উত্তপ্ত দাবানলে পোড়ে দক্ষিণ, তুষার বরফে জমাট উত্তর
৩১শে ডিসেম্বর শেষে, মধ্যরাতে আসে নতুন বছর।
প্রমোদে প্রমত্ত জনতার ভিড়ে রঙিন আতস-কণা উর্ধমুখী
অর্বাচীন আমি! তারই মাঝে খুঁজে ফিরি চৈতন্য-দুঃখী।
আর খোঁজে প্রশান্তি নিশীথ শয্যায় বয়ঃভারে ন্যুব্জ দেহ
ঠক ঠক ঠক, সহসা নিকট দরজায় কড়া নাড়ে কেহ।
অদূরেই জাগ্রত স্বজনেরা নিমগ্ন রঙিন কোলাহলে
তবু কেউ নেই সচেতন যে এসে দরজটা খোলে।
উম্মুক্ত দরজায় দেখিনু দাঁড়ানো কয়েকটি মুখ
আবছা অন্ধকারে মনে হয় পরিচিত, তবু কাঁপে বুক।
অধঃনির্মিলিত আঁখি, ইস্পাত-কাঠিন্যে শুষ্ক অবয়ব
সময়ের মধ্যপথে হৃত একদিন আমারই বন্ধু সব।
অপলক স্থির নয়নে ওরা, দৃষ্টি মোর নয়নে রাখি
প্রসারিত হস্তে হেসে একজন উঠে মোর নামটি ডাকি।
কহিলাম, ভিতরে এসো, বাহিরে কেন সময়ের এ সন্ধিক্ষণে
উচিত ছিল তোমাদের রহিতে আজি প্রিয়জনের সনে।
দেখিনু নিথর অবয়বে খেলিছে ক্ষীণ চন্দ্রের আলো
কহিল, ভালো আছি, বাহিরে থাকায় ভালো
যেমন আছে বাহিরে আমার অসংখ্য পূর্বপুরুষেরা
যাদের কোনদিন আর হয় না নিজ গৃহে ফেরা।
এখানে দীর্ঘ সময়, স্বজনবিহীন, ক্ষুধা-তৃষ্ণা-হীন
জেগে থাকি একাকী গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীতের প্রতিদিন।
তবু কখন অজান্তে, অন্ধকারে নিঃশব্দে এসে দাঁড়াই
শূন্য এই হস্তদ্বয় এখানে প্রিয়জনদের দিকে বাড়াই।
দেখিনু শূন্য হস্তদ্বয়, তবু চিনিতে হইলো না ভুল
এখনো জীবন্ত সে হস্তে, ক'দিন আগে দিয়েছি যে ফুল।
ক্ষীণ আলোয় দেখিনু অশ্রুসিক্ত দুটি আঁখি
ধীর, স্থির কণ্ঠে কহিল, দুঃখ নাই যদিও একা থাকি।
শুধু এই বার্তাটি দিও মোর স্ত্রী, পুত্র, কন্যাগনে
তাদের প্রার্থনায় যেন সতত রাখে মোরে স্মরণে।
ধরিতে বক্ষে তারে সম্মুখে বাড়াইলাম হাত
পাখির কূজনে আসিল ধরায় নববর্ষের প্রভাত।