হঠাৎ সেদিন কি কারণে জানি না
শুধালো বন্ধু, আমি নওগাঁ'র জলিল কি না।
বললাম, জলিল নই, এ অধম নিশ্চয় খলিল
যদি চাও দেখাতে পারি নামের দলিল।
নওগাঁ'র কাছ থেকে সে অনেক দূর
ছোট এক জেলার নাম, মেহেরপুর।
অবহেলায় পড়ে থাকা সেথা এক গ্রাম
গৌরী রেখেছিল গৌরী নগর নাম।
গোপাল নগর, রাম নগর, মুজিব নগর
আরো কত নগর আছে, নেই শুধু সাগর।
ভৈরব নদী তীরে আম কাঠালের বাগান
যেখানে মানুষেরা গায় অকারণে গান -
জারি, সারি, মারফতি, কিংবদন্তির পালা
আর প্রকৃতি সাজায় নিত্য হাজার ফুলের ডালা।
যেখানে দুকুল ছেপে বর্ষার ভৈরব নদী
খরস্রোতে ঢেউ তুলে বয়ে যেত নিরবধি
যে নদীতে তালের ডিঙ্গি আর নৌকার খেলায়
তীরে যার নতুন বছর আর পূজার মেলায়
খুঁজে পেত কর্মক্লান্ত সহস্র মানুষেরা
জীবনের উত্তেজনা, আর সম্ভাবনাই ঘেরা
আগামী দিনের স্বপ্নের হাতছানি।
কালের অভিশাপে কেন সেথা জানি
পড়ে আছে আজ এক মৃত ভৈরব
উত্তাল ঢেউ আর খরস্রোত আজ অবাস্তব।
তবু সেথা আজও আছে সহস্র ঘর
যার মাঝে হাসে কাঁদে মানব-অন্তর।
যে গাঁয়ের তিন দিকে আছে তিন বিল
ঝোপ ঝাড়ে সদা ডাকে কোয়েল কোকিল।
যেখানে এ ধরার আলো দেখি, করি হাঁটি হাঁটি
যেখানে খেলেছিনু খেলা গায়ে মেখে কাদামাটি
যেখানে বসন্ত, গ্রীষ্ম রাতের পূর্ণ জোছনায়
উঠানে শুয়ে খেজুর পাতার বিছানায়
ফুফু আর দাদীর কোলে নিশ্চিন্তে রেখে মাথা
প্রতি সাঝে শুনেছিনু মালেকা বিবির গাঁথা।
যেখানে নদী, পুকুর, খাল আর বিলে
কাদা পানি মেখে মেখে বন্ধুরা মিলে
ভরেছি খালুই হাজার জাতের মাছে।
যেখানে মাঠগুলো গাঁয়ের খুবই কাছে
যেখানে গরুগুলো ছেড়ে দিয়ে, গরমের দুপুরে
গাছের ছায়ায় শুয়ে কল্পনার নুপুরে
শুনেছি গ্রাম্য বালিকাদের পায়ের আওয়াজ
ওদের মাথায় পরিয়ে কল্পনার তাজ
প্রতদিন বানিয়েছি মনের রাজকুমারী
পরিয়েছি লাল রং জর্জেট শাড়ী
কল্পনায় দেখেছি তাদের চলার ছন্দ
মাটির সোদাই খুঁজেছি তাদের গায়ের গন্ধ।
সেইখানে তিন ভাই দুই বোনের পরিবার
দারিদ্রে ডুবে থাকা ছোট এক সংসার।
ছিলো নাকো প্রাচুর্য, ছিল ভালোবাসা
বাবার এক স্বপ্ন ছিল, আর মায়ের আশা -
বড় ছেলে মানুষ হবে দুঃখ হবে দূর
এই সেই হতভাগা নাম খলিলুর।
মানুষ কি অমানুষ হলাম কে বা রাখে খোঁজ
এমন ঘটনা তো ঘটে প্রতি রোজ।
বুয়েটের জীবনটা ভাগ্যের এক লেখা
আরো ভাগ্যে পেয়েছিলাম শত বন্ধুর দেখা।
বুয়েটের শিক্ষকতায় জীবন সংগ্রামে নামা
বেতনে তার হয়নি তেমন ভাইবোনদের জামা।
সৎপথে উপার্জন চাই, ছিল বাবার আদেশ
কমনওয়েল্থ স্কলারশিপ দেখালো বিদেশ।
বিধাতার করুণায় অভাব হলো দূর
এরই মাঝে হাহাকার কান্নার সুর।
বড় বোন, বাবা, মা, সবার বিদায়
প্রবাসের মাটিতে আহাজারি হায়।
ক’জন বন্ধুরাও শুনেছে ওপারের ডাক
কাল যদি না থাকি আমি, হয়ো না অবাক।
ছড়া কি কবিতা লিখি করো না বিচার
ছন্দে কি অছন্দে লিখি কিবা দাম তার?
তোমাদের কাছে থাকার এ শুধু এক ছলনা
কী আসে যাই জীবনে কি হলো, কি হলো না?
এ শুধু বিকেলে জীবনের গান গাওয়া
তোমাদের পেয়ে হয়ে গেছে সব পাওয়া
শুধু তোমাদের ভালোবাসা এ’জীবনের জমা
তার সাথে এই বুকে শত স্মৃতির সুষমা।
২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
পার্থ, অস্ট্রেলিয়া