যে এসেছে ধরণীতে সমস্ত মানবতার মুক্তির তরে
কতদিন বিজয়ের আনন্দ টিকে থাকে তার নিজ ঘরে?
যে দিয়েছে অকল্পনীয় বিজয় তিন বছর বেদনার পরে
গন্তব্যের আগেই তাঁরে কী সে রেখে দেবে সুখে চিরতরে?
সে বিজয়ের মাত্র নয়মাসে যা হারালো নবী মুহাম্মদ
আল্লাহও বলেছে যা ছিল তাঁর তরে দুই শেষ্ঠ সম্পদ;
পিতৃসম চাচা আবুতালিব - সকল দুর্দিনের পালক ও রক্ষক -
আর প্রাণপ্রিয় পত্নী খাদিজা, যাঁর ধন হয়েছিল ইসলামের হক।
ধৈর্যে অটল মুহাম্মদও কেঁদেছিল ফুপিয়ে তাঁদের বিদায়ে
আরবের রীতিতে কালো পোশাক পরেছিল তাঁর নিজ গায়ে।
তাঁর কাছেও অসীম ছিল এ বেদনা নবুয়তের দশ বছর পর
নিজেই তাই আখ্যা দেয় - আমুল হুজন - বেদনার বছর।
মক্কার বুকে হলো মুহাম্মদ তাঁর শক্তির দুই স্তম্ভহারা
মক্কার শত্রুরা এখন করে ইসলাম নির্মূলের পাঁয়তারা।
মুহাম্মদ ভাবে, আল্লাহ করলো তাকে মক্কায় শক্তিহারা
হয়তো মক্কার বাইরে প্রচারে যাওয়া এটাই তাঁর ইশারা।
মক্কার পূর্বে সত্তর মাইল দূরে অবস্থিত তাইফ শহর
নবীজির প্রচার কর্মে সেথা জায়েদ হলো তাঁর সহচর।
তাইফবাসী তখন আল্লাহহীন, মূর্তিপুজায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত
স্রষ্টার স্ত্রী নামে খ্যাত আল-লাত মূর্তি স্বর্ণালংকারে সজ্জিত।
ব্যর্থ হলো সেথা নবীজির আহবান এক আল্লাহর উপাসনায়
তাইফবাসীর পাথরের ঘায়ে নবীজির দেহ রক্তে ভেসে যায়।
অপমান, অত্যাচার, যন্ত্রনায় নবীজি যখন হতাশ-ক্লান্ত-কাতর
আল্লাহর দ্বারে হাত উঠায় শহরের বাইরে এসে একমাস পর।
হে আল্লাহ! আমার এই অভিযোগ রাখি আজ তোমার দরবারে -
এ শক্তিহীনে শুধু অপমান হতেই পাঠিয়েছো মানুষের দ্বারে?
ও পরম করুণাময় তুমি! তুমিই তো নির্যাতিতের একমাত্র প্রভু,
আমারও প্রভু তুমি, আমার ভার অন্য কারেও দিয়েছি কী কভু?
এই কী তোমার ইচ্ছা আমি হই নির্যাতিত অপরের দ্বারা
অথবা আমাকে নিয়ন্ত্রন করুক আমারই ঘোর শত্রু যারা?
সইতে পারি সমস্ত যন্ত্রনা যদি নও অখুশী তুমি আমার 'পরে
তবে তোমার দয়ায় দিতে পারো তুমি এ কর্ম সহনীয় করে।
আমি আশ্রয়প্রার্থী, সাহায্য করো তোমার এ সত ও সত্যের পথে
আর রক্ষা করো তাইফবাসীকে তোমার ক্রোধ ও অভিশাপ হতে।
ক্ষমা করো অক্ষমতা - ভরসা রাখি তোমার খুশী ও ক্ষমতায় -"
অতপর হতাশ, ভগ্ন-হৃদয় নবীজি ফিরে আসে আবার মক্কায়।
নবীজির হৃদয়ে জাগে মক্কাবাসীর চরম লাঞ্ছনার ভয়
মক্কায় ফিরে নবী তাই হীরা পর্বতের গুহায় নেয় আশ্রয়।
মক্কাবাসী ইসলাম সমর্থকদের কাছে জায়েদ একা যায়
অতপর মুহাম্মদও আসে মুতিমের সাহস ও ভরসায়।