সবাই চলে যায়, তুমিও চলে যাবে একদিন
এ ছিল না আমাদের কারো প্রত্যাশাহীন।
শুধু বুঝিনি তোমার যাওয়াটা এমন হবে
সহজ সরল তোমার জীবনের মতোই মনে রবে।
সে ছিল মায়ের মৃত্যুর পঞ্চম বার্ষিকী
আমরা কী ভুলেছিলাম? তুমি ভোলোনি ঠিকই।
ডেকেছিলে মায়ের এবং তোমার বন্ধুদের কাছে
আমরা তখনও বুঝিনি তোমার মনে কী আছে।
সারাদিন কাটালে অতিথি আপ্যায়নে
আলোর জ্যোতি আর আনন্দ তোমার বদনে।
দিনশেষে বসেছিলে বাঁশের মাচায় বাড়ির সমুখে
গেয়েছিলে নিমাই সন্যাসী, বিষাদ-সিন্ধু মুক্তকণ্ঠে, সুখে।
থমকে দাঁড়িয়েছিল চলন্ত পথিক
দেখেছিলো ভক্তিগানে মগ্ন এক ঋষি নির্ভিক
হৃদয়ে যার নিজ ধর্মে প্রগাঢ় বিশ্বাস
তার নব্বই বছরেও সবল নিঃশ্বাস
গেয়ে যায় অন্য ধর্মের ভক্তির গান
রক্তিম পশ্চিমাকাশ বলে যায় দিবসের অবসান।
সমস্ত গল্পটাই ছিল তো বলা
যেমন ছিল তোমার পিতার জীবনের শেষ রাত চলা।
বুঝেছিলো তোমার কাছের দুই সন্তান, বড়জোর
তোমার জীবনের শেষ রাতটা হবে কী না ভোর।
ভারত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে শব্দ যখন ইথারে
মহাঋষি তখন তুমি হাসিতেছো জীবনের ওপারে।
হতভাগ্য এই সন্তান অবশেষে,
দাঁড়ালাম কবরে তোমার পায়ে এসে
হাত দুটি তুলে বলি প্রভুর দরবারে:
হে প্রভু! তোমার করুণায় যত্ন করো তারে
যেমন করেছিল সে তার এ দুর্বল সন্তানে,
কবরে তার শান্তি দিও যেমন হবে বেহেস্তের বাগানে।
তারপর, পিছু ফিরে ফেলেছিনু পা
হঠাৎ পায়ের নিচের মাটি দিয়েছিলো কাঁচখন্ডের ঘা
নরম মাটির বুকে পায়ের তলায় তীক্ষ্ণ অনুভবে
ভেবেছিনু পদতল নিশ্চয় রক্তাক্ত হবে।
অতঃপর বুঝিনু, আমার পায়ের নিচে
তোমার রক্ষার হাত এসে আমার সে ভয় হলো মিছে।
পায়ের নিচে রক্ত নেই, নেই কোন ক্ষত
ব্যঁথাশেষে ব্যথাহীন পায়ের তালুটি আগেরই মত!
বুঝিনু তোমার হাত যেমন তোমার জীবদ্দশায়
রক্ষার ছাতা হয়েছিল সদা সন্তানের মাথায়
আজ তুমি শুয়ে আছো যে মাটির বুকে
সে মাটিকেও কণ্টকশূন্য নরম করো সন্তানের দুখে।