পৃথিবী প্রতিদিন জটিলতর হচ্ছে। একদিকে যেমন বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, যোগাযোগ ও বিশ্বায়নের ফলে জীবনের মান অনেকাংশেই উন্নত হয়েছে, অপরদিকে আজ আর কোন ঘটনায়ই স্থান বা দেশভিত্তিক নয়, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বেড়েছে, পৃথিবীর মানুষ বেশি জ্ঞাত ও সচেতন, প্রতিবাদের মাধ্যম দ্রুত ও অনেক এবং প্রতিশোধের পদ্ধতি এবং যন্ত্রায়ন সম্পূর্ণ আলাদা। এর সবকিছুর প্রতিফলন আসার কথা চিন্তাশীল জনগোষ্ঠীর - সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিক, চিত্রকর - কাজের মধ্যে।
সমাজের সার্বিক অবস্থা, বৈষম্য, অন্যায়, অবিচার, অবক্ষয় ইত্যাদি নিয়ে যাদের মন খুব সংবেদনশীল তাদের মনন ও মতিষ্কে এই অবিরত ও অফুরন্ত তথ্য ক্রমাগত চাপের সৃষ্টি করে। এ সবের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে কিছু না করতে পারার অসহায়ত্বে হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ ঘটে। সেই অনুভূতি প্রকাশের সঠিক মাধ্যম খোঁজে আর প্রকাশে তীব্র অনুভূতির অভিব্যক্তি ঘটে। যদিও ব্যক্তিগতভাবে আমার সাথে কোন পরিচয় নেই, কবিতার আসরে তেমনই এক ব্যক্তিত্বের সাথে আমার পরিচয় ঘটেছে গত সাত মাস ধরে। আর সেই ব্যক্তিত্ব আসরের প্রিয় কবি রীনা বিশ্বাস (হাসি)।
এই কবির লেখার মূল বিষয় প্রেম/ভালোবাসা। প্রেম, ভালোবাসার আবর্তনে কখনো কবিকে পেয়েছি তার নিজস্ব ব্যক্তিত্বে, কখনো যুগল আলাপচারিতায়, কখনো বিস্তৃত পরিবার, সমাজ এমনকি বিশ্ব পরিমণ্ডলে। কবির বিভিন্ন কবিতায় প্রয়াস দেখি নিঃস্বার্থ প্রেম ও ক্ষমার মাধ্যমে ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনের পরিমণ্ডলে সহাবস্থানের সহজ সমাধান, রাজনীতি, সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মের নামে বিভিন্ন অসার এবং ভয়ংকর কর্মকান্ডে অপচয়ের চেয়ে চারিদিকের অসহায় জীবন্ত মানুষ ও মানুষের সমস্যার প্রতি অধিক গুরুত্ব, ইত্যাদি এসেছে ক্রমাগতভাবে লেখা ২০০ শত কবিতা, গান এবং বাউল গানে মাত্র গত সাত মাসে।
এরকম নিবেদিত মনের মানুষদের একটা মনস্তাত্বিক ঝুঁকি থাকে। চারিদিকের স্বার্থপর সমাজ চলে তার নিজস্ব গতিতে। যখন কাঙ্খিত পরিবর্তনের পূর্বাকাশে আলোর আভার চিহ্নও দেখা যায় না, তখন নিজেকেই এক সময় সেই সমাজে বড় বেমানান মনে হয়। তার মনে হয় সমাজের আর সবাই যদি স্বাভাবিক ও সুস্থ হয়, সমাজের সমস্ত অবক্ষয় দেখেও নির্বিকার জীবন যাপন করতে পারে, আর তা সে যখন পারে না, তখন সেই-ই হয়তো অস্বাভাবিক এবং সমাজের জন্যে বেমানান। এক সময় নিজেকেই পাগল মনে হয়, চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা হয়, হে সমাজ, আমি সত্যিই পাগল। তবে আমাকে পাগল হিসাবেই স্বীকার করে নাও। এতে অন্তত: আমার প্রতিবাদ আমার যথেচ্ছ কথা ও কাজে প্রকাশ করার সুযোগ পাবো সমাজের হাজার বাধা নিষেধের বেড়াজালকে তোয়াক্কা না করে। আর তখন তাও যদি সহ্য করতে না পারো, তখন না হয় আমাকে পাঠিয়ে দিও কোন পাগলা গারদে। আমার মনে হয় সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই কবির প্রেম-কোমল সংবেদনশীল মনে এই চিৎকারই শুনি কবির লেখা "পাগলা গারদে জায়গা দাও” কবিতাটিতে।
এই কবির অন্যান্য পরিচয় হলো একজন সংগীত শিল্পী, একজন উপন্যাসিক, একজন গল্পকার এবং একজন সংসারী, সুগৃহিনী| এমন এক ব্যক্তিত্ব কবিতার আসরে জ্বল জ্বল হয়ে জ্বলুক বহুদিন এবং বহু শত, হাজার কবিতা লিখে আসরকে সমৃদ্ধ করুক সেই কামনা রইল।