সকালের কাজ শেষে রোজ বধূবালা
হরেক খাবার দিয়ে সাজায় এক থালা
সযতনে নিয়ে যায় খাঁচাটির কাছে
যেথা তার প্রাণপ্রিয় ময়নাটি আছে।
সযতনে খুলে বধূ খাঁচাটির দ্বার
বেলা হলো বাছাটির হয়নি আহার
মধু কন্ঠে বধূ বলে, "আয় বাছা খা"
অতি কাছে লেবু গাছে কাক ডাকে "কা"।
অরুচিতে ময়নাটি রোজ প্রাতঃবেলা
ছড়ায়ে থালার খাবার করে শুধু খেলা।
খাও সোনা, খাও সোনা, মিনতি যখন
শেষ ক’রে বধূ দেয় অন্য কাজে মন
কাকখানি নেমে আসে খাঁচাটির নীচে
ছুটে চলে প্রতিকণা খাবারের পিছে।
ভীত পায়ে ছুটে আর দ্রুত খুঁটে খায়
খাওয়া শেষে অতি ত্বরা আকাশে মিলায়।
একদিন অন্যমনা বধূ খোলে দ্বার
খাঁচা ছেড়ে যায় উড়ে ময়নাটি তার।
লেবু গাছে কাক ডাকে কা, কা, কা
রাগে দুঃখে বধূ বলে যা, যা, যা।
রাগে বধূ ছুড়ে ফেলে খাবারের থালা
কাক ভাবে মিটাবে সে উদরের জ্বালা।
নেমে আসে গাছ থেকে খায় খুঁটে খুঁটে
বধূর মাথায় হঠাৎ রাগে খুন উঠে
হাতে তুলে পড়ে থাকা পাথরের কণা
ছুড়ে মারে কাকটিকে বধূ আনমনা।
ব্যথাহত কাক কাঁদে কা, কা, কা
রাগে দুঃখে বধূ বলে যা, যা, যা।
কা, কা কান্নায় কাক গেলো উড়ে
ময়নার ব্যথা বধূর হিয়া মন জুড়ে।
সকালের কাজ শেষে পরদিন প্রাতে
খাঁচাটির কাছে বধূ যায় থালা হাতে
শূন্য খাঁচার কাছে চারিদিকে চায়
প্রানের ময়না যদি ফিরে আসে হায়!
ক্ষণ পরে বধূ ভাবে, সে আর কি রে
মুক্ত আকাশ ছেড়ে আসিবে ফিরে?
আজ যদি আসে সেই কুত্সিত কাক
কা, কা, রবে এসে দেয় আজ মোরে ডাক
বলিব না যা, যা, বলিব রে আয়, আয়
হাতে মোর খেয়ে যা, নাইবা এলি খাঁচায়!
আসিল না ময়না, আসিল না কাক
তিনদিন বিষণ্ণ বধূর কাটে নির্বাক।
কাক খানি পরদিন হঠাত এলো উড়ে
হাসি এলো সে বধূর ম্লান মুখ জুড়ে|
খাবার থালাটি রাখে সে মাটির উপর
শিহরণে হিয়া তার কাপে থর থর।
মধু কন্ঠে বধূ ডাকে, "আয় কাক আয়
না জানি পাথর খানা লেগেছে কোথায়।"
গাছ থেকে কাক খানা চাহিল থালায়
নামিবার তরে উড়ে ক্ষুধার জ্বালায়
অর্ধ ভগ্ন ডানা আর ক্ষত তার বুক
মাটিতে আছাড়িয়া করে ধুক ধুক।
চকিতে বধূ তারে কোলে নিল তুলে
যা, যা, বলা ঘৃনা ভরা তিরস্কার ভুলে।
কাকখানি কি পেলো তা বুঝিবার আগে
বধূ বুঝে মরেছে সে তার অনুরাগে।
"হৃদয়ের সব দিয়ে ভালোবেসে যারে
ধরিতে চেয়েছিনু বুকে বারে বারে
না রহিল বুকে সে, দূরে গেছে উড়ে
বেদনার ক্ষত রেখে এ হৃদয় জুড়ে।
প্রতিদিন দিয়েছিনু যারে অবহেলা
সে আসিল বুকে মোর তার শেষ বেলা
আমার দেওয়া সমস্ত ঘৃণা ভালোবেসে
ভালবাসায় কাঁদালো কেন সে আবার এসে?"