাকে সালাম,
গর্বে মহান আল্লাহ নেয় ফেরেস্তাদের সামনে তোমার নাম।
আবু বকর সাথে, অন্ধকারে মুহাম্মদ হাঁটে মদীনার পথে
আলীর মঙ্গল নিশ্চয়তা আসে তাঁর কাছে মহান আল্লাহ হতে -
নিজের জীবন বেঁচেছে যেজন শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টিতে
সে দাসের মঙ্গল রয় মহান আল্লাহর করুণার মুষ্টিতে।
মক্কা থেকে পাঁচ মাইল দূরে, থর নামের এক পাহাড়ে
মুহাম্মদ ও আবুবকর আশ্রয় নেয় সে রাত্রির আঁধারে।
তখনই সে গুহার ছোট্ট মুখে মাকড়সা বুনে ফেলে জাল,
বাসা বেঁধে ডিম পেড়ে দুইটি কবুতর হয়ে গেল বহাল।
সেদিন ভোরে শত্রুরা একযোগে ঢোকে মুহাম্মদের ঘরে
দেখে আলী শুয়ে আছে মুহাম্মদের বিছানার উপরে।
মুহাম্মদ কোথায়? প্রশ্ন করে আলীকে হতভম্ব সকলে
আলী বলে, জানি না, মুহাম্মদ কোথায় গিয়েছে চলে।
মুহাম্মদ ও আবু বকর পলাতক - সকলেই বোঝে
চতুর্দিক ছোটে সবে দলে দলে দুজনের খোঁজে।
সবশেষে এসে গেল থর পর্বতের সে গুহার মুখে
এই শেষ - কেঁদে ওঠে আবু বকর ভয় নিয়ে বুকে।
ভয় নয়, দুঃখ নয়, আল্লাহ আছে আমাদের সাথে,
ভেবো না আমরা দুজন, সপে দাও নিজেকে তাঁরই হাতে -
এই বলে মুহাম্মদ দেয় বন্ধু আবু বকরকে সান্ত্বনা
আল্লাহর পরিকল্পনা হয়তো তখনও তাঁরা জানতো না।
গুহা মুখে শত্রুরা দেখে মাকড়সার জাল, কবুতরের বাসা
ভাবে এখানে মুহাম্মদকে পাওয়ার নেই কোন আশা।
কী এক অদ্ভূত খেলা দেখালো আল্লাহ, সেজন কী করে
বাঁচায় তারে যারে চায়, মৃত্যু এসে দাঁড়ালেও শিয়রে।
আল্লাহর নবী আল্লাহর দরবারে হাত তুলে প্রার্থনা করে
পুরস্কৃত করো আমার প্রাণ রক্ষক মাকড়সা ও কবুতরে।
আমার নিষেধাজ্ঞা রইল আমার উম্মত মুসলমানের উপর
তারা যেন সদয় হয়, না করে হত্যা মাকড়সা ও কবুতর।
সে গুহায় আবু বকর ও মুহাম্মদ তিনদিন লুকায়িত থাকে
ফুহায়রাহ - আবু বকরের মুক্তি দেয়া দাস - খোঁজ খবর রাখে।
তার পশুর পাল নিয়ে যেতো সে চরাতে সেথা সে গুহার কাছে
ভেড়ার দুধ খেয়ে যেন, নবীজি ও আবু বকর দুইজনেই বাঁচে।
আবু বকরের পুত্র আবদুল্লাহ দিয়ে যেতো সমস্ত খবর
যতক্ষণ না তাঁদের ধরার আশা ভুলে যায় শত্রুর অন্তর।
চতুর্থ দিনে আনে দুইখানা উট দুজনের তরে
আল্লাহর নামে মদীনার পথে আবার যাত্রা শুরু করে।
আবু-লাহাব ঘোষিত একশ উটের লোভে সুরাকাহ ছোটে পিছে
তার তীরের ভয়ে আবু বকর উতকন্ঠ - সবকিছু হলো বুঝি মিছে।
আল্লাহর নবী মুহাম্মদ শান্ত কণ্ঠে বলে, করো কেন ভয়
আমাদের সাহায্য ও রক্ষার তরে আল্লাহই কি যথেষ্ঠ নয়?
অতপর আল্লাহর কাছে হাত তুলে নবীজি করে প্রার্থনা -
রক্ষা করো, আমরা তোমার দাস বই কিছুই আর তো না।
মরুর বালু নেয় তখন সুরাকাহর ঘোড়ার পদদ্বয় গিলে
আকুতিতে তার, নবীজির দোয়ায় আবার তার মুক্তি মিলে।
সুরাকাহ বোঝে, সে ছিল সত্য নবীর অলৌকিক ক্ষমতা
বিনিময়ে প্রতীজ্ঞা - তাঁদের সে পথ জানবে না কুরাইশ জনতা।
সুরাকাহর মনে সেদিন যে বিশ্বাসের বীজ হয়েছিল বোনা
আট বছর পর ইসলাম গ্রহণে সেই বৃক্ষে ধরেছিল সোনা।
সমস্ত বাধা শেষে নবীজি ও আবুবকর মদীনাতে পৌঁছায়
ইসলামের নতুন সূর্য ডাকে - হে বরেণ্য এসো মদীনায়।
সে সূর্যের আলো ক্রমে সমস্ত অন্ধকার নিরসন করে
সত্যধর্ম ও তার সুবিচারে এ পৃথিবী ক্রমে ক্রমে ভরে।