চাচা আবু তালিবের ঘরে রাখাল-নবী হয় বড়
জীবিকা অর্জনের চিন্তা ক্রমে তাঁর মনে হয় জড়ো।
জীবনের বিশ বছর পার করে হয়েছে সে যুবক
বিবাহিত নিজের সংসার পেতে মনে জাগে সখ।
বিয়ের প্রস্তাব আসে যা কিছু, বৃথা হয়ে যায়
মোহাম্মদ বোঝে, চায় তাঁর নিজস্ব আয়।
ইচ্ছা তাঁর প্রবল - ব্যবসা করে আশ-শামে যেয়ে
চাচার অমত, ভ্রাতুস্পুত্রের নিরাপত্তার ভয় পেয়ে।
নিজস্ব ব্যবসার তরে ছিল না তাঁর মূলধন ভুরি
ক্রেতা ও বিক্রেতার মাঝে তাই করে সে দস্তুরি।
সৎ-বিশ্বাসী আবু সাইব ব্যবসায় হয় অংশীদার
এইভাবে শুরু হয় নিজেদের যৌথ কারবার।
খাদিজা বিন্ত খুয়াইলিদ বিধবা এক ব্যবসায়ী নারী
অত্যন্ত ধনী - ব্যবসায় অনেক লোক খাটে তাঁরই।
লোকমুখে সুখ্যাতি শোনে মুহাম্মদের - বিশ্বাসী-স্বভাব
ব্যবসায় পেতে তাঁরে দেয় দ্বিগুণ দস্তুরির প্রস্তাব।
মুহাম্মদের যাত্রা হয় আশ-শামে খাদিজার ব্যবসায়
মাইসারাহ নামে এক দেহরক্ষী ও যাত্রা-সাথী পায়।
পথ-মাঝে তপ্ত মরুর বুকে যখন যাত্রাটা থামে
একখন্ড মেঘ দেয় ছায়া যেথা মুহাম্মদ বসে বিশ্রামে।
আশ-শামের ব্যবসায় আশাতীত লাভ হলো সেবার
ফেরার পথে মাইসারাহ দেখে এক আজব ব্যাপার -
তপ্ত মরুর পথে সূর্য দেয় যখন অগ্নিবর্ষী রোদ
মুহাম্মদের মাথার উপর একখন্ড মেঘ করে রোধ।
খাদিজা নয় শুধু খুশিই আশাতীত ব্যবসার লাভে
বিস্মিতও মুহাম্মদের দেওয়া খুটিনাটি হিসাবে।
মাইসারাহর কাছে জানে পথ-মাঝের আজব ঘটনা
আর জানে মুহাম্মদ উত্তম চরিত্রের মানুষ একজনা।
ক্রমশঃ মুহাম্মদ পায় অতিরিক্ত ব্যবসার ভার
সবখানে রাখে দক্ষতা ও সাফল্যের স্বাক্ষর তাঁর।
এমন পুরুষের প্রেমে খাদিজার মন ওঠে মেতে
বিবাহ-বন্ধনের মাঝে চায় তাঁরে আজীবন পেতে।
খাদিজা জানায় তা চাচাতো ভাই ওয়ারাকার কাছে
উত্সাহে তার, খাদিজা বন্ধু নাফিসার সাহায্য যাচে।
নাফিসা শুধায় মুহাম্মদকে, খাদিজা কেমন নারী
কেমন হবে যদি হয় সে তাঁর জীবনের অংশীদারী?
খাদিজার প্রশংসায় মুহাম্মদ হলে পঞ্চমুখ
নেওয়া হয় চাচা আবু তালিবের সম্মতি-টুক।
অতপর মুহাম্মদ হাত রাখে শ্রেষ্ঠ নারীর হাতে
যে ছিল নবুওতের কষ্টকর সময়ে বন্ধু হয়ে সাথে।
কেয়ামতে নারীর সর্দার, নবী-কন্যা ফাতিমার মাতা
খাদিজার তরে সব মুসলিম-হৃদে মাতৃ-আসন পাতা।
প্রথম মুসলিম নারী, সুখে-দুখে সর্বদাই নবীজির প্রিয়
মরণের পরেও ছিল সে নবীজির আত্মার আত্মীয়।
ব্যবসায় লাভ হয়, ক্রমশই বেড়ে চলে অর্থ-সম্পদ
কে পেয়েছে ব্যবসায় তা, যা পেয়েছে নবী-মুহাম্মদ!
এ বিশ্বে যে দেবে দুজাহানে মুক্তির ঐশী-পয়গাম
জীবনে এ শেষ্ঠ সাথীর চেয়ে দুনিয়ার সব লাভই কম।