আজিকে শুধু বসিয়া রবো
চাহিব পিছু ফিরে
যত না কিছু এসেছি ফেলে
ভৈরব নদী তীরে।
কে বলে আর সেখানে তার
নেই আজ কিছু নেই
তবে কী সবই মিছে এ ছবি
আমার এ মনেতেই?
টলোমলো নীল জলে খিলখিল
দেখি যে আলো হাসে
নিকটে দূরে বেড়ায় যে ঘুরে
ঝাঁকেতে হাঁস ভাসে।
পিছনেই তার কাটিছে সাঁতার
কচি ক’টি হাঁস-ছানা
কে জানে কী যে রেখেছে বেঁধে
তাহাদের মাঝে টানা।
জলেতে স্রোত বাতাসে বেগ
কত না উঠিছে ঢেউ
তবু যে ওরা ভাসিছে দলে
কখনো হারায় কেউ?
ডিঙিতে ভাসে শিকারী জেলে
জলেতে খেলে মাছে
দুটি চোখ খুলে কানা বক তীরে
এক পায়ে বসে আছে।
মাছরাঙা পাখি শূন্যেতে উড়ি
মাছ খোঁজে জলতলে
স্রোতেতে ভাসা শেওলারা হেঁটে
দূরেতে কোথাও চলে।
এপারে মাঠে চাষির লাঙ্গলে
মাটি চষে ফালাফালে
ওপারে গরুর হাম্বা শোনে
এপারে গরুর পালে।
এপারের গাভী হারিয়ে বাছুর
হাম্বা স্বরে যেই ডাকে
ওপারে বাছুর তারে মা ভেবেই
হতবাক চেয়ে থাকে।
এপারের গাঁয়ে কত কী ঘটে
ওপারে তারই যে ছায়া
এপারে দুঃখে কাঁদিলে জীবন
ওপারে কাঁদে যে মায়া।
এপারেতে যেই চৈতের দুপুরে
ছেলে দেয় জলে ঝাঁপ
ওপারের মেয়ে দেখে চেয়ে চেয়ে
দেহ মনে বাড়ে তাপ।
এপারের রাধা কলসি কাঁখে
আসিলেই নদী ঘাটে
ওপারের শ্যাম বাঁশরী হাতে
তখনি যে কূলে হাঁটে।
এপারে যখন সূর্যটা ডোবে
ওপারের লোকে দেখে
ওপারের বর এপারের বধূ
জীবন কাহিনী লেখে।
এপারে যখন ম'জিদে আজান
ওপারে শঙ্খধ্বনি
দুই পারে চলে যুগ থেকে যুগে
জীবনের বন্ধনী।