বছর ঘুরে যখন আসে ফেব্রুয়ারি
চেতনা মোর মানে না আর খবরদারি।
যতই বলি, কি হবে আর বিদ্রোহে
হচ্ছে যা সব, চোখ বুজে তা যা না সহে
সে সব কথায় চেতনা মোর দেয় না কান
সবার সুরে ফেব্রুয়ারির গায় না গান।
যে নেতারা সর্বত্রই বাংলা চায়
সারা বছর তাদের ঘরেই বাংলা নাই।
ফেব্রুয়ারী এলে হঠাৎ বাংলা ভাষায়
বক্তৃতাতে কেঁদে কেটে বুকটা ভাসায়।
ভাষা-শহীদ নামগুলো সব আপন হয়
সারা বছর নামগুলি সব কোথায় রয়?
নিজের স্বার্থে দেশ তুলেছে চিতার মন্ডে
শিক্ষাটাকে ভাগ করেছে বহু খন্ডে।
বিত্তবিহীন বাবা-মায়ের সন্তানেরা
না থাকাতে জীবন যাদের আছে ঘেরা
তারাই যাবে ছন্নছাড়া বিদ্যালয়ে
বাংলা শিখে জীবন যাবে বেকার হয়ে।
নয় তো হবে বড়-সা'বের অফিস-চাকর
পারলে দিতে লক্ষ টাকার ঘুষেতে দর।
বাংলা শিখে যায় না পাওয়া উচচ-পদ
যাতে আছে আকাশ-চুম্বি ঘুষ-সম্পদ।
ধনী, নেতা, যারা রচেন ভাগ্য-বিধান
অনেক ভেবে তারা করেন সু-সমাধানঃ
আর্মি-ক্যাডেট কলেজগুলো তাই আলাদা
যায় না সেথায় বাংলা শেখা গরু গাধা।
প্রয়োজনে আরও অনেক ইংলিশ স্কুল
হালখাতা নয়, শিখায় ওরা এপ্রিল-ফুল।
ওখান থেকে সহজে দেয় বিদেশ পাড়ি
ইংরেজিতে পন্ডিত হয়েই ফেরে বাড়ি।
ফিরে এসে গরিব দেশের ধরে যে হাল
ধন্য যে হয় বাংলাদেশে বাংলা শেখা গরুর পাল।
তাতেও তাদের না মেটে সাধ, বানায় কোটা
কোটাবিহীন গরিব চাষির মেলে পোটা।
গরিব, মূর্খ, গাঁয়ের চাষি, বস্তির মানুষ
বোঝে ফুল আর শহীদ মিনার মানেই একুশঃ
দলের ব্যানার হাতে নিয়ে কলের গান
কোটি টাকার অপচয়ে ফুলের বান।
গান, স্লোগান, দখলদারির দাপট যার
মৃত, নীরব শহীদগণ যায় দলে তার।
রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বার
দোহাই তোদের, থাকিস না আজ নীরব আর।
কবর ফুঁড়ে আবার তোরা উঠে আয়
বাংলা ভাষায় আবার নতুন স্লোগান গাইঃ
সবার তরে একই শিক্ষার সুযোগ চাই
ক্যাডেট, আর্মি, ইংলিশ স্কুল-কলেজ নাই।
ধনীর সন্তান ধনী হওয়ার কোটা নয়
সবাই সমান, মেধাতে হোক পরিচয়।
গরিব চাষি, বস্তিবাসী, মুটে, মজুর, মূর্খ যারা
সম্পদ, শিক্ষা, চাকুরির কোটা পাক তারা।
বাংলা ভাষা মুক্ত ভাষা, দাসত্বে তার সন্ধি নয়
সত্যি বলা বন্ধ হলে, সেই ভাষাটা বন্দি হয়।
সেই ভাষাটা মুক্ত করতে আবার যদি মরতে হয়
জানুক ওরা সেই যুদ্ধে নেই আমাদের মরতে ভয়।