# ইসলামের শেষ নবী (Prophet) হযরত মোহাম্মদ (সঃ) জীবনের শেষ হজ্জ পালন করার পর লক্ষাধিক সাহাবীর (সাথী) সম্মুখে তাঁর অনুসারীদের ভবিষ্যত করণীয় সম্পর্কে এক দীর্ঘ ভাষণ দেন। এই ভাষণ ইসলামের ইতিহাসে বিদায় হজ্জের ভাষণ নামে পরিচিত। মূল ভাষণটি ছিল আরবী ভাষায়। বাংলা ভাষায় এর একটি অনুবাদ অনুযায়ী কবিতাটি লেখা আমার প্রয়াস, যতদূর সম্ভব মূল নির্দেশের বাইরে কিছু না বলে।)
-----------------------------------------------------------------------------
নবম জিলহজ্জ, দশম হিজরি, হজ্জ শেষে শুক্রবার দুপুর
লক্ষাধিক সাহাবীতে আরাফাত ময়দান ভরপুর।
শেষ নবী মোহাম্মদ (সঃ) করেন আল্লাহর গুণকীর্তন
অতপর মানবতার জন্যে দেন এক দীর্ঘ সম্ভাষণ।
হে মানুষ! মনোযোগ দিয়ে শোন তোমরা আজ আমার কথা
তোমাদের সনে এই স্থানে আবার হবে দেখা, নেই নিশ্চয়তা।
হে মানুষ শোন! আল্লাহ বলেন, ওহে মানব জাতি
সৃষ্ট তোমরা এক নারী ও এক নর থেকে, যারা ছিল সাথী।
তারপর তোমাদের করেছি বিভক্ত গোত্র ও সমাজে
যেন তোমরা একে অপরের পরিচয় পাও কথা ও কাজে।
নিশ্চিত করে জেনে রেখো সকলেই তাই,
আদোতে মানুষ ও মানুষে কোন ভেদাভেদ নাই।
শ্রেষ্ঠ নয় কারো চেয়ে কেউ - আরব বা অনারব
হোক না কালো, অথবা সাদা - মানুষ সমান সব।
তবে আল্লাহ দেয় তাকেই শ্রেষ্ঠ মর্যাদা ও সম্মান
যে আল্লাহকে ভালোবাসে আর গায় তাঁর গুনগান।
হে মানুষ! আজ থেকে রহিত আঁধার যুগের সমস্ত প্রথা
রক্তের বিনিময়ে রক্তের দাবীতে নেই মানবতা।
হে মানুষ! যে করে অপরাধ, শুধু তারই দায়ভার
পুত্রের অপরাধে পিতা নয় দায়ী, পুত্র নয় তেমনি পিতার।
হে মানুষ! তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্পদ, তোমাদের সম্মান
হোক চির নিরাপদ, যেমন নিরাপদ আজকের দিন আর এই স্থান।
হে মানুষ! রাখিয়ো দূরে ঈর্ষা, হিংসা ও বিদ্বেষ
যা করে তোমাদের চরিত্রের সব গুণ নিঃশেষ।
হে মানুষ! শোন আজ কঠোর এক সতর্কীকরণ
কখনই করবে না নারীদের প্রতি নিঠুর আচরণ।
তাদের উপর যেমন তোমাদের আছে অধিকার
তেমনি তোমাদের উপর তাদের - মূল্য দিও তার।
রইবে সচেষ্ট সদা, করতে তাদের কল্যান
অমঙ্গল তোমাদের, যদি কাঁদে তাদের প্রাণ।
হে মানুষ! চাকর বা অধীনস্থ তোমাদের যারা
তোমাদের মতই জীবন পায় যেন তারা।
যে খাদ্য খাবে নিজে, তারাও যেন তাই খায়
যা পরবে নিজেরা, তাই দেবে তাদের গায়।
শ্রমিকেরা যদি দেয় শ্রম তোমাদের তরে
বাকি যেন না থাকে মজুরি, ঘাম শুকানোর পরে।
হে মানুষ! শুধু তারাই বিশ্বাসী আল্লাহর প্রতি
যাদের হাত ও মুখ করে না অপরের ক্ষতি -
অন্যের সম্মান, প্রাণ ও সম্পদ নিরাপদ থাকে
নিজের পছন্দ যা, অন্যের তরেও তা রাখে।
হে মানুষ! একে অন্যের ভাই সমস্ত বিশ্বাসীগন
তোমাদের হাতে যেন না হয় খুন বিশ্বাসীজন।
আজ থেকে লুপ্ত হলো বংশগত কৌলিন্য প্রথা
তারাই কৌলিন, যাদের সেবা পায় মানবতা।
হে মানুষ! তোমাদের যদি থাকে কোন ঋণ
পরিশোধ করি' তা সত্বর হ'য়ো ঋণহীন।
কেউ যদি রাখে কিছু গচ্ছিত তোমাদের হাতে
ফিরায়ে দিও তা যত্ন ও বিশ্বাসের সাথে।
কেউ না দিলে তোমায় স্বেচ্ছায় তার সম্পত্তি
তোমার ভোগ্য নয় কোনদিন তার এক রত্তি।
অবশ্যই অবৈধ, বাহুবলে সামান্যও ভোগ তার
তোমাদের কেউ যেন না করে দুর্বলে অবিচার।
হে মানুষ! জ্ঞানীর কলমের কালি অতি মূল্যবান
শহীদের পবিত্র রক্তও নয় জেনো তার সমান।
নর ও নারী! তোমরা অবশ্যই করিও জ্ঞান-অর্জন
যেও সুদূর চীনে, যদি হয় সেই প্রয়োজন।
হে মানুষ! তোমরা করিও সদাই প্রভুর উপাসনা
নামাজ, যাকাত, রোজা, হজ্জ - সময়ের আরাধনা।
একত্রে করিও নিজেদের নেতার অনুসরণ
যদি হয় মনোনীত কুশ্রী-কদাকার ব্যক্তিও একজন।
আল্লাহর বিধান যদি হয় তাঁর নির্দেশক
স্বর্গে পাবে স্থান যদি হও তাঁর অনুসারী-সেবক।
হে মানুষ! শুনে রাখো, আসবে না আর কোন নবী
তোমাদের প্রতি আল্লাহর বাণী আজ পূর্ণ হ'লো সবই।
আলোকবর্তিকা - আল্লাহর কোরান ও আমার জীবন
রইবে সত্য পথে, যদি করো এই দুই অনুসরণ।
হে মানুষ! করিও না বাড়াবাড়ি ধর্মের নামে
ধ্বংস হয়েছে অতীতের বহুজাতি ঠিক এই কামে।
হে মানুষ! হিসাব হবে শেষ বিচারে - হও সাবধান
পৌঁছে দিও এই বাণী সকলেরে, পৃথিবীর সর্বস্থান।
অতপর শুধালেন আল্লাহর নবী উপস্থিত জনে
আমি কি পৌঁছিয়েছি আল্লাহর বাণী তোমাদের মনে?
সমস্ত জনতা উত্তর দিল সমস্বরে -
অবশ্যই তুমি পৌঁছিয়েছ তা আমাদের তরে।
অতপর নবীর সম্ভাষণ প্রভুর উদ্যেশে,
হে আল্লাহ! আমি তোমার দাস, সংবাদদাতা বেশে
তোমার অর্পিত দায়িত্ব করেছি পালন,
সকলের সাক্ষ আজ করো প্রভু গ্রহণ।