যুদ্ধে ধ্বংস তৃতীয় বিশ্বের একখানি দেশ হতে
ফজল এসেছে পশ্চিমা দেশে ভাগ্যের কোনমতে।
চোখে ভাসে তার শত ক্ষুধার্ত কত অসহায় মুখ
কিছু সেই মুখে খাদ্য জুটাতে তাই সদা উন্মুখ।
সারাদিনমান হয়রান হয় যে কোন কাজের খোঁজে
বর্ণ-ভাষায় চাকুরী দাতারা কতটুকু তাকে বোঝে?
অবশেষে তার কর্ম মেলে গ্রোসারী-খাদ্য দোকানে
হেন কাজ নাই করে নাকো হায় ফজলের শ্রম ওখানে।
বিরাট দোকান, যেন ফজলের ভিটে-বাড়ীর দশগুন
কত না খাদ্যে শেলফ ভরা থাকে - জুস, চিনি আরো নুন।
শেলফে সাজায় খাদ্য-বাকসো, যতনে বুকেতে টানে
খাবারে শ্রদ্ধা মায়ের শিক্ষা পদে পদে তাই মানে।
বেদনায় দেখে সহকর্মীরা যত শ্বেতাঙ্গ জাতি
খাদ্য-বাকসো সরাচ্ছে সদা পা দিয়েই মেরে লাথি।
বড় ব্যথা পায় ভাবে মনে তাই, কেমন এ খোদার বিচার
যে জাতি মারে লাথি এ খাবারে তাদেরই অঢেল খাবার?
শিখেছে খাদ্য মাটিতে পড়িলে তাও খুঁটে খেতে হয়
তাই তো এখানে ব্যথা দেয় প্রাণে খাবারের অপচয়।
সেদিনের মত দোকানে বেচা সবে যেই হ'লো শেষ
ফজল পেলো কর্মকর্তার শেষ কাজে নির্দেশ।
মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্য যত ভরিয়া বিরাট ট্রলীতে
ফেলিতে হইবে রাবিশবিনে দোকানের পাশ-গলিতে।
ব্রেড, জুস, জ্যাম, মুরগী ও ডিম ফজল ট্রলীতে ফেলে
এগোয় আর ভাবে, দেশে ক'জনের এমন খাদ্য মেলে?
পায়ে পায়ে সে এগিয়ে এলো রাবিশবিনের কাছে
দেখিল অদূরে বৃদ্ধ-মাতা ছেলে সাথে চেয়ে আছে।
ফজল বুঝিল উন্নত দেশে উন্নত এক ফাঁকি
মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্য ফেলে কত অভুক্ত রাখি'।
একটি ব্যাগে খাদ্য কিছু ভরিয়া সে ট্রলী হতে
বৃদ্ধ-মাতাকে দেওয়ার তরে পদদ্বয় ফেলে পথে।
সহসা তাহার কাধের উপর টানিয়া ধরিল কিছু
কর্মকর্তা ধরিয়াছে তারে, দেখিল চাহিয়া পিছু।
চোখেতে তাহার তিরস্কার আর কণ্ঠেতে হুংকার
ব্যাবসা কেমনে বজায় রাখিবে এমনিই দিলে খাবার?
একটু থামিয়া ভাবিয়া ফজল ইউনিফর্মটি খুলি'
অতি যত্নে কর্মকর্তার হাতে সে দিল তা তুলি'।
কহিল, তবে এইখানে হোক এমন চাকুরী শেষ
ফেলিব খাদ্য, ক্ষুধিতে দেবো না, হায় রে এ কোন্ দেশ?
মায়ে যে আমায় কখনো শেখায়নি এমন ব্যবসা-নীতি
ক্ষুধিত মানুষে খাদ্য দেবো না দেখায়ে মানুষ-প্রীতি।
একখানি ডিম, একখানি রুটি করিয়া পাঁচটি কণা
খাইয়াছি সুখে আমার মায়ের পরিবারে পাঁচজনা।
একটি কণা মাটিতে পড়িলে খাইয়াছি তাহা তুলি'
ফেলিব খাদ্য ক্ষুধিতে হেলিয়া কেমনে সে কথা ভুলি'?
এইক্ষণ থেকে তাই আমি এই চাকুরী করিনু ত্যাগ
ক্ষুধায় মরিব? আল্লাহর হাতে সপিনু সে উদ্বেগ!