দিনে দিনে বিভ্রান্ত, ক্রোদ্ধান্ত মক্কার শাসককুল
করা চাই মুহাম্মদ ও ইসলাম ধরা থেকে নির্মুল।
এক চরমপত্র পায় আবুতালিব - নবীজির চাচা -
ত্যাগ করো মুহাম্মদকে, যদি চাও নিজের বাঁচা।
অসহায় চাচার সকরুণ আকুতি ঝরে ভাতিজার কাছে
জানি না এ বৃদ্ধ বয়সে ভাগ্যে আর কত নিগ্রহ আছে?
হে বত্স! করো না আমার এ কাঁধ অসহনীয় ভারাক্রান্ত,
তোমার আল্লাহর বাণীর প্রচারে দাও এখানেই ক্ষান্ত।
শোকাহত ভাতিজা জানায় আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসে
আমার জীবনে ও কর্মে যেন এমন দুর্দিন না আসে।
ওঃ চাচা! দিক ওরা আমার ডান হাতে সূর্য, বাম হাতে চাঁদ
আমার মুখে আল্লাহর সত্যের এ প্রচার হবে নাকো বাদ।
যতক্ষণ না স্রষ্টা করে তাঁর সত্য প্রতিষ্ঠিত এ পৃথিবীতে
অথবা সিদ্ধান্ত নেয় আমার এ জীবন কবুল করে নিতে
ততক্ষণ পৃথিবীতে আমার উপর অর্পিত একটাই কর্ম
অক্ষান্ত, অক্লান্ত প্রচার করে যাওয়া তাঁরই সত্য ধর্ম।
অতপর দৃপ্ত কণ্ঠে আবুতালিব বলে, হে আমার সন্তান!
তোমার কর্তব্যে অটল রও, যতক্ষণ এই দেহে আছে প্রাণ
আসুক যত কুরাইশ আমি একাই যাবো সবাইকে রুখি
তোমার উপর অর্পিত বাণী নির্ভয়ে প্রচারে তুমি হও সুখী।
ব্যর্থ, বিভ্রান্ত, মূর্তি উপাসক কুরাইশ শাসক বংশ
সিদ্ধান্ত নেয় হাশিম ও মুত্তালিব গোত্র করে দিতে ধ্বংস।
মুহাম্মদ ও অনুসারী ধ্বংস হবে বহিস্কৃত সে গোত্রের সাথে
অন্যান্য গোত্রের চুক্তি ও নেতৃত্ব রয় আবু সুফিয়ানের হাতে।
নির্যাতন সয়ে সয়ে এসেছে ইসলাম প্রচারের সপ্তম বছর
এবার অন্যান্য সমস্ত গোত্র বর্জন-চুক্তিতে দিল সাক্ষরঃ
মুহাম্মদের গোত্রের সাথে অন্যান্য গোত্রের বিবাহ নিষিদ্ধ,
কোন রকম লেন দেন ব্যবসা-বানিজ্য সম্পূর্ণ অসিদ্ধ।
যোগাযোগ, খাদ্য, পানীয় সরবরাহ নিষিদ্ধ - যতই যাচে -
যতক্ষণ না মুহাম্মদ হয় হস্তান্তরিত কোরাইশদের কাছে।
এমনিভাবে বাধ্য হয়ে মুহাম্মদ এলে তাদের হাতে
বর্জন শেষ হবে মুহাম্মদ অথবা ইসলামের মৃত্যুর সাথে।
নিরুপায় গোত্রদ্বয় আশ্রয় নেয় হাজুন পর্বতের উপত্যকায়
চল্লিশ জন বয়স্ক পুরুষ-নারী ও শিশু তিন বছর কাটায়।
চরম অপমান, বঞ্চনা, অনাহার হয় তাদের জীবনের সাথী
অভুক্ত অথবা গাছের পাতা খেয়ে কেটে গেছে কত দিনরাতি।
সহৃদয় কোন আত্মীয় গোপনে দিলে তাদের কোন খাবার
নেমে আসতো তার উপর নিষ্ঠুর গঞ্জনা, অপমান, অত্যাচার।
মৃত প্রায় অনাহারী শিশুদের করুণ কান্না এলে তাদের কানে
মত্ত হতো তারা নিষ্ঠুর উল্লাস, মদ্য পান, আনন্দ-গানে।
তিন বছর পর একদিন নবীজি বলে তাঁর চাচাকে,
পরম করুণাময় আল্লাহ আজ জানিয়েছে আমাকে
আল্লাহর নাম ছাড়া, যত কিছু লেখা ছিল বর্জন-দলিলে
সব তার হয়ে গেছে নিশ্চিহ্ন, পোকারা খেয়েছে গিলে।
আবুতালিব কৌতুহলে পায়ে পায়ে হেঁটে যায় কাবা ঘরে
দেখে কারা যেন বিতর্কে রত বসে তার মেঝে 'পরে।
বুঝে নেয়, একদল চায় সে বর্জন হোক অবিলম্বে বাতিল
ক্ষুধার্ত নর-নারী, শিশুদের কান্নায় কেঁদেছে তাদের দিল।
আবু জহল ও তার সমর্থক, যারা চায় বর্জন থাক বহাল,
ভাবে এসেছে আবুতালিব পরাস্ত; অপারগ দিতে সামাল
বর্জনের কষ্ট; হয়তো তাই অবশেষে করেছে স্থির মন
ভাতিজা মুহাম্মদকে তাদের হাতে আজ করতে সমর্পণ।
দণ্ডায়মান আবুতালিব সকলের উদ্দেশ্যে জানায়
আমার পুত্র মুহাম্মদ একটা খবর দিয়েছে আমায়ঃ
তোমাদের চুক্তি-নামার সব শর্ত খেয়েছে পোকায়,
একমাত্র আল্লাহর নাম ছাড়া - আর থেকো না ধোকায়।
আনো সেই চুক্তিনামা, দেখো তা আজ সকলেই খুলে
যদি মুহাম্মদ সত্যি, তবে মেনে নাও তোমাদেরই ভুলে
নির্দোষ নারী-পুরুষ, শিশু আজ অমানবিক মৃত্যু জ্বালা সয়;
আর যদি মিথ্যা এ খবর, তবে মুহাম্মদের কিছুই সত্যি নয়।
চুক্তিনামা আনা হলো, সকলের সামনে হলো খোলা
যা দেখে সকলে চোখে, যাই কী তা কোনদিন ভোলা?
সকলেই হতবাক, সমস্ত শর্তই খেয়েছে পোকায়
শুধু আল্লাহর নাম আছে লেখা অক্ষত এক জায়গায়।
গর্জে ওঠে সবে, যারা ছিল বর্জন-বাতিলের সমর্থক
পরাজতি হলো আবু লাহাব, আর প্রতিষ্ঠিত হলো হক।
যে মহা-সত্যের আধার পাঠিয়েছে তাঁর সংবাদ দাতা
হয়তো পরীক্ষা শেষে এমনিভাবেই হলো নিজেই তাঁর ত্রাতা।